শুক্রবার, ১৩ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

ইতিহাস খ্যাত মুসলিম কবি

মুসলিম সাহিত্যিকরা তাদের সাহিত্যজ্ঞান দিয়ে শতাব্দীকাল ধরে পাঠকের মনের পুষ্টির জোগান দিয়েছেন। জ্ঞানের আলো ও পাঠের আনন্দ তাদের সাহিত্য সৃষ্টিকে করেছে কালজয়ী। মুসলিম সাহিত্যের বড় অংশই আলোচনা করেছে স্রষ্টা প্রেমের অনবদ্য আকুল আবেদন। স্রষ্টাপ্রেমের পাশাপাশি মানবপ্রেমের নানা দিক উঠে এসেছে তাদের লেখনীতে। কবিতা ছাড়াও দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস এবং ভ্রমণও ছিল তাদের সাহিত্যের বিষয়বস্তু।  এমন কবিদের নিয়ে আজকের রকমারি। লিখেছেন- আবদুল কাদের

 

জালালুদ্দিন রুমি

জালালুদ্দিন রুমিকে একজন কবি, দার্শনিক, ধর্মবেত্তা ও আধ্যাত্মিক গুরু মনে করা হয়। ধর্মে-কর্মে তিনি ছিলেন তৎকালীন মুসলমানদের আদর্শ। তিনি সর্বাধিক পরিচিত  মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি (রহ.) নামে। ১৩ শতকের বিখ্যাত কবি ছিলেন রুমি। তাঁর লেখা ‘মসনবী’ বহুল পঠিত বই। তাঁর জন্ম ও জীবন নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। তিনি ইরানি, না তুর্কি তা নিয়েই বিতর্ক ও বিরোধ রয়েছে এ দুই দেশের মধ্যে। তিনি ১২০৫ সালের (মতান্তরে ১২০৭) ২৯ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বালখে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম মুহাম্মদ। মাওলানা রুমি পিতৃকুল থেকে ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.)-এর নবম বংশধর এবং মাতৃকুল থেকে ছিলেন ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলী (রা.)-এর বংশধর। আল্লামা রুমি ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক সাধক। তাঁর কবিতায় আধ্যাত্মিকতার প্রভাব প্রবল। তার ‘মসনবী’ কাব্যে কল্পনা, বাস্তবতা, প্রেম, আধ্যাত্মিকতা, শিক্ষা, রহস্য, রূপকথা ও উপদেশসহ নানা ধরনের আয়োজন প্রায় ৮০০ বছর পরও তাঁকে অত্যুজ্জ্বল করে রেখেছে বিশ্বসাহিত্যে। সারা বিশ্বে তিনি মরমি কবি হিসেবেই পরিচিত। প্রধানত তিনি ফারসি ভাষায় সাহিত্যচর্চা করলেও অনেক স্তবক তুর্কি, আরবি ও গ্রিক ভাষায় রচনা করেছেন। মসনবীর চেয়েও তাঁর বড় কাজ ‘দেওয়ানে কবির’। এতে ৩৫ হাজার ফারসি দ্বিপদী, দুই হাজার ফারসি শ্লোক, ৯০টি আরবি গজল, ১৯টি আরবি শ্লোক, ২৪টি তুর্কি দ্বিপদী এবং ১৪টি গ্রিক দ্বিপদী রয়েছে। আজও রুমির কবিতার নতুন নতুন অনুবাদ আসছে দুনিয়াজুড়ে। মৃত্যুর প্রায় হাজার বছর পর আজও জনপ্রিয় ফারসি ভাষার এ বিখ্যাত কবি।

 

ইবনে বতুতা

ইতিহাসের বিখ্যাত কজন পর্যটকের মধ্যে ইবনে বতুতা অন্যতম।  তাঁর মূল নাম শেখ আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ। তিনি একাধারে একজন পর্যটক, বিচারক, চিন্তাবিদ, সুন্নি ইসলামের মালেকী মাজহাবের অনুসারী একজন ধর্মতাত্ত্বিক। তিনি ১৩০৪ সালে মরক্কোর তানজিয়ারে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন কাজি। ইবনে বতুতা সারাজীবন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে  বেড়িয়েছেন। ২১ বছর বয়স থেকে শুরু করে জীবনের পরবর্তী ৩০ বছরে তিনি প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মাইল পথ পরিভ্রমণ করেন। তিনিই একমাত্র পর্যটক, যিনি তাঁর সময়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ভ্রমণ করেন এবং সেসব দেশের সুলতানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দীর্ঘ (৪০টি দেশ) পথ ভ্রমণের পর ইবনে বতুতা যখন তার নিজ দেশ মরক্কোয় ফিরে আসেন তখন মরক্কোর সুলতান আবু ইনান ফারিস ইবনে বতুতার ভ্রমণ কাহিনি লিপিবদ্ধ করার জন্য তাকে তাগাদা দেন। ভ্রমণ কাহিনি লিপিবদ্ধ করার জন্য একজন সচিবও নিয়োগ করেন। এ ভ্রমণ কাহিনির নাম ‘রিহলা’। এটি ছিল ১৪ শতকের আগে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক দলিল। ১৩৬৮ সালে মরক্কোর মারকেশে ইন্তেকাল করেন এ বিখ্যাত পরিব্রাজক।

 

শেখ সাদি

ইরানের প্রধানতম কবি শেখ সাদি (রহ.)। তাঁর পুরো নাম আবু মুহাম্মদ মুসলিহ আল-দিন বিন আবদেল্লা শিরাজি। প্রকৃত নাম শরফুদ্দিন ও ডাকনাম মুসলিহ উদ্দিন। যদিও বিখ্যাত এ কবি, দার্শনিক আসল নামে নয়, বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে আছেন উপাধি ‘সাদি’ নিয়ে। তিনি শুধু একজন কবি নন, মানবতাবাদী সমাজ চিন্তাবিদও। ইরানের শিরাজ শহরে শেখ সাদি জন্মগ্রহণ করেন। শিরাজ ছিল এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভূমি। এখানেই মনোরম সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেন শেখ সাদি তাঁর কাব্য প্রতিভার গুণে। তাঁর জীবন শুরু হয় বেদনাসিক্ত অনুভবে। যখন শেখ সাদির বাবার মৃত্যু হয় তখন তিনি নিতান্তই শিশু। এ ছাড়া পরিবারে ছিল নিদারুণ অভাব। এ অভাব তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। কৈশোরেই তাঁর স্বভাবজাত জ্ঞানের দ্যুতির দেখা মেলে। শিক্ষা গ্রহণের আকুলতাকে তিনি এড়িয়ে যাননি। তরুণ বয়সে কবি চলে আসেন বাগদাদ শহরে। বাগদাদ তখন সাহিত্য আর সাহিত্যিকদের চারণভূমি। বিখ্যাত ‘আল নিজামিয়া’ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান। সময়টা ১১৯৫ থেকে ১২২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এ সময় তিনি উচ্চশিক্ষা নেন শারিয়া, আলকেমি, গভর্নমেন্ট, হিস্টোরি, অ্যারাবিক লিটারেচার অ্যান্ড থিওলজি বিষয়ে। তাঁর জ্ঞানের পরিধি কতদূর বিস্তৃত তা দেখলেই বোঝা যায়। এরই মধ্যে এলো যুদ্ধ। দুর্ধর্ষ মঙ্গোলরা মধ্য এশিয়ার খোওয়াইজম নগর ও পারস্য আক্রমণ করেছে। জন্মভূমিতে আর ফিরতে পারেননি শেখ সাদি। বাগদাদ ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে দেশে দেশে ঘুরে বেড়ালেন। এ সময় তিনি রচনা করেন সেরা কাজ বোস্তান।

 

মহাকবি ফেরদৌসী

বিখ্যাত ফারসি মহাকাব্য শাহনামার রচয়িতা মহাকবি ফেরদৌসী। তাঁর পুরো নাম হাকিম আবুল কাসেম ফেরদৌসী তুসি। ফেরদৌসীর জন্ম ৯৪০ সালে উত্তর-পূর্ব ইরানের তুস শহরের নিকটবর্তী পাজ গ্রামে। ধারণা করা হয়, ‘শাহনামা’র আগেও ফেরদৌসী কিছু কবিতা লিখেছিলেন। কিন্তু সেগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি বাল্য বয়স থেকেই কবিতা লিখতে ভালোবাসতেন। অল্প বয়েসে তিনি বিয়ে করেন। যৌবনে তিনি একান্তভাবে কবিতা চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন এবং রাজকীয় উদ্যানের পার্শ্ববর্তী ছোট্ট নদীর তীরে বসে কাব্য লিখতেন। তার মাত্র একটি কন্যা সন্ত্রান ছিল। মহাকবি ফেরদৌসীর লেখালেখির শুরুটা হয়েছিল ফেরদৌসী সামানাইড সাম্রাজ্যের রানির জন্য। এ সাম্রাজ্যের পতনের পর ফেরদৌসী গজনবী সাম্রাজ্যের সুলতান মাহমুদ গজনবীকে তাঁর লেখা উৎসর্গ করেন। গজনবীর সুলতান মুহাম্মদ তাকে এ উপাধি দিয়েছিলেন। সেই থেকেই তিনি ফেসদৌসী নামে খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্ব খ্যাত কাব্য ‘শাহনামা’ লেখার কাজ শুরু করেন ৯৭৭ সালের দিকে। ৩৩ বছর তিনি এতে ইরানের বিভিন্ন শাসক ও শাহ’র কাহিনি তুলে ধরেন। প্রাচীন ইরানের ইতিহাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি ওঠে এসেছে এ মহাকাব্যে। পারসিক শাসক সুলতান মাহমুদ ফেরদৌসীকে ‘শাহনামা’ লেখার দায়িত্ব দেন। তিনি কবির কাছে অঙ্গীকার করেন মহাকাব্যে যত শব্দ থাকবে প্রতিটির বিনিময়ে একটি করে স্বর্ণমুদ্রা দেওয়া হবে। ফেরদৌসী ৬০ হাজার শব্দে মহাকাব্য লেখার কাজ শেষ করেন। কিন্তু সম্রাট তাঁর প্রিয়ভাজন মন্ত্রীর পরামর্শে কবিকে ৬০ হাজার রৌপ্যমুদ্রা পাঠিয়ে দেন। কিন্তু কবির রৌপ্যমুদ্রা গ্রহণ করার আগে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর কন্যাও ওই স্বর্ণমুদ্রা গ্রহণ করেননি।

 

ওমর খৈয়াম

ফার্সি সাহিত্য তো বটেই, বিশ্ব সাহিত্যেও এক অনন্য বিস্ময়কর প্রতিভা ছিলেন পারস্যের কিংবদন্তি কবি ওমর খৈয়াম। তার পুরো নাম আবুল ফাতাহ ওমর ইবনে খৈয়াম নিশাপুরি। তিনি ছিলেন একাধারে একজন দার্শনিক, গণিতজ্ঞ এবং জ্যোতির্বিদ। তার জন্ম হিজরি পঞ্চম শতকের শেষদিকে সেলজুক যুগে। খ্রিস্টীয় দিনপঞ্জিকা অনুযায়ী ১০৪৮ সালে। তিনি ছিলেন মালিক শাহ সেলজুকের সমসাময়িক। বিখ্যাত দার্শনিক মুহাম্মদ মনসুরের কাছে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করেছিলেন ওমর খৈয়াম। দীক্ষা নিয়েছিলেন ধর্মীয় শাস্ত্র, দর্শন ও গণিতে। পারদর্শী হয়ে তারপরে চলে যান খোরাসানের সবচেয়ে বিখ্যাত শিক্ষক ইমাম মোয়াফফেক নিশাপুরির কাছে। তার পদতলে সমর্পণ করেন নিজেকে। ইমাম মোয়াফফেকও এমন শিষ্য পেয়ে মেলে দিয়েছিলেন নিজের জ্ঞানসাম্রাজ্য। ‘ওমরের রূবাইয়াত’ নামে কবিতাসমগ্রের জন্য তিনি বেশি বিখ্যাত। তাঁকে বলা হয় ইসলামের স্বর্ণযুগের শ্রেষ্ঠ কবি। তাঁর কবিতা বা ‘রুবায়ি’র প্রভাব দেখা যায় পশ্চিমা দেশগুলোতেও। মার্কিন কবি জেমস রাসেল লোয়েল ওমর খৈয়ামের রুবাই বা চার লাইনের কবিতাগুলোকে ‘পারস্য উপসাগরের মণিমুক্তা’ বলে অভিহিত করেছেন। ১১৩১ সালের ডিসেম্বরে ইসলামী সাহিত্যের মহান কবি পরলোকগমন করেন।

 

বুল্লে শাহ

পাঞ্জাবের সুফি ভাবুক ও কবি বুল্লে শাহর জীবনকাল ছিল মোগল আমলের শেষভাগে। তার আসল নাম সৈয়দ আবদুল্লাহ শাহ কাদরি। যদিও কর্ম ও রচনার মাধ্যমে তিনি যুগযুগান্ত ধরে বুল্লে শাহ নামেই খ্যাতিমান।  তাঁর জন্ম ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর বাবা শাহ মুহাম্মদ ছিলেন দরবেশ। পেশা হিসেবে বেছে নেন শিক্ষকতা। ধর্ম প্রচারক হিসেবেও একটি মসজিদে কাজ করতেন। পরে তিনি পেশাকর্মের জন্য পান্ডোকে যান। বুল্লে শাহ প্রাথমিক পড়াশোনা করেন সেখানেই, পরে উচ্চতর বিদ্যার্জনের জন্য কাসুর যান। সেখানে মাওলানা মহিউদ্দিনের কাছে শিক্ষালাভ করেন। বুল্লে শাহর আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন সুফি দরবেশ শাহ ইনায়েত কাদরি। বুল্লে শাহ মাত্র ছয় বছর বয়সে তাঁর পরিবারের সঙ্গে মালাকওয়ালে চলে আসেন। এখানেই তিনি মাওলানা মইনুদ্দিনের কাছে শিক্ষালাভ করেন। তাঁর সাহিত্যপ্রতিভা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। তাঁর কবিতাগুলো মুখে মুখে পাঠ হতো। কবিতার ধরনের দিক থেকে বুল্লে শাহর ধরন ছিল কাফি। যা পাঞ্জাবি ও সিন্ধি কবিতার এটি একটি জনপ্রিয় ধারা।

 

ইবনুল আরাবী

ইবনুল আরাবী ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ সুফি সাধক ও দার্শনিক। ১১৬৫ সালে তিনি আন্দালুসিয়া বা বর্তমান স্পেনের মুর্সিয়া নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। মুসলিম সাহিত্যে তিনি ‘আশ-শায়খুল আকবার’ নামেও খ্যাত। সে সময় ইসলামের স্বর্ণযুগ। তৎকালীন সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিকতায় তার নাম সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হতো। এ সুফি সাধক তাঁর দার্শনিক লেখনীর মাধ্যমে পাঠকদের মনে আলোড়ন তুলতে পেরেছিলেন। ইবনুল আরাবীর দর্শনমতে অস্তিত্ব জগতে যা কিছু দৃশ্যমান সবই একক এলাহী সত্তার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এ আকিদার অনুসারী সুফিরা স্রষ্টা ও সৃষ্টিতে কোনো পার্থক্য করেন না। সুফিতত্ত্বে অনবদ্য অবদানের সুবাদে তিনি অত্যন্ত প্রশংসিত হন। ইবনুল আরাবীর লেখনীর মূল ভিত্তি ছিল আধ্যাত্মিকতা। আধ্যাত্মিক আলোচনা ও স্রষ্টার নিকটবর্তী হওয়ার আকুল কাব্যিক বর্ণনা রয়েছে। সুফি সাধকদের কাছে তাঁর লেখা অনুপ্রেরণা জোগায়। বিখ্যাত কবি দামেস্কে মৃত্যুবরণ করায় অনেকে ডাকেন ‘দামেস্কি’ বলে।

 

ফরিদ উদ্দিন আত্তার

তার নাম আবু হামিদ বিন আবু বকর ইব্রাহিম। তবে আত্তার ও ফরিদ উদ্দিন তাঁর কলমী নাম। সাধারণ মুসলমানদের কাছে শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার নিশাপুরী নামে পরিচিত। তাঁর লেখনী এতটাই হৃদয়গ্রাহী ছিল যে, পাঠকরা তাঁকে সুগন্ধীর সঙ্গে তুলনা করতেন। তাঁর নামের সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয় আত্তার বা সুগন্ধী ব্যবসায় শব্দটি। হয়ে ওঠেন তাঁর সময়ের অন্যতম প্রধান মুসলিম কবি হিসেবে। এ ফারসি কবি কিন্তু সুফিবাদের ছোঁয়া রাখতেন তাঁর কবিতায়। তাঁর রচিত কাব্যসমূহ আধ্যাত্মিক মনীষী ও গবেষক সাধকদের মননকে সবিশেষ সমৃদ্ধ করেছে এবং অনেক গ্রন্থ বিভিন্ন ভাষায়ও অনূদিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, কবিতার আড়ালে সুফিবাদের যে প্রেমময় দিক ওঠে আসত তা পরবর্তী সময়ে স্থায়ী ভিত্তি লাভ করে। তিনি অন্তত ৩০টি বই লিখে গেছেন। তাঁর একটি বিখ্যাত বই হচ্ছে- ‘মানতিকে তাইয়ার’ বা ‘পাখির সমাবেশ’। ফরিদ উদ্দিন আত্তার গবেষণার মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জন করেন তা কবিতা আকারে লিখে গেছেন।

 

আল্লামা ইকবাল

উন্নত কাব্যশৈলী, চিন্তার গভীরতা, দূরদর্শিতা ও উম্মতের জন্য হৃদয়ের ব্যথা ছিল আল্লামা ইকবালের কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাঁর নাম স্যার মুহাম্মদ ইকবাল হলেও তিনি আল্লামা ইকবাল নামে ব্যাপক পরিচিত। তিনি ইরানে ইকবাল-ই-লাহোরী নামে পরিচিত। তিনি একাধারে একজন মুসলিম কবি, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও ব্যারিস্টার। ১৮৭৭ সালে তিনি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোটে জন্মগ্রহণ করেন। লাহোর সরকারি কলেজ থেকে ১৮৯৭ সালে স্নাতক এবং ১৮৯৯ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার ডিগ্রি লাভ করেন। একই বছর তিনি লাহোরের ওরিয়েন্টাল কলেজে ইতিহাস ও দর্শন শাস্ত্রে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯০১ সালে লাহোর সরকারি কলেজে ইংরেজি ও দর্শন শাস্ত্রে সহকারী অধ্যাপক নিযুক্ত হন। পাকিস্তানের জাতীয় কবি আল্লামা ইকবাল উর্দু, ফারসি ও ইংরেজি ভাষায় মুসলিম উম্মাহর পথনির্দেশনা দান করেছেন। তাঁর লেখা ১১টি কাব্যগ্রন্থের মধ্যে আটটি ফারসি ও তিনটি উর্দু ভাষায় লিখিত। তাঁর বহুল আলোচিত কাব্যগ্রন্থ হলো- ‘শিকওয়া জওয়াব-ই-শিকওয়া’, ‘আসরারে-ই-খুদি’, ‘রমুজ-ই-বেখুদি’ ও ‘জাবিদলামা’ অন্যতম। ১৯৩৮ সালে উপমহাদেশের বিখ্যাত কবি মৃত্যুবরণ করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর