খরস্রোতা পদ্মার আগ্রাসী আচরণ। মিথ্যা অজুহাত দিয়ে দেশের নামে কালিমা লেপনের চেষ্টা। কেউ বলছিলেন প্রমত্তা পদ্মায় সেতু কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারও কারও চেষ্টা ছিল আওয়ামী লীগ আমলে বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত দিয়ে যেন পদ্মা সেতু নির্মাণ না হয়। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা না করে দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করলেন ‘নিজস্ব অর্থেই আমরা পদ্মা সেতু করব’। সততা ও সাহসিকতায় নির্মাণ স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এই সাহসিকতার ধারক-বাহক হলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সাহসিকতা ও সততায় কোনো কিছুই বাধা হতে পারেনি। পদ্মা সেতু শুধু সরকার নয়, দল নয়, গোটা দেশের অহংকার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক, পদ্মা সেতু নির্মাণকাজে সম্পৃক্ত প্যানেল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাজনের পর বিশ্বে সবচেয়ে খরস্রোতা নদী পদ্মা। সেই পদ্মায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যার অনুপম তেজস্বিতা ও দৃঢ় মনোবলের কারণে। তিনি সাহসের প্রতীক, সততার প্রতীক। নিখাদ দেশপ্রেম থাকলে সব রকম বাধা ডিঙিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব যে করা যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত শেখ হাসিনা। ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু অর্থায়ন থেকে সরে যায়। সে সময় অনেকেই ভেবেছিলেন পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পরাক্রমশালী দেশ, আমাদের দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন, দেশি অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব নয়। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্য ও কটাক্ষ করেছিলেন সে সময়। কিন্তু সংকল্পে সততা ও সাহস নিয়ে অটল থেকেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাহসী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণেই পদ্মা সেতু হয়েছে। এ সেতু নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের তথা শেখ হাসিনার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে বহুগুণ। বিশ্ব জানছে বাঙালির সক্ষমতা সম্পর্কে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি না থাকলে পদ্মা সেতু সম্ভব হতো না। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জন্য গর্ব ও অহংকারের বিষয়। শেখ হাসিনার দূরদর্শী দৃষ্টির কারণেই আজ জাতি ইতিহাস সৃষ্টির দ্বারপ্রান্তে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আমাদের জন্য আনন্দের এবং অহংকার। পদ্মা সেতু পদ্মাপাড়ের মানুষের মাঝে উন্নয়নের স্পৃহা তৈরি করেছে। আর এই স্পৃহার উৎস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।জানা গেছে, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণ করায় দেশ-বিদেশে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার ভাবচ্ছবির দ্যুতি বেড়ে কয়েকগুণ। স্বপ্নের সেতু আজ শনিবার খুলে দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে পদ্মার দুই পাড়ে সাজ সাজ রব উঠেছে। দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ যেন ভাসছে আনন্দবন্যায়। দেশজুড়ে চলছে উৎসব। কেউ সন্তানদের নাম রাখছেন স্বপ্ন, পদ্মা, সেতু। সারা দেশের মানুষ যাতে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন চাক্ষুষ করতে পারে সেজন্য জেলায় জেলায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও নিজেদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা দেখানোর মতো দুঃসাধ্য কারও ছিল না। নিজস্ব অর্থায়নে এত বড় বাজেটের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বিশ্বকে অর্থনৈতিক সক্ষমতা দেখানোর সেই দুঃসাধ্য দেখালেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত প্যানেল বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, এই সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশ্বের জন্য একটা বড় রাজনৈতিক বার্তা। বিশ্বব্যাংক যখন ঋণ দিতে আপত্তি করল, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ওপর বিশ্বাস রেখে কাজটি এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) শর্ত দিয়েছিলেন, বিশ্বব্যাংক জড়িত থাকলে যে কোয়ালিটি কন্ট্রোল করা হতো, আমাদের তত্ত্বাবধানে নির্মাণকাজে গুণগত মানের ক্ষেত্রে যাতে কোনো ধরনের আপস করা না হয়। তা-ই অর্জিত হয়েছে।
স্বপ্নে সিঁড়ি ধাপে ধাপে অতিক্রম করে পদ্মা সেতু এখন আর বাঙালির কাছে স্বপ্ন নয়, এ সেতু এখন বাঙালির জন্য এক গৌরবোজ্জ্বল সোনালি অহংকার। এ সেতুই আবার বিশ্বকে জানান দিল বাঙালিদের দাবিয়ে রাখা সম্ভব নয়। খরস্রোতা পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে স্বপ্নের সেতুটি। সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি শেখ হাসিনা সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প। এ প্রকল্পের সঙ্গে মিশে ছিল বাঙালির অস্তিত্ব, টিকে থাকার সংগ্রাম। শেখ হাসিনার মতো জননন্দিত মোহন নেতৃত্ব থাকলে বর্ধিষ্ণু একটি জাতি যে ‘দুস্তর পারাবার’ লঙ্ঘন করতে পারে, পদ্মা সেতু তার অন্যতম নজির।
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এক কথায় বলতে হবে, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও দৃঢ়চেতা মনোবলের কারণেই পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক যখন মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সরে দাঁড়াল, তখন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করবেন।
তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক শক্তিশালী দেশ ও এদেশের অনেকেই উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। তাদের আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে আজকে পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার দৃঢ় সাহসিকতা ও ঐতিহাসিক ইমানের জোর আমাদের পদ্মা সেতু এনে দিয়েছে। কারণ তিনি জানতেন এখানে কোনো অন্যায় হয়নি। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে অনেকের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হয়েছিল। আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে শুধু বাংলাদেশই নয়, কানাডার আদালতে পাঁচ বছর ধরে মামলা চলে। কানাডার আদালত রায় দিয়েছেন, বিশ্বব্যাংকের প্রত্যেকটি অভিযোগ মিথ্যা, সাজানো ও বানোয়াট। কানাডার আদালত বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, এটা বিশ্বাসযোগ্য না হলে ছয় মাস আপিল করার সুযোগ পাবে বিশ্বব্যাংক। কিন্তু তারা আপিল করেনি। যে সময় আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, তখন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে নবজাগরণ হলো।