লন্ডনে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে মুখ খুললেও কংগ্রেস যে সুর নরম করছে না, গতকাল শনিবারই তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিললো আনন্দ শর্মার সাংবাদিক বৈঠকে। আজ মোদির বিরুদ্ধে আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়ালেন কংগ্রেস সভানেত্রী সানিয়া গান্ধী ও পুত্র রাহুল গান্ধী। স্পষ্ট করে দিলেন, মোদিকে দেশের মাটিতে, সংসদে দাঁড়িয়ে অসহিষ্ণুতা বরদাস্ত না করার বিবৃতি দেওয়ার জন্য চাপ বাড়াবে কংগ্রেস।
জওহরলাল নেহেরুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানের মঞ্চে সানিয়া শুক্রবার সরাসরি মোদিকে নিশানা করে বলেন, ‘‘কেউ উন্নয়নের মুখোশ পড়ে বিশ্বের সামনে নিজেদের সাম্প্রদায়িক কর্মসূচি আঁড়াল করতে চাইছেন। অথচ দেশ জুড়ে এমন অসহিষ্ণু পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে যে, কারও মত ও বিশ্বাস ভিন্ন হলেই তাঁকে হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে। মা-ছেলের অভিযোগ ‘একনায়কতন্ত্র’ চালাচ্ছেন মোদি।
সংসদে বিবৃতি দেওয়ার জন্য মোদির উপরে চাপ তৈরি করতে নেহরুকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন সানিয়া-রাহুল। কংগ্রেস সভানেত্রী বলেন, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী খোলাখুলি মত বিনিময়ে বিশ্বাস করতেন। দেশের যে কোন নাগরিক তাঁর ‘মন কি বাত’ বলতে পারতেন। সেই ‘মন কি বাত’ এখন রেডিওর অনুষ্ঠানে এসে ঠেকেছে।’’আর রাহুল বলেন, বিদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভারতের সহিষ্ণুতার কথা বলেন। কিন্তু দেশে থাকলে তাঁর মুখে এ সব শোনা যায় না। যখন ধর্মের নামে দাদরিতে খুন হয়, হরিয়ানায় দলিত শিশুদের পুড়িয়ে মারা হয়, তখনও তিনি নীরব থাকেন। সংসদেও উৎসাহ নেই প্রধানমন্ত্রীর। বিরোধীরা কী প্রশ্ন তুলেছেন, তা নিয়ে তিনি বা তাঁর সরকার মাথাই ঘামায় না। নেহেরু কিন্তু সংসদে বসে অটলবিহারী বাজপেয়ীর কথাও শুনতেন। কিন্তু বিজেপি-আরএসএস মনে করে, তারাই সব জানে।
এক বছর আগে নেহরুর ১২৫-তম জন্মবার্ষিকীর সূচনা অনুষ্ঠানে কংগ্রেস অন্য সব ধর্মনিরপেক্ষ দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পরে কংগ্রেসের তখন কোণঠাসা দশা। কিন্তু সংসদে জমি বিল রুখে দেওয়া, বিহারে বিজেপি বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পরে কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী। আজকের অনুষ্ঠানে অন্য কোন দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। মঞ্চটিকে নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ, বহুত্ববাদী ও সহিষ্ণুতার আদর্শকে তুলে ধরার কাজেই পুরো দস্তুর ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
অসহিষ্ণুতার প্রশ্নে সাহিত্য একাডেমির সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া থেকেই কার্যত মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বিশিষ্ট জনেদের প্রতিবাদের শুরু। সানিয়া এ দিন মনে করিয়ে দিয়েছেন, প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহেরুই ছিলেন সাহিত্য একাডেমির প্রথম সভাপতি। এবং দায়িত্ব নিয়েই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, একাডেমির সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ থেকে এই সংস্থাকে বাঁচানোই তাঁর প্রথম কর্তব্য।
লন্ডনে অসহিষ্ণুতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে গত বৃহস্পতিবার মোদি বলেছেন, ‘‘ভারত বুদ্ধের দেশ, গান্ধীর দেশ। সমাজের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে যায় এমন কোন ঘটনা আমরা বরদাস্ত করি না।’’ মোদির মুখে গান্ধী-নামের পরে সানিয়া শনিবার আরএসএস-এর নাম না করে বলেন, ‘‘এরাই গান্ধীর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল। এখন এই তথাকথিত জাতীয়তাবাদীরাই পশংসাপত্র দিয়ে বেড়াচ্ছে দেশপ্রেমের।’’
কংগ্রেস নেতৃত্ব যখন গান্ধী-নেহেরুর আদর্শকে বিসর্জন দেওয়ার অভিযোগ তুলছেন মোদি তথা বিজেপির বিরুদ্ধে, তখন তার কিছুটা হলেও জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। নেহেরু মেমোরিয়ালের এক অনুষ্ঠানে রাজনাথ এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে নেহেরুর মতপার্থক্য রয়েছে ঠিকই। কিন্তু তিনি যে মানুষের কল্যাণে ও রাষ্ট্রগঠনের চেষ্টা করে গিয়েছেন, তা নিয়ে আমরা সংশয় প্রকাশ করতে পারি না।’’
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
বিডি-প্রতিদিন/১৫ নভেম্বর, ২০১৫/মাহবুব