শুক্রবার রাতে প্যারিসের ৬টি স্থানে জঙ্গি হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফ্রান্সের ক্যালে বন্দরের কাছে ৪০টি শরণার্থী শিবিরে আগুন লাগে৷ সেখানে সিরিয়া ও সুদান থেকে আসা প্রায় ৬ হাজার শরণার্থী বাস করেন৷ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা না গেলেও, 'দ্য অ্যাংরি অফ ক্যালে' নামে শরণার্থীবিরোধী একটি স্থানীয় গোষ্ঠী সেই অগ্নিকাণ্ডের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন৷
ক্যালের মেয়র নাথাচা বুশার অভিযোগ করেছেন, ব্রিটেনের 'কালোবাজারি অর্থনীতি' ও বাড়তি সুযোগ সুবিধার লোভে উদ্বাস্তুরা ক্যালেতে এসে ভিড় জমাচ্ছেন৷ এর জন্য তিনি ব্রিটেনকেই দায়ী করেছেন৷
এরই পাশাপাশি, শনিবার পোল্যান্ড ঘোষণা দিয়েছে, প্যারিসের ঘটনার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোটা মেনে মধ্যপ্রাচ্য থেকে শরণার্থীদের দেশে প্রবেশ করতে দিতে অপারগ৷ প্যারিসে সন্ত্রাসের ভয়াবহ রূপ দেখে এখন বহু স্তরেই প্রশ্ন উঠছে শরণার্থীদের বেশে জঙ্গিরাও ইউরোপে প্রবেশ করছে না তো? এদের মধ্যে রয়েছেন স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো৷ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছি গণহারে শরণার্থীদের প্রবেশ করতে দিলে জঙ্গি হামালার ঝঁকি থাকবেই৷ আসা করি এবার অনেকের চোখ খুলেছে৷'হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানও প্রথম থেকে জার্মানির 'উদ্বাস্তুরা স্বাগত' নীতির সমালোচনা করে আসছেন এবং তার জন্য শরণার্থীদের উপর বলপ্রয়োগেও কার্পণ্য করেননি৷ ফ্রান্সের বামপন্থী নেতা জঁ মারি ল্য পেনেরও মত হল, জাতীয় সীমান্ত অবিলম্বে বন্ধ না করলে মৌলবাদী জঙ্গিদের মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইউরোপ থেকে অন্তত ৬ হাজার মানুষ সিরিয়া ও ইরাক গিয়ে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এ নাম লিখিয়েছেন৷ এদের অনেকের কাছেই শেঞ্জেন ভিসা থাকায় তাঁরা স্বদেশে ফেরা ছাড়াও ইউরোপের ২৬টি দেশে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারেন৷
এই প্রসঙ্গে আমেরিকার হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান এড রয়েস শুক্রবার সিএনএন বলেন, 'ইরাক ও সিরিয়ার যুদ্ধে অংশ নিয়ে ১৮৫ জন আইএস সদস্য ফ্রান্সে ফিরে এসেছেন৷'
অন্যদিকে, শুক্রবারই টিভিতে এক অনুষ্ঠানে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, 'আমার উদ্বাস্তু নীতি সঠিক এবং তার জন্য আমি লড়াই করে যাব৷' পদ খোয়ানোর আশঙ্কাও তিনি করছেন না৷ এ মাসের শেষেই চ্যান্সেলর পদে মার্কেলের ১০ বছর পূর্ণ হবে৷
মার্কেলের নীতি অনুযায়ী জার্মানি প্রতি বছর ১০ লক্ষ উদ্বাস্তু নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ কিন্তু মার্কেল দলের মধ্যেই এই নিয়ে অসন্তোষ দানা বাঁধছে৷ তাঁর ঢালাও আতিথেয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী টমাস দ্য মেজিয়ের এবং অর্থমন্ত্রী উল্ফগ্যাং শেউবল৷
সূত্র: এই সময়
বিডি-প্রতিদিন/১৫ নভেম্বর, ২০১৫/মাহবুব