৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১৫:১৬

ভোল পাল্টাচ্ছে ডেঙ্গু, দুঃশ্চিন্তায় চিকিৎসকরা

অনলাইন ডেস্ক

ভোল পাল্টাচ্ছে ডেঙ্গু, দুঃশ্চিন্তায় চিকিৎসকরা

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রূপ বদলাচ্ছে জীবনঘাতি ডেঙ্গু। বদলাচ্ছে রোগের উপসর্গ। চোখের পাতা স্থির হয়ে যাচ্ছে। অবশ হয়ে পক্ষাঘাত রোগীর মতো হয়ে যাচ্ছে শরীরের এক-একটা দিক। উপসর্গ দেখে মনে হচ্ছে, সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়েছে। কিন্তু সিটি স্ক্যান করে দেখা যাচ্ছে, মস্তিষ্কে রক্তপাত হয়নি। অর্থাৎ সেরিব্রাল অ্যাটাক নয়। বেশ কয়েক ঘণ্টা স্যালাইন চলার পরে রোগীর চোখের পাতা নড়ছে। শরীরের অবশ হয়ে যাওয়া অংশেরও সাড় ফিরছে।

পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা কেউ কেউ বলছেন এটা, এটা ডেঙ্গু জীবাণুর নতুন এক মাহাত্ম্য। হেমারেজিক ডেঙ্গুতে কখনও কখনও স্নায়ুতন্ত্রের উপরে প্রভাব পড়ে। কিন্তু হেমারেজিক ডেঙ্গু ধরা পড়ার আগেই শরীরের একটা অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীর মতো হয়ে যাচ্ছে, এমনটা চার দশকের ডাক্তারি জীবনে তিনি আগে দেখেননি বলে জানালেন কলকাতা স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা অমিতাভ নন্দী। ওই পরজীবী বিশেষজ্ঞের মন্তব্য, যতো দিন যাচ্ছে ততোই ভিন্ন ধরনের ডেঙ্গু রোগীর সংস্পর্শে আসতে হচ্ছে তাঁকে।     

স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের আর এক প্রাক্তন অধিকর্তা পতঙ্গবিদ অমিয়কুমার হাটির মতে ''স্নায়ুতন্ত্রের উপরে এমন আঘাতকে হেমারেজিক শক সিন্ড্রোম বলা যেতে পারে।'' তবে হেমারেজিক ডেঙ্গু ছাড়া অন্য ডেঙ্গু রোগীদের এই ধরনের উপসর্গ দেখেননি বলেই ওই প্রবীণ চিকিৎসকের দাবি। আবার মেডিসিনের চিকিৎসক সুব্রত মৈত্রের বক্তব্য, ''গত কয়েক মাসে আমার কাছে যে সব ডেঙ্গু রোগী এসেছে, তাঁদের কারও ক্ষেত্রে স্নায়ুতন্ত্রের উপরে এমন আক্রমণ দেখিনি।''

সদ্য ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠা এক মধ্যবয়সী রোগীর বক্তব্য- ''আমার মাথা এমন ঘুরতে শুরু করেছিল যে চক্কর খেয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। বেশ কিছুক্ষণ কোনও সাড় ছিল না। তারপরে উঠলাম বটে কিন্তু নিজের নামটাও মনে করতে পারছিলাম না কিছুক্ষণ। বাড়ির লোকেরা পরে বলেছে আমি ভুলভাল বকছিলাম। ডাক্তারবাবু পরে বলেছেন, রক্তে ডেঙ্গুর জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যাওয়াতেই এই বিপত্তি। পরে ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখেছি। ডেঙ্গুর এই উপসর্গের হদিশ পাইনি।''

কেন এমন হচ্ছে?
পরজীবী নিয়ে গবেষণারত একটি কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী বলছেন, ''বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক এবং শরীরের ভিতরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়াদের জিন হামেশাই পরিবর্তিত হতে থাকে। একটা সময় পরে নতুন ধরনের জীবাণুর প্রজন্ম তৈরি হয়। আর সেই সব প্রজন্মকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ওই সব জীবাণু শরীরে ঢুকলে তা আগে থেকে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিয়ে কোষের মধ্যে ঢুকে যায়।  

পরজীবী বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর, এই সময়েই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। শীত যত এগিয়ে আসে, ততই ডেঙ্গু ভাইরাস দুর্বল হয়ে পড়ে। এবারও তাই শীতের মুখে এ রোগটির সংক্রমণ কমে যাবে ভেবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এবং কলকাতা পুরসভা অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়েছিল। কিন্তু তাপমাত্রা কমতে শুরু করার পরে এবং বৃষ্টি কমে যাওয়ার পরেও রোগের দাপট না কমায় চিকিৎসকেরা বিভ্রান্ত। এখনও চিকিৎসকদের দরজায় ডেঙ্গু রোগীর লম্বা লাইন পড়ছে।

ডিসেম্বরেও ডেঙ্গু না কমার পিছনে আবহাওয়াকেই দোষারোপ করছেন কলকাতা পুরসভা ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তাঁরা বলছেন, ডিসেম্বরেও গরম আবহাওয়া থাকার ফলে পরজীবীরা সক্রিয় রয়েছে। তার ফলেই ডিসেম্বরে ডেঙ্গু রোগী মিলছে।

পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী মনে করেন, পরিবেশে ডেঙ্গু জীবাণু অধিক সংখ্যায় থেকে যাওয়ার ফলেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ঠিক সময়ে রোগ না ধরা পড়ায় তা আরও জটিল হয়ে উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে জীবাণু রোগীর শরীরে অনেক দিন থেকেও কোনও প্রতিক্রিয়া হচ্ছে না। উপসর্গ বোঝা যাচ্ছে না। ওই সব রোগীর শরীর থেকে জটিল জীবাণু নিয়ে মশা তা আরও ছড়িয়ে দিচ্ছে। তার ফলে সেরিব্রাল অ্যাটাকের মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। কখনও কখনও রোগী কোমায় চলে যাচ্ছে, আবার দ্রুত ধরা পড়লে সেরেও উঠছেন অনেকে।

ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে মশার কামড় এড়ানোর জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা নিতে সবাইকে পরামর্শ দিয়েছেন পরজীবী বিশেষজ্ঞরা। যার জন্য মশারি ব্যবহার জরুরি। আর পরিবেশে যাতে ডেঙ্গি ভাইরাসের উপস্থিতি কমে তা নিশ্চিত করতে হবে।

সূত্র: আনন্দবাজার

বিডি-প্রতিদিন/০৭ ডিসেম্বর ২০১৫/এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর