১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৩:৩৬

জীবনের লড়াইয়ে হেরে গেলেন হানামানথাপ্পা

অনলাইন ডেস্ক

জীবনের লড়াইয়ে হেরে গেলেন হানামানথাপ্পা

হানামানথাপ্পা কোপাড়

জীবনের সঙ্গে লড়াইয়ে হেরে গেলেন পাঁচদিন পর সিয়াচেন হিমবাহের বরফের স্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়ার ভারতীয় সেনাবাহিনীর ল্যান্স নায়েক হানামানথাপ্পা কোপাড়। আজ সকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দিল্লির আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফারাল হাসপাতালে তিনি জীবনমৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলেন। সেখানেই আজ তার মৃত্যু হয় বলে হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ জানায়। খবর দ্য হিন্দুর

গত ৩ ফেব্রুয়ারি এক বিশালাকৃতির তুষারধসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সিয়াচেন হিমবাহের ১৯,৬০০ ফুট উচ্চতায় স্থাপিত ভারতীয় এক সেনা চৌকিতে কর্মরত দশ সদস্য চাপা পড়েন।  এ ঘটনার দিন দুয়েক পরই দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে হনুমানথাপ্পাসহ দশ সেনা সদস্যের মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করা হয়। সেইসঙ্গে সেখানে তাদের মৃতদেহের খোঁজে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রাখা হয়। এর মধ্যেই গত ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় অলৌকিকভাবে জীবিত উদ্ধার হন ল্যান্স নায়েক হনুমানথাপ্পা কোপাড়। মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩৫ ফুট নিচ থেকে কয়েকটন বরফ ও তুষারের মধ্য থেকে তাকে অজ্ঞাত অবস্থায় জীবিত উদ্ধার করে আনা হয়। তবে বাকি নয়জনের কাউকেই জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সিয়াচেন থেকে তাদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

৮ ফেব্রুয়ারি উদ্ধারের পর ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে বিমানবাহিনীর বিমানে করে হনুমানথাপ্পাকে দিল্লির আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফারাল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় শুরু থেকেই তাকে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় তার শরীরের কিডনি, লিভারসহ গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গই অকেজো হয়ে গিয়েছিল। ছয়দিন মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তার বেঁচে থাকাটাকেই অলৌকিক বলে বর্ণনা করেছিলেন চিকিৎসক ও আর্মি কর্মকর্তারা। তবে আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত পুরো ভারতবাসীকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলো 'সাহসী' হনুমানথাপ্পা।

ভারতের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা আজ সকালে বলেন, 'সবাইকে জানাতে দুঃখবোধ হচ্ছে যে হনুমানথাপ্পা আর নেই। আজ সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে।' একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রাণপণ চেষ্টা সত্ত্বেও হাসপাতালটিতে ভর্তির পর থেকেই তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছিল।

১৯ মাদ্রাজ রেজিমেন্টের সেনা সদস্য হনুমানথাপ্পা কর্ণাটকের কোপ্পালের বাসিন্দা ছিলেন। সেখানকার বেতাদুর গ্রামের এক কৃষক পরিবারের সন্তান ছিল সে। সাম্প্রতিক বছরে গ্রামটি থেকে প্রায় ৬ জন ছেলে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। এদের একজন ছিলেন হনুমানথাপ্পা। পরিবারের সবার ছোটো হনুমানথাপ্পা ছোটোসময় থেকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন। সেই চেষ্টায় তিনবার প্রত্যাখাত হয়েও হাল ছাড়েননি তিনি। চতুর্থবারের চেষ্টায় তার স্বপ্ন সত্যি হয়। প্রায় ১৪ বছর আগে ১৯ মাদ্রাজ রেজিমেন্টে যোগ দেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে চার বছর আগে একই গ্রামের মহাদেবী জয়শ্রীকে বিয়ে করেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাহসী এই যুবক। নেত্র নামে দুই বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে তাদের। ৬ মাস আগে শেষবারের মতো বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। আর তুষারধসের একদিন আগে ফোন করে পরিবারের সবার ব্যাপারে খোঁজখবর নেন বলে তার বড় ভাই গোবিনধাপ্পা জানান।


বিডি-প্রতিদিন/১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/শরীফ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর