৭ মার্চ, ২০১৬ ১১:৫৩

ভারত হারলে অনেক চটকদার খবর হতো

অনলাইন ডেস্ক

ভারত হারলে অনেক চটকদার খবর হতো

আল আমিনের বিরুদ্ধে তার কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যেন ভারতীয় মিডিয়াকে নিয়ে পড়লেন! কোথাও কোনো ঔদ্ধত্য নেই, কিন্তু হাবেভাবে ভঙ্গিতে প্রকাশ ভারতীয় মিডিয়ার সঙ্গে সারাক্ষণ তার যে এই দড়ি টানাটানি চলে, তা নিয়ে তার কোনো আপত্তি নেই। বরং চ্যালেঞ্জটা যেন তিনি উপভোগই করেন!

ধোনিকে জিজ্ঞেস করা হলো, আট মাস আগে এই প্রেস কনফারেন্স রুমেই বাংলাদেশের কাছে হেরে যাওয়ার পর আপনাকে বলা হয়েছিল খারাপ অধিনায়ক। অনেক কথা হয়েছিল যে, আপনাকে সরানো উচিত। ভারতে কেউ কেউ ক্রিকেট-ঈশ্বর আর আপনি এত ট্রফি জিতেও কি না শুধুই ক্যাপ্টেন কুল! তার ওপরে উঠতে পারেননি। আজ কী বলবেন?

ধোনি বোধহয় এ রকম ডেলিভারির জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘ভারতে প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো মতামত আছে। ক্রিকেট নিয়ে তো আছেই। আর গণতন্ত্র আপনি আটকাবেনই বা কী করে? সমস্যা হল টিভিতে ক্রিকেট দেখলে মনে হয় খুব সহজ। সবাই বলতে থাকে, আরে এ ভাবে খেললি? অন্য ভাবে খেলা উচিত ছিল। এমনকি টেস্ট ম্যাচেও জ্ঞান দেয়। এখন সেটা চুপচাপ শোনা ছাড়া উপায় কী?’’ বলে ধোনি যোগ করলেন, ‘‘আর ভারতীয় মিডিয়া তো আছেই। আমাকে কখনো প্যারাশুটে করে আকাশে তুলে দেয়। আবার দুম করে নামিয়ে দেয়। ভারতে ক্রিকেটার হলে আপনি অনেক স্বীকৃতি পাবেন। নাম পাবেন। এন্ডোর্সমেন্ট পাবেন। কিন্তু এই ব্যাপারটার সঙ্গে দ্রুত মানাতে হবে যে, কখনো আপনি উপরে থাকবেন, কখনো আপনি নিচে।’’ 

ধোনি বললেন, ‘‘আমার ক্ষেত্রে সমস্যাটা অনেক কম। কারণ আমার জন্য তো ভারতীয় মিডিয়া আছে! ওরা আমাকে তুলতে তুলতে ঠিক ফেলবেই। আবার দুম করে তুলে দেবে। আমার এতে বেশ মজাই লাগে। তবে এত কিছুর পরেও যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় কোন দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলবে, আমি ভারতের কথাই বলবো।’’

একজন জিজ্ঞেস করলেন ট্রফি জেতার ভাগ্য নিয়ে। ধোনি দ্রুত সেই ডেলিভারিটাকে আবার আল আমিনের করে দিলেন। ‘‘এই লাক, লাক শুনতে শুনতে কান পচে গেল। আরে ভাই, লাকের পিছনে কঠোর পরিশ্রম আছে, প্রচুর পরিকল্পনা আছে। সেটা ধারাবাহিকভাবে করে যেতে হয়।’’

এতোকিছুর মধ্যেও ধোনিকে বেশ আপ্লুত দেখাল। সচরাচর ট্রফি জয়োত্তর যে প্রকাশ্য প্রশান্তি তার মধ্যে দেখা যায় না। এই ট্রফি জয়কে ‘বিশেষ ট্রফি জয়’ অ্যাখ্যা দিলেন। তখনই প্রশ্ন হল, আপনি তো স্পেশ্যাল উইন শব্দ-টব্দ কখনো ব্যবহার করেন না। আজকে করছেন কেন? ধোনি বললেন, ‘‘করছি পরিস্থিতির জন্য। পরিস্থিতিটা যেমন হয়েছিল, যে ভাবে পুরো ব্যাপারটা এগোচ্ছিল, তাতে এটা খুব তৃপ্তির জয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এটা খুব সাহায্য করবে।’’

ধোনিকে প্রশ্ন করা হয়, আগের বার বাংলাদেশ জিতে প্রচুর উৎসব আর নাচানাচি করেছিল। আপনি যদিও ইতিহাসে বিশ্বাস করেন না তবু একটা কথা বলুন, ১২ বলের ১৯ রানের সময় একটা গনগনে উত্তাপ কি কাজ করেনি যে তোদের দেখে নেবো? ধোনি বললেন, ‘‘আগের বার যা হয়েছে তাতে কষ্ট পেয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু ওভাবে কিছু ভাবিনি। তবে লোভনীয় হেডিং এরা পেলেন না যে, ভারত ফাইনালে হেরে গেল। আমাদের বাংলাদেশের কাছে হেরে যাওয়াটা বেশ চটকদার খবর। আমাদের ওদের হারানোটা নয়। এটা একটা অদ্ভুত ব্যাপার যে, আমরা বাংলাদেশের কাছে হারলে সবাই বলবে সে কী রে বাংলাদেশের কাছে হেরে গেলি! আর জিতলে বলবে ওতো জিতবেই বাংলাদেশের সঙ্গে। কাজেই বাংলাদেশের সঙ্গে জিতেও কোনো পয়েন্ট পাওয়া যায় না। যদিও ওদের টিমটা এখন অনেক ভাল।’’

সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে এক ফাঁকে ধোনিকে আনন্দবাজারের তরফে জিজ্ঞেস করা হয়, ফেসবুকে এখন বলা হচ্ছে ক্রিকেট হলো সেই খেলা যেখানে দু’টো টিম খেলে আর মহেন্দ্র সিংহ ধোনি উইনিং শট মারেন। ধোনি শুনে হাসলেন তারপর বললেন, ‘‘ফেসবুক তো কত কথাই বলে।’’
 
তখনই মনে হল তিনি কি আল আমিনের মধ্যে তাসকিনকে দেখছিলেন?                                                                                                                                                                    


সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা


বিডি-প্রতিদিন/ ০৭ মার্চ, ২০১৬/ রশিদা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর