৯ মে, ২০১৬ ১০:৩৭

গুলিতে ঝাঁঝরা পাকিস্তানি ব্লগার

অনলাইন ডেস্ক

গুলিতে ঝাঁঝরা পাকিস্তানি ব্লগার

গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে কয়েকজন ব্লগারের খুনের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও খুন হয়েছেন অধ্যাপক ও পত্রিকার সম্পাদক। এবার পাকিস্তানে খুন হলেন খুররম জাকি নামের একজন ব্লগার। 

পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মী ও প্রাক্তন সাংবাদিক জাকি দেশটিতে পরিচিত এবং জনপ্রিয় মুখ। কট্টর ধর্মীয় নীতির বিরুদ্ধে বরাবর মুখ খুলেছেন, ব্লগেও লিখতেন তিনি। ফেসবুকে ‘লেট আস বিল্ড পাকিস্তান’ (এলইউবিপি) নামে একটি পেজও খুলেছিলেন খুররম। গতকাল রাতে উত্তর করাচির সেক্টর ১১-জি-র একটি রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন বছর চল্লিশের খুররম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাও খালিদ নামে এক সাংবাদিক। দুষ্কৃতীদের গুলিতে মারা গিয়েছেন তিনিও। 

রেস্তোরাঁটির চারপাশ খোলা। সেখানেই দু’টি মোটরবাইকে চড়ে জনা চারেক অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী আসে। খুররমকে নিশানা করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায় তারা। গুলিবৃষ্টির মধ্যে পড়ে মারাত্মক জখম হন খুররমের সঙ্গী রাও খালিদ। আহত হয়েছেন আসলাম নামে আরও এক জন। ঘটনার সময় ওই রেস্তোরাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এই ঘটনার পর পরই খুররমদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাতের দিকে খুররমকে অন্য হাসপাতালে সরানো হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। বাঁচানো যায়নি খালিদকেও।

পাক সংবাদমাধ্যমের একটি সূত্রের দাবি, তালিবানের হাকিমুল্লাহ মেহসুদের শাখা সংগঠন এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। লাল মসজিদের মৌলবি মৌলনা আবদুল আজিজের সমালোচনা করাতেই খুররমকে সরতে হল বলে দাবি করেছে তারা। তবে এলইউবিপি-র প্রধান সম্পাদক আব্বাস তাজ জামায়াত-এ-ইসলামি পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, এক বছর ধরেই প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছিলেন খুররম। জামাত নেতা শামসুদ্দিন আমজাদ দীর্ঘদিন ধরে খুররমের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নানা উস্কানিমূলক কথা বলে আসছেন বলেও দাবি করেছেন তাজ। জামায়াতের সঙ্গেই ‘সিপাহ-এ-সাহবা পাকিস্তান’- নামে অন্য একটি উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের সদস্যরাও খুররমের বিরুদ্ধে কথা বলত বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে করাচির পুলিশ এখনই এ নিয়ে বিশদে মুখ খোলেনি। তারা শুধু জানিয়েছে, যেখানে কাল খুররমদের উপর আক্রমণ হয়, সেখানে ফরেন্সিক দল গিয়ে তদন্ত সেরেছে। নাইন এমএম বোর পিস্তল থেকেই যে কাল গুলি চলেছিল সে বিষয়েও একপ্রকার নিশ্চিত পুলিশ। এসএসপি আরিব মেহর জানাচ্ছেন, এই ধরনের অস্ত্র দিয়ে আগের হামলাগুলো হয়নি। এর আগেও কট্টর মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার দায়ে খুন হতে হয়েছে কয়েক জন পাকিস্তানি মুক্তমনাকে। কিন্তু পুলিশের বক্তব্য, খুররমকে খুনের ক্ষেত্রে যে অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে, তা নতুন ধরনের।

খুররমের মৃত্যুর পরে অবশ্য বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে করাচি। আজ খুররমের শেষ যাত্রায় সামিল হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। করাচির মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনেও তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। টুইটারে হ্যাশ ট্যাগ দিয়ে ‘জাস্টিস ফর পিস অ্যাক্টিভিস্ট টু কনডেম দ্য কিলিং’ নামে প্রচারও শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। খুররমের স্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমার গোটা পরিবার খুনের হুমকি পেত। আমার স্বামীকে এ ভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হল।’’ তাঁর স্বামীর খুনিরা যাতে শাস্তি পায়, তার আর্জিও জানিয়েছেন তিনি। তবে খুররমকে খুন করে তাঁর পরিবারকে যে দমিয়ে রাখা যাবে না, সেই বার্তা আজ দিয়েছেন খোদ খুররম কন্যা। খুনিদের উদ্দেশে সেই কিশোরী বলেছেন, ‘‘আমার বাবাকে এভাবে খুন করে শহিদের মর্যাদা দিয়েছে ওরা। এই রকম এক জন শহীদের মেয়ে হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে।’’

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা


বিডি-প্রতিদিন/ ০৯ মে, ২০১৬/ আফরোজ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর