প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর চেহারা, চালচলন, কথা বলার ধরন সবকিছুতেই যেন ইন্দিরা গান্ধীর ছায়া। তাঁতের শাড়ি পরা ধরনটিতেও যেন সেই রকম আভিজাত্য। প্রয়াত রাজীব গান্ধীর মেয়ের মাঝে দলের প্রবীণদের অনেকেই ইন্দিরার দৃঢ়তা খুঁজে পান! রণকৌশল ঠিক করার দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রশান্ত কিশোরও তাই প্রস্তাব রেখেছিলেন রাহুল গান্ধী যদি রাজি না হন তবে উত্তরপ্রদেশের ভোটে মুখ করা হোক প্রিয়াঙ্কাকেই। কিন্তু লোকসভায় মাত্র ৪৫ জন সংসদ সদ্স্যকে নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে দল যখন তলানিতে, মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে একের পর এক রাজ্য, সেই অবস্থায় দলের শেষ দু’টি বড় অস্ত্রকে রাজ্য রাজনীতির গণ্ডিতে নামিয়ে আনতে রাজি হয়নি দল। এমনকি খোদ সোনিয়া গান্ধীও।

অথচ উত্তরপ্রদেশের ভোটে ভাল ফল করাটাও যে কতটাই জরুরি সেটা গান্ধী পরিবারের চেয়ে ভাল আর কে জানে! এই অবস্থায় বড় ভাই রাহুলের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কাকেও প্রচার যুদ্ধে নামাতে মনস্থ করেছে দল। এত দিন শুধু ভাইয়ের অামেঠী ও মায়ের রায়বরেলী কেন্দ্রেই ভোটপ্রচার সামলাতে দেখা দেখা গেছে রাজীবকন্যাকে। দলীয় সূত্রের মতে, এ বারে তিনি গোটা রাজ্যেই ভাইয়ের সঙ্গী হতে পারেন প্রচারে। দলের অন্দরে মোটামুটি এমনটা ঠিক হলেও অবশ্যই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি নেবেন সোনিয়াই।  

এক, রাহুলকে ছাপিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাটা থাকবে না এতে।

দুই, উত্তরপ্রদেশে এবারেও কংগ্রেসের ফল খারাপ হলে, কোনও ভাবেই তার দায় চাপবে না প্রিয়ঙ্কার ঘাড়ে।

তিন, অামেঠী-রায়বরেলীর গন্ডি পেরিয়ে গোটা রাজ্যে প্রচার করলে পরের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশ থেকেই লড়ার জমিও তৈরি করে রাখতে পারবেন প্রিয়াঙ্কা। যাতে সেই সময় সক্রিয় রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত হলে খানিকটা এগিয়ে থেকে শুরু করতে পারেন।

ভবিষ্যতে প্রিয়াঙ্কা রাজনীতিতে এলে কোনটি তাঁর জন্য উপযুক্ত নির্বাচনী কেন্দ্র হতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা চলছে কংগ্রেসের অন্দরে। প্রাথমিক আলোচনায় উঠে এসেছে অমেঠী কেন্দ্রটিই। এই মুহূর্তে অামেঠীর সংসদ সদস্য রাহুল। সেখানে স্মৃতি ইরানি গত লোকসভা নির্বাচনে ভাল টক্কর দিয়েছিলেন। রাহুলের জয়ের ব্যবধানও অনেকটা নামিয়ে এনেছিলেন। ভোটে হেরে যাওয়ার পরেও সেই কেন্দ্রে এখনও জমি আঁকড়ে রয়েছেন স্মৃতি। ফলে প্রিয়াঙ্কা অামেঠী থেকে দাঁড়ালে লড়াই হবে দুই নারীর। সোনিয়া শারীরিক অসুস্থতার জন্য আর ভোটে না লড়লে রাহুল রায়বরেলী কেন্দ্রে যেতে পারেন। কিন্তু কংগ্রেসেরই সূত্র বলছে, এই সবই এখনও ভাবনা-চিন্তার স্তরে রয়েছে। দলের মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘এ ধরনের যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন সোনিয়া গান্ধী। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা প্রকাশ্যে জানানো হবে।’’

অাসামে-কেরলে সদ্য সরকার খোয়ানোর পরে রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে দলের মধ্যে ফের প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধীরা তো সুযোগ পেলেই রাহুলকে কটাক্ষ করে যাচ্ছেন। বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা আকছারই বলেন, ‘‘রাহুল কংগ্রেসের দায়িত্ব নিলেই, বিজেপির ‘অাচ্ছে দিন’ আসবে।’’ কিন্তু প্রিয়াঙ্কা যদি শেষ পর্যন্ত সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন, তা হলে বিজেপির কৌশল কী হবে? বিজেপি বলছে, ওরা কী করবে নিজেরাই বুঝে উঠতে পারছে না। আর বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের মন্তব্য, ‘‘আগে তো আসুন, তার পর দেখা যাবে।’’

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

বিডি-প্রতিদিন/ ১১ জুন, ২০১৬/ আফরোজ