২১ আগস্ট, ২০১৬ ১৪:৪৬

মুসার ফেসবুকে মিলল গুলশানের সূত্র

অনলাইন ডেস্ক

মুসার ফেসবুকে মিলল গুলশানের সূত্র

আসল নাম মোহম্মদ মসিউদ্দিন ওরফে মুসা। তার নামে রয়েছে ২১টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। কিন্তু এর একটাও আসল নামে নয়। আইএস জঙ্গি সন্দেহে ধৃত এই মুসার সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ঘাঁটতে গিয়ে তাজ্জব হয়ে গেছেন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তারা। সম্প্রতি কলকাতায় এসে মুসাকে জেরা করে গেছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ বাহিনী র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা। তাঁরাও মুসার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সংগ্রহ করেছেন এমন তথ্য, যা ঢাকার গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় তদন্তে সাহায্য করবে।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ২০১৪ সাল নাগাদ আবু মুসা আল বাঙালি নামে মসিউদ্দিন নিজের প্রথম ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি খোলেন। সেই অ্যাকাউন্ট মারফত তিনি প্রায় ৬৭ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রথমদিকে নিয়মিত এই অ্যাকাউন্ট থেকে যোগাযোগ করা হলেও পরে হায়দরাবাদ থেকে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন গ্রেফতার হওয়ার পর কার্যত এই অ্যাকাউন্টের কাজ বন্ধ রাখা হয়। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, আইএসের ভারতের প্রধান সফি আরমার নিজেও একজন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। তার সঙ্গেও এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই যোগাযোগ রাখতেন মুসা। তারা দু'জনেই ফেসবুক এবং টুইটারের মাধ্যমে প্রথমে যোগাযোগ শুরু করেন। পরে নানা জরুরি তথ্য আদান-প্রদান হত মেসেঞ্জারের মাধ্যমে। এতেও গোয়েন্দাদের নজরদারি বেড়ে গেছে, তা বুঝতে পারার পর মুসা ও তার সঙ্গীরা সাহায্য নেয় আইএসের টেকনিক্যাল টিমের। যার নাম ছিল 'লাইব্রেরি অফ জিল'। সেখান থেকেই তাদের আইএসের নিজস্ব অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়। সেগুলোর মধ্যে আছে 'আইএম প্লাস', 'হাইক কাকাও', 'নিমবাজ', 'ব্যাং', 'কিক'সহ প্রায় ১০-১২টি অ্যাপ।

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন যেহেতু এগুলো আইএসের নিজস্ব টেকনিক্যাল টিম তৈরি করেছিল, সুতরাং তারা চাইলে সব 'চ্যাট হিস্ট্রি' মুছেও দিতে পারতো। তবে মুসার যে ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি রয়েছে, সেখানে তার বন্ধুর তালিকায় থাকা বেশ কয়েকজনের দিকে আপাতত নজর রেখেছেন গোয়েন্দারা। সেখানে দেখা যাচ্ছে গত জুন মাসেও আইএসের বিভিন্ন নৃশংস কার্যকলাপের ভিডিও বাংলায় সাবটাইটেল সহকারে নিজেদের ওয়ালে পোস্ট করেছে মুসার ফেসবুক বন্ধুরা। এমনকি, তাদের ওয়ালে লেখা হয়েছে মুক্তি পেতে হলে সিরিয়া যাওয়ার কথাও। পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য, আসলে এভাবেই রিক্রুটমেন্টের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল মুসার নেতৃত্বে একটি দল।

মুসার ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দু'টি সাইট শেয়ার করা হয়েছিল। তার একটি 'আমরা আনসার' এবং অন্যটি 'আত তামকিন'। যদিও বাংলাদেশ পুলিশ কিছুদিন আগেই এই 'আত তামকিনের' উপর নজরদারি করে সেই সাইটটির প্রচার এবং কার্যকলাপ বন্ধ করে দিয়েছে বলে সে দেশের সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে। শনিবার এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, 'সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই যে, মুসার ফেসবুক বন্ধুদের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের অধিকাংশই কলেজের ছাত্র।' এদের প্রোফাইলগুলিতে বেশ কিছু ছবি রয়েছে। তাদের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনগুলির কোনও সম্পর্ক আছে কি না তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। কারণ এই সব ছবিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইএসের পোশাক পরে তা প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

শনিবার থেকেই খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গোয়েন্দাকর্তাদের বক্তব্য, 'এই ঘটনায় জড়িত জেএমবির একটি অংশ হাত মিলিয়েছে আইএসের সঙ্গে। ফলে এই মামলার ক্ষেত্রে এই দুই সংগঠনের যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুরো তদন্তে। তবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহার করে এরা যাতে আমাদের দেশে বেশি জাল ছড়াতে না পারে, সেই চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা।'


সূত্র: এই সময়
 

বিডি-প্রতিদিন/ ২১ আগস্ট, ২০১৬/ আফরোজ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর