চলতি ২০২০ সালে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি বাংলাদেশের চেয়েও কম হতে পারে- এই সপ্তাহে এমন একটি খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এই খবরে ভারতের করোনাকালীন অর্থনৈতিক আঁধারকে আরও চরম হতাশায় পরিণত করেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর এ সংক্রান্ত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রকাশের বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু টুইট করে বলেছেন, “যেকোনও উদীয়মান অর্থনীতি ভাল করছে, সেটি অবশ্যই ভাল খবর।”
“তবে অবাক করে দেওয়ার মতো বিষয় হল পাঁচ বছর আগে যে ভারতের অর্থনীতি ২৫% এগিয়ে ছিল এখন তারাই পেছনে পড়ে যাচ্ছে!”
তুলনামূলক এই অদক্ষতা আত্মবিশ্বাসও কমে দিতে পারে। যদি একটি বৃহৎ-শক্তিশালী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাষ্ট্র তার নিজের ছোট্ট একটি প্রতিবেশি, যাদেরকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধে সহায়তা করে স্বাধীন করেছে- তাদের পেছনে পড়ে যায়, এতে দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে তাদের প্রভাব হ্রাস পেতে পারে।
আসলে ভুলটি কোথায়? এজন্য করোনভাইরাস মহামারীকে অবশ্যই দোষ দেওয়া যায়। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ জুনের মাঝামাঝি সময়ে শীর্ষে পৌঁছেছিল। আর ভারতের দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কেবল এখন কমতে শুরু করেছে। কিন্তু তার আগে অধিকাংশ দেশের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।
১৬৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার বাংলাদেশে করোনায় ৫ হাজার ৬শ’রও কম মৃত্যু নথিভুক্ত হয়েছে। আর ৮ গুণ বেশি জনসংখ্যার দেশ ভারতে বাংলাদেশের চেয়ে করোনায় ২০ গুণেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
সবচেয়ে খারাপ খবরটি হল, আইএমএফ জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ভারতের আরোপিত কঠোর লকডাউন প্রকৃত উৎপাদনের ১০.৩% হ্রাস করে দেবে। এটি করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে যে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, তার চেয়েও প্রায় ২.৫ গুণ বেশি।
আর্থিক সঙ্কট, স্বল্প পুঁজিযুক্ত আর্থিক ব্যবস্থা এবং বহুবর্ষ বিনিয়োগের ভীতি- এসব ভারতের কোভিড পরবর্তী চাহিদা পুনরুদ্ধারকে বিলম্বিত করবে।
আরও খারাপ খবর হল, এমনকি মহামারী না থাকলেও ভারত বাংলাদেশের কাছে হেরে যেতে পারত। পেনসিলভেনিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ শৌমিত্রো চ্যাটার্জী এবং “ভারতের রফতানি-নেতৃত্বের বৃদ্ধি: অনুকরণীয় ও ব্যতিক্রম” শিরোনামে ভারতের প্রাক্তন প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রমনিয়ান একটি নতুন গবেষণাপত্রে এই কারণটি দেখিয়েছেন।
প্রথমে ভারতের প্রবৃদ্ধির ব্যতিক্রমবাদ বিবেচনা করুন। বাংলাদেশ ভালো করছে কারণ এটি পূর্ববর্তী এশীয় টাইগারদের পথ অনুসরণ করছে। এর স্বল্প দক্ষ পণ্য রফতানি দরিদ্র দেশটির কর্মক্ষম বয়স-জনসংখ্যার অংশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
ভিয়েতনামও নিজের ওজন থেকেও কিছুটা উপরে উঠে গেছে। আসলে দুই দেশই চীনের অধ্যায় থেকে শিক্ষা নিচ্ছে। সূত্র: ব্লুমবার্গ
বিডি প্রতিদিন/কালাম