৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:৩৭

দুর্লভ খাটোলেজি বানর শ্রীমঙ্গলে

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল


দুর্লভ খাটোলেজি বানর শ্রীমঙ্গলে

খাটোলেজি বানর আমাদের দেশের বানর প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বিরল প্রজাতির। ১৯৮০ সালে একবার কক্সবাজারে আর দ্বিতীয়বার রাঙামাটিতে এ প্রজাতির বানর দেখা গিয়েছিল। এরপর থেকে দেশে আর কোথাও এই বানরের দেখা মেলেনি। আইইউসিএনের লাল তালিকায় এই প্রজাতিটিকে সংকটাপন্ন হিসেবে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি শ্রীমঙ্গলে একটি বার্ড পার্ক থেকে একটি খাটোলেজি বানর উদ্ধার করে বন বিভাগ। পরে সেটি গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে নিয়ে রাখা হয়েছে। খাটোলেজি বানরের ইংরেজি নাম stump-tailed macaque. আর বৈজ্ঞানিক নাম Macaca arctoides. এরা দক্ষিণ এশিয়ার ম্যাকাকু গণের একটি বানর প্রজাতি। বাংলাদেশে পাঁচ প্রজাতির বানর রয়েছে।

এর মধ্যে রেসার ও উল্টোলেজি বানরটি সচরাচর দেখা যায়। আসামি বানর দেখা যায় পার্বত্যাঞ্চলে। লম্বালেজি বানরও বিলুপ্ত প্রায়। আর খোটোলেজি বানর অনেক বছর ধরেই দেশের কোথাও দেখা যায়নি। তাই প্রাণী বিশেষজ্ঞরা ধরে নেন এই প্রজাতিটি প্রায় বিলুপ্তই হয়ে গেছে। প্রাণী বিশারদরা জানান, খাটোলেজি বানরের শরীর লম্বা। শরীরে ঘন বাদামি রঙের পশম রয়েছে। মুখ ও লেজ ছোট। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের লাল মুখমন্ডল বাদামি বা কালো হয়ে যায়। এ সময় তাদের বেশিরভাগ চুল নষ্ট হয়ে গেছে। এরা সাধারণত চিরহরিৎ গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় আর্দ্র বিস্তৃত বনভূমিতে থাকে। এই প্রজাতির কোনো দীর্ঘস্থায়ী জোড়ার বন্ধন নেই। এদের শারীরিক সহিংসতা খুব কমই ঘটে। এরা গাছে খুব একটা চটপটে নয়। তাই সাধারণত মাটিতে বেশি বিচরণ করে। এদের খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য রেইনফরেস্টের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই বৃষ্টি প্রবল অঞ্চল ছাড়া অন্য কোথাও এদের দেখা যায় না। এরা গহিন বনে বসবাস করে। মাঝে মাঝে জুম খেতে নেমে আসে। তবে মাঝে মাঝে মানব বসতির ধারে কাছে চলে আসে। এরা ফল, বীজ, পাতা এবং শিকড়ের মতো অনেক ধরনের গাছপালা খেয়ে থাকে। এ ছাড়া এদের খাদ্য তালিকায় আছে মিঠা পানির কাঁকড়া, ব্যাঙ ও পাখির ডিম। বাংলাদেশে এই প্রজাতিটি প্রায় বিলুপ্ত। তবে ভারতের কিছু অঞ্চলছাড়া ও বার্মা, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামে এদের পাওয়া যায়। এরা বছরে দুবার বাচ্ছা জন্ম দেয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, ‘এই বানরটি ধরা পড়ার পর আমরা দেখেছি, বনো পরিবেশে কখনো দেখেনি। দেশের বিভিন্ন বনে আমরা খুঁজেছি কোথাও এই প্রজাতির অস্তিত্ব পাইনি। তবে এবার উদ্ধার হওয়া বানরটিকে ওই বার্ড পার্কের মালিক কোথা থেকে এনেছেন যদি এটা জানা সম্ভব হতো তাহলে হয়তো কিছু তথ্য জানা যেত।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর