৯ নভেম্বর, ২০২১ ১৭:৪৯

তুলা চাষে স্বাবলম্বী জুসেন টুডু

মোঃ রফিকুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

তুলা চাষে স্বাবলম্বী জুসেন টুডু

বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল। এখানকার অনেক স্থানের জমি উঁচু-নিচু হওয়ায় সেচ সংকট একটি বড় সমস্যা। এ কারণে ধানচাষ ভালোমতো করতে পারেন না কৃষকরা। তাই ধান বাদে বিকল্প চাষাবাদের দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। এমনি একজন জুসেন টুডু। 

বাড়ি নাচোল উপজেলার পশ্চিম লক্ষণপুর গ্রামে। বাবা রমেস টুডুর ৮ বিঘা জমি থাকলেও সেচ সংকটের কারণে ঠিকমতো ধান চাষও করতে পারতেন না। এই নিয়ে প্রায়শই দুশ্চিন্তায় থাকতেন বাবা। বাবার দুশ্চিন্তায় বিকল্প কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন বর্তমানে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী জুসেন টুডু। আর এই তাগিদ থেকে বরেন্দ্র ভূমিতে শুরু করেন তুলাচাষ, স্বাবলম্বীও হয়েছেন। এখন অন্যকেও স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তুলাচাষে। তবে শুধু তুলা চাষেই থেমে নেই জুসেন। তুলা গাছের ফাঁকে ফাঁকে আম গাছও লাগিয়েছেন। পাশাপাশি চাষ করছেন শাক-সবিজরও। জুসেনের তুলাচাষের শুরুটা অবশ্য চার বছর আগে। 

জানা গেছে, চার বছর আগে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নাচোল অফিসের ইউনিট ম্যানেজার বিশ্বজিত বর্মনের সাথে পরিচয় হয় জুসেন টুডুর। এ সময় তিনি জুসেনকে তুলাচাষে উদ্বুদ্ধ করেন। তার পরামর্শে বাবার ৮ বিঘা জমিতে প্রথম তুলাচাষ শুরু করেন জুসেন টুডু। প্রতি বছর বিঘাপ্রতি তুলা পেয়েছেন ৮ থেকে ১০ মণ করে। বিক্রি করেছেন ২ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে। নাচোল-আড্ডা সড়কের পাশেই পৌর এলাকার মধ্যে কন্যানগর মৌজায় জুসেন টুডুর তুলা বাগান। তুলাচাষের পাশাপাশি একই জমিতে গড়ে তুলেছেন আমবাগানও। এবার আমবাগান বিক্রি করেছেন ৬০ হাজার টাকায়। এছাড়া চলতি মৌসুমে লাল শাক বিক্রি করেছেন ৮ হাজার টাকার। 

জুসেন টুডু বলেন, চার বছর আগে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সার্বিক সহযোগীতায় তুলা চাষ শুরু করেন। প্রথম বছর  প্রায় ৮বিঘা জমিতে ৫৬ মণ তুলা বিক্রি করে পেয়েছিলেন ১লাখ ৩১ হাজার ৬শ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয়েছিল প্রায় এক লাখ ১০ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতি মণ তুলার দাম ৩ হাজার ৪০০ টাকা। আগামীতে তুলার দাম আরো বেশি পাবেন বলে আশা করেন তিনি। 

প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবারো বাম্পার তুলাচাষের আশা তার। জুসেন টুডু বলেন, এ জমিতে আগে ঠিকমতো ধান চাষ হতো না। বর্তমানে এই জমিতে তুলা চাষাবাদ করে পরিবার নিয়ে শান্তিতেই বসবাস করছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, পানি সমস্যার কারণে চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটছে। সমাধানের জন্য এরই মধ্যে দেড় ইঞ্চির একটি বিদ্যুৎচালিত অগভীর নলকূপ বসিয়েছেন জমিতে। 

তবে আক্ষেপ করে তিনি জানান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নলকূপটির কৃষিভিত্তিক বিল না করে বাণিজ্যিকভাবে করায় বেশি টাকা গুণতে হচ্ছে তাকে। এদিকে তার তুলা চাষা দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন বলে জানান তিনি। 

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মেদ বলেন, উচু জমিতে ধান চাষের পরিবর্তে তুলা চাষে ব্যাপক সম্ভবনা রয়েছে। এখানে তুলা চাষাবাদ করলে কৃষকরা উপকৃত হবে সে সাথে চাষে পানিও কম লাগবে বলে জানান তিনি। এদিকে গত ৫ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে জুসেন টুডুর তুলা বাগান পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক আখতারুজ্জামান। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন, রাজশাহী জোনের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোজাদীদ আল শামীম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ তুলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

সর্বশেষ খবর