১৩ নভেম্বর, ২০২১ ১৮:০১

গোমতীর পাড়ে রঙিন মাছের ঝিলিক

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

গোমতীর পাড়ে রঙিন মাছের ঝিলিক

ভর দুপুর। রোদের তেজও বেশ। রোদ থেকে বাঁচতে মাথার উপর রয়েছে রঙিন ছাতা। গোমতী নদীর উত্তর পাড়। পাড়ের কোল ঘেঁষে শতাধিক দল। প্রতি দলে তিন চারজন। হালকা বাতাসে পাড়ের গাছের পাতা নড়লেও তাদের চোখ স্থির। সবার চোখ ছিপের দিকে। 

কুমিল্লা সদর উপজেলার পাঁচথুবী গ্রাম এলাকায় এই দৃশ্য চোখে পড়ে। 

শিকারিদের একজন নুর ইসলাম। বাসা নগরীর সুজানগরে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মাস্টার রোলে কাজ করেন। আজ অবসর, তাই ছিপ নিয়ে বসে পড়েছেন। সকাল ১০টায় বসেছেন। এখন দুপুর ২টা। একটা মাছও তার বড়শির টোপে (খাবার) মুখ দেয়নি। তবু তিনি বিরক্ত নন। ছিপ ফেলে বসে থাকতেও নাকি তার আনন্দ। 

শহরতলীর চান্দপুরের এখলাছ মিয়া। আগে ট্রাক চালাতেন। তার ভাষায়-বয়সকালে (তরুণ) ডিস্টিক চালাইতাম। এহন অটো (ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা) চালাই। শখ কইরা বড়শি নিয়া বইছি। 

আরেকজন চান্দপুরের বাবুল মিয়া। প্লাম্বার মিস্ত্রি। তার বড়শিতে ছোট আকারের মৃগেল মাছ আটকা পড়ে। তা দেখে অন্যরাও আনন্দে হৈ-হৈ করে উঠেন। তারা ছাড়া অন্যরা এসেছেন বুড়িচং, কেউ চান্দিনা, কেউবা চৌদ্দগ্রাম থেকে। 

চৌদ্দগ্রামের কাতালিয়া গ্রাম থেকে শহীদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, আবুল কাসেমসহ ৮ জন এসেছেন। কেউ দুইটি কেউ চারটি মাছ পেয়েছেন। তার মূল্যে তাদের দুপুরের খাবারের টাকারও যোগান হবে না। তবে তারা এসেছেন শখ করে। 

কাতালিয়ার শহীদুল ইসলাম জানান, প্রবাসে ছিলেন। এখন খেত গৃহস্থি দেখেন। কোথাও বড়শি প্রতিযোগিতা হলে চলে যান। গোমতীতে আগেও এসেছেন। তার বড়শিতে ছয় কেজি ওজনের রুইও ধরা পড়েছে। এছাড়া এখানে মৃগেল, কাতলসহ বিভিন্ন মাছ বড়শিতে আটকা পড়ে।

তিনি আরো বলেন, পাউরুটি, পিঁপড়ার ডিম, ছাতুসহ বিভিন্ন সুগন্ধি ব্যবহার করে মাছের টোপ বানানো হয়।

শৌখিন শিকারিরা জানান, নদীর অনেক অংশে পানি নেই। কোথাও গতিপথে পলি জমে গেছে। পাঁচথুবী অংশে একটু পানি থাকায় এখানে বড়শি ফেলা যায়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সহ-সভাপতি ও গোমতী পাড়ের বাসিন্দা অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বলেন, এই গোমতীর পাড়ে আমাদের শৈশব তারুণ্য কেটেছে। যখন নদীতে বেশি পানি ছিল তখন অনেক মাছ পাওয়া যেতো। বড়শি আর জালে রঙিন মাছ খলবলিয়ে উঠতো। এখন নদীর পেট পলিতে ভরাট হওয়ায় পানি কমে গেছে। মাছ কমে গেছে। নদীর পাড় সংলগ্ন চরের উর্বরতা কমে যাওয়ায় কমছে সবজির উৎপাদন। নদীর যৌবন ফিরিয়ে আনতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।   

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

সর্বশেষ খবর