জাহাজ ডুবে বা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সুন্দরবনে দূষণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে পর্যটকের উপস্থিতি। সুন্দরবনে প্রতিদিন বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। প্রতি বছর কয়েক লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন সুন্দরবন। পর্যটকের আনাগোনা যত বাড়ছে ততই বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। পরিবেশ দূষণই এখন সুন্দরবনের জন্য সবচেয়ে বেশি হুমকির কারণ হয়ে উঠছে। বাগেরহাটের শরণখোলা থেকে শুরু করে মোংলা প্রান্ত, সাতক্ষীরা এলাকায় একই পরিস্থিতি। কোথাও পরিবেশ দূষণ আটকানো যাচ্ছে না। পুরো সুন্দরবন এলাকায় গেলেই চোখে পড়ছে নানা ধরনের মনুষ্য ব্যবহৃত জিনিসপত্র। মানব বসতি থেকে কয়েক শ কিলোমিটার দূরে বা গভীর জঙ্গলের মধ্যে গেলেও দেখা যাচ্ছে নানা ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ। এর মধ্যে নানা ধরনের প্লাস্টিক, বোতল, জুতা, পলিথিন, খাবার প্যাকেট, বস্তা, দড়ি, জালের টুকরা, কৌটা, ওষুধের খালি প্যাকেটসহ কাপড়ের জিনিসপত্রে সয়লাব হয়ে থাকছে এলাকা। সম্প্রতি সুন্দরবন ঘুরে দেখা গেছে, মোংলা প্রান্তের করমজল থেকে শুরু করে দক্ষিণে ডিমচর পর্যন্ত সব স্পটেই পরিবেশ দূষণের নানা বর্জ্য পদার্থ। মোংলা বন্দরে বিভিন্ন কারখানায় ব্যবহৃত জিনিসপত্রও দেখা মেলে এসব স্পটে। এই রুটের স্পটগুলো হচ্ছে করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, কটকা বিচ, জামতলা, ডিমচর। নদীর পাড়ে কিংবা সৈকতে শুধু নয়, গভীর জঙ্গলের মধ্যে ঢুকলেও দেখা মেলে নানা ধরনের ক্ষতিকর বর্জ্য। ডিমচর একেবারে বঙ্গোপসাগর লাগোয়া। ডিম্বাকৃতির বলে এই চরটির নাম ডিমচর। এখানে নানা ধরনের পাখি, হরিণের অভয়ারণ্য। হাজার হাজার হরিণের পদচারণ ও পাখির কলতানে মুখরিত থাকে। মোংলা থেকে কয়েক শ কিলোমিটার দূরে পুরো চরটি নদী দ্বারা বেষ্টিত। এখানে স্পষ্ট সূর্যোদয় ও সূর্যগ্রহণ দেখা যায়। এই নির্জন চরের সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, নানা বর্জ্য। এসব বর্জ্যরে মধ্যে প্লাস্টিক বোতল, কাচের বোতল, ওষুধের প্যাকেট, জালের অংশ, প্লাস্টিকে বস্তার সমাহার। ডিমচরের সঙ্গে কোনো ধরনের সংযোগ নেই অন্য স্পটের। বিশাল জলরাশির মাঝে মনে হয় সমুদ্রের মধ্যে একটি সবুজ ডিম। এর কাছাকাছি স্পটের নাম কচিখালী। কচিখালীর চরে গেলে দেখা মেলে নোনা জলের কুমির। কচিখালীর নির্জন সরু খালের মধ্যে ঢুকলে দুই পাশে জঙ্গলের মধ্যেই চোখে পড়ে হরিণের পদচারণ। এই খালের পাড়েও দেখা গেছে বিভিন্ন ধরনের মনুষ্য ব্যবহৃত জিনিসপত্র। কচিখালীর আগে কটকা স্পট। কটকা স্পটে রয়েছে মোবাইল টাওয়ার। এখানে সহজে দেখা মেলে বাঘের। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে যে কেউ বাঘ দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেন। রয়েছে হরিণের পাল। অন্যান্য স্পটের তুলনায় এখানে সবচেয়ে বড় হরিণের পালের দেখা মেলে। পুরো কটকা স্পটেই দেখা গেছে চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক দ্রব্য। কোনো ভ্রমণ ক্রুজ বা জাহাজ থেকে এসব ফেলা হয় না বলে জানান ক্রুজের কর্মীরা। বিষয়টি রেঞ্জ কর্মকর্তাও স্বীকার করেন। রেঞ্জ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেলে, মধু আহরণকারী, গোলপাতা সংগ্রহকারী, ছন সংগ্রহকারীরা বেশি অসচেতন। যদিও সব সময় তাদের সচেতন করা হয়। সুন্দরবনে ঢোকার সময় অনুমতিপত্রে নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে কোনো বর্জ্য না ফেলতে সতর্ক করা হয়। এরপরও তারা এখানে এসব ফেলে। এগুলোর বেশির ভাগ ভেসে আসে মোংলা থেকে। মোংলার বিভিন্ন এলাকায় কাজ করেন হাজার হাজার শ্রমিক ও স্থানীয়রা। তাদের ফেলা বর্জ্যই কয়েক শ কিলোমিটার পর্যন্ত ভেসে যায়। দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে করমজল স্পটে। এই স্পটে হরিণ, কুমির ও কচ্ছপের প্রজনন কেন্দ্র। একই সঙ্গে পর্যটকদের ভিড়ও বেশি। সরকারের করা ইকোপার্ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে করমজল। করমজলে রয়েছে হকার।
যারা চিপস, চা, পান, সিগারেট, বাদামসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে থাকেন। আর এসব পণ্যের সব বর্জ্য চলে যায় নদীতে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল