১০ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৮:৪১

বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের হাসি

নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি

বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের হাসি

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় নীল আকাশের নিচে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে হলুদ সরিষা ফুল। সকালের সূর্যের কিরণ প্রতিফলিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই সরিষা ফুল সমারোহে হেসে ওঠে চারদিক। হলুদ ফুলে ফুলে মৌমাছিরাও মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে। প্রকৃতির অলঙ্কার হয়ে উঠেছে হলুদ সরিষা ফুল।

 
উপজেলা কৃষি অফিস ও এলাকাবাসী জানায়, উপজেলায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৫৫ হেক্টর সরিষার আবাদ হয়েছিল। বর্তমান সরকারের কৃষকবান্ধব কর্মসূচিতে ২০২১-২২ অর্থবছরে সরিষার আবাদ হয়েছে ৮০৭ হেক্টর। গত বছরে পতিত থাকা ৫২ হেক্টর জমি সরিষা আবাদের আওতায় এসেছে। যা নালিতাবাড়ি উপজেলার শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একই জমিতে বছরে একাধিক আবাদ করার লক্ষে কৃষিতে সকল ফসলের প্রণোদনার অংশ হিসেবে সরিষা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ, ১৭৫০ জন কৃষকের মাঝে সরিষার উফশী জাতের বীজ এবং ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বিতরণ করা হয়। উল্লিখিত পরিমাণ উপকরণ সহযোগিতা ১ জন কৃষক ১ বিঘা জমি সরিষা চাষের জন্য গ্রহণ করেছেন। সরিষা চাষ বাড়ার আরেকটি কারণ সরিষা ক্ষেতে মৌচাষ। জমির পাশেই বাক্স বসিয়ে মৌচাষ হচ্ছে দেশের কয়েকটি এলাকায়। মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। এতে মধু চাষের পাশাপাশি সরিষার উৎপাদনও বাড়ছে। সরিষা ও মৌচাষি উভয়েই লাভবান হচ্ছেন।

সরেজমিন সরিষা জমিতে দেখা যায়, পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি রোদে সরিষা ফুলগুলো বাতাসে দোল খেতে থাকে। ফুলগুলো তাদের কলি ভেদ করে সুভাস ছড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকে। এ যেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিনোদন প্রেমিরা। সরিষা মাঠ ঘুরে ঘুরে দেখছেন তারা। কেউবা আবার  সেলফি তুলছেন।

মরিচপুরান গ্রামের মো.ইউনুছ আলী (৪০) বলেন, সরিষা চাষ করতে প্রতি একরে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর ২০-২২ মণ সরিষা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক মণ সরিষা বর্তমান বাজার মূল্য রয়েছে দুই হাজার সাতশত থেকে তিন হাজার টাকা। সরিষা চাষে যে সার আমরা ব্যবহার করি, পরবর্তীকালে বোর ধান রোপনের সময় সার বেশি দেওয়া লাগে না। এতে আমাদের খরচ কিছুটা কমে যায়। 

একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে বারি ও বিনার উদ্ভাবিত সরিষার জাতগুলোর ফলন বেশি। এ কারণে এতে চাষিরাও আগ্রহী হচ্ছেন। অনেকেই আমন ধান সংগ্রহের পর জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষ করছেন। এরপর আবার বোরো ধান রোপণ করতে পারছেন। এতে একই জমিতে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আলমগীর কবীর বলেন, ৮০৭ হেক্টর জমিতে আবাদকৃত সরিষা কর্তন করে কৃষক পুনরায় ওই জমিতে বোরো রোপন করবে। গত বছরে ২২৭৫৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছিল। এবছর বোরো আবাদ বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা যায়। ভোজ্যতেলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার সরিষা, তিসি, সূর্যমুখীসহ অন্যান্য তেলজাতীয় শস্য আবাদের ক্ষেত্র সম্প্রসারণে উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। 


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

সর্বশেষ খবর