১৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ২১:২৪

চরের মাটিতে সবুজ পাতায় হলুদ ফুলে মিষ্টি কুমড়ার বিপ্লব

আবদুর রহমান টুলু,বগুড়া

চরের মাটিতে সবুজ পাতায় 
হলুদ ফুলে মিষ্টি কুমড়ার বিপ্লব

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর ধু ধু চরের জমি এখন সবুজের হাত ছানি দিয়েছে। যতদূর চোখ যায় যেন সবুজ পাতায় ছেয়ে আছে চরের মাটি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা চরের জমিতে সবুজ ফসল ফলিয়ে বিপ্লব ঘটিয়েছে। চরের মাটিতে বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি এবার মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে ভাল ফলনের স্বপ্ন বুনে রেখেছে। চরের মাটিতে সবুজ পাতায় হলুদ ফুল ফুটে আছে। পাতার ডাটায় ধরে আছে সবুজ মিষ্টি কুমড়া। চাষের পর ভাল ফলন হতে যাওয়ায় চাষিরা বেশ খুশি। এখন বাজার ব্যবস্থায় ভালো দাম পেলে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন চরের চাষিরা।

জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলাটি যমুনা নদী দিয়ে ঘেরা। প্রতি বছর ভাঙ্গনের ফলে বেশিরভাগ সমতল এলাকা নদী বক্ষে হারিয়ে গেছে। প্রতিবছর বন্যায় ভাঙ্গন দেখা দেওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এলাকার বাসিন্দারা। একদিকে বন্যায় সব হারিয়ে নিস্ব হয় আবার অপর দিকে বন্যার পলিপড়া জমিতে চাষ করে নিজেদের ভাগ্য ফেরানোর লড়াইয়ে নামে। বন্যার পানি নেমে গেলে জেগে ওঠা চরে ফসল ফলিয়ে যাচ্ছে চরের চাষিরা। চাষকৃত ফসল স্থানীয় হাটে বাজারে বিক্রি করে টিকে থাকার লড়াইয়ে নামে। চর মানে এখন আর ধুধু বালুচর না।

বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি ফসল ফুল ফলে ভরে ওঠা একটি সবুজ চর। যমুনা নদীর তীরবর্তী চরগুলোতে এখন কম খরচে অধিক ফসল হয় বলে চরের কৃষকরা সে দিকে ব্যস্ত সময় পার করছে। যমুনা নদীর চরগুলোকে এখন ভোর থেকে কাজ শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। নদীতে পানি কম থাকায় সেচ দিয়ে চাষবাস করে যাচ্ছে চাষিরা। চরের কৃষকরা পতিত চর আর ফেলে রাখছে না। গত বছরগুলোর ন্যায় এবছরও হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষ করে লাভের স্বপ্ন দেখছেন।

গত বছরগুলোর তুলনায় এবছর হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া চায়ে তারা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ফেলেছেন। দেশি মিষ্টি কুমড়ার চেয়ে হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়ার ফলন বেশি। হাইব্রীড গাছে ২০ থেকে ২৫টি করে মিষ্টি কুমড়া পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে সারিয়াকান্দি সদর এবং হাটশেরপুর ইউনিয়নে। হাটশেরপুর ইউনিয়নের নিজবলাইল পশ্চিমপাড়া এবং উত্তর বেণীপুর চরের বাটুল মেম্বার, এনামুল, রাসেদ, জাফর, শাহিন, হান্নানের ক্ষেতের মিষ্টি কুমড়ার ফলণ ধরেছে। 

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কুদরত আলী জানান, এ বছর হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯০ হেক্টর যা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। সাধারণত অক্টোবর নভেম্বর মাসে মিষ্টি কুমড়া জমিতে বপন করা হয়। বপন করার ৪০ থেকে ৫০ দিন পর গাছে ফুল আসে। এরপর ফল পাওয়া যাবে। ফলগুলো কাঁচা অবস্থা থেকেই খাওয়া যায় এবং বিক্রয় করা হয়। তবে পাকা ফলগুলো সংগ্রহের উপযোগী হয় বপনের ৮০ থেকে ৮৫ দিন পরে। মার্চ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত পাকা ফসল সংগ্রহ করা হয়।

কৃষক বাটুল মেম্বার জানান, এ বছর স্বল্পমেয়াদী বন্যার কারনে জমির মাটি আগেভাগেই জো এসেছে ফলে আমরা আগামভাবে জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চারা রোপন করেছি। গাছের তেজ এবং ফুলের কুঁড়ি দেখে মনে হচ্ছে এবার আমরা বাম্পার ফলন পাব।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি পৌরসভার চরবাটিয়ার কৃষক আবু সাঈদ জানান, গত বছর ভাল লাভ পেয়ে সে এ বছর আগামভাবে সাড়ে ৮ বিঘা পতিত জমিতে হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছে। জমিতে তার কয়েকশত কাঁচা মিষ্টিকুমড়া বিক্রয়ের জন্য উপযোগী হয়েছে। বিক্রয়ের জন্য পাইকারদের সাথে দরকষাকষি চলছে। বাজারে প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা করে খুচরা বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি মিষ্টি কুমড়ার ওজন আড়াই থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত হয়েছে। 

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আব্দুল হালিম জানান, একবিঘা জমিতে ধান হতে কৃষকের যা আয় হবে মিষ্টি কুমড়া হতে তার কয়েকগুণ বেশি আয় হবে। গত বছর হেক্টর প্রতি এর ফলন হয়েছিল ২০ থেকে ২৫ টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রোগবালাই এর সঠিক চিকিৎসা করলে এ বছর ফলন গত বছরের তুলনায় বেশি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর চরে চাষকৃত মিষ্টি কুমড়ার বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, সিলেটে। পাইকাররা বগুড়া মহাস্থানহাট থেকে মিষ্টি কুমড়া কিনে ট্রাক যোগে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায়। ঢাকাসহ উল্লেখিত জেলায় চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় মিষ্ট কুমড়ার চাষিরা চাষ করে হাটে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/এএ

সর্বশেষ খবর