১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৮:২৯

রাঙামাটিতে বিলাতি ধনিয়ার বাম্পার ফলন

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

রাঙামাটিতে বিলাতি ধনিয়ার বাম্পার ফলন

রাঙামাটিতে বিলাতি ধনিয়া পাতার বাম্পার ফলন হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে উৎপাদিত এ বিলাতি ধনিয়া পাতার গন্ধ কড়া। পাতা চ্যাপ্টা, সবুজ ও ভারি। দু'পাশে খাজকাটা, দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। সাধারণত এ গাছের পাতা ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার ও চ্যাপ্টায় দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এক বার বীজ বুনলে বেঁচে থাকে কয়েক বছর। তাই বার বার ফলন সংগ্রহ করা যায়। গাছগুলো পর্যাপ্ত বড় হলে কৃষকরা ছোট ছোট আঁটি বেঁধে রাজারজাত করে। পাহাড়ে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাহিদা অনেক। তাই লাভবান হচ্ছে বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষীরা। কম খরজ, অধিক ফলন, বেশি লাভ। তাই বিলাতি ধনিয়া চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদেরও। 

রাঙামাটি কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি জেলায় প্রত্যন্ত দূর্গম উপজেলা সাপছড়ি, কাপ্তাই, ওয়াগ্গা, তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া ও শীলছড়ি মারমা পাড়া ও রাঙামাটি সদর উপজেলা মগবানসহ বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় বিলাতি ধনিয়ার ব্যাপক চাষ হয়েছে। এ বিলাতি ধনিয়াপাতা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেক কৃষক পরিবার। পাহাড়ের আনাচে-কানাচে, ঢালে ও পাদদেশে বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষ করেছে চাষীরা। ফলনও হয়েছে বাম্পার। এ পাতা চাষ করে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা অর্জন করেছেন অনেক কৃষি পরিবার। স্থানীয় বাজারে পাহাড়ে উৎপাদিত বিলাতি ধনিয়ার চাহিদা অনেক। অধিক ফলনের কারণে ক্রেতাদের জন্য বিলাতি ধনিয়া দাম যেমন সহনশীল, তেমনি চাষিরাও ভালো দাম পাচ্ছে। উচ্চ বাজারমূল্যে ও অধিক আয়ের কারণে রাঙামাটিতে বাড়ছে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ। 

একটা সময় পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে শুধুমাত্র তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ করতো। কিন্তু কালের পরির্বতনে আগ্রহ বেড়েছে অন্যান্য সম্প্রদায়ের কৃষকের মধ্যেও। তাই রাঙামাটিতে সব মৌসুমে পাওয়া যাচ্ছে বিলাতি ধনিয়া পাতা। 

রাঙামাটির সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সোনারাম কার্বারী পাড়ার কৃষি উদ্যোক্ত সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা জানান, অল্প পুঁজি, বেশি লাভ। বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি চাষ করা যায় এ বিলাতি ধনিয়া পাতা। সহজ পদ্ধতিতে চাষ করা সম্ভব। তাই কৃষকদের মধ্যে চাষের চাহিদা বাড়ছে। এবার আমি ২ একর জমিতে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ করেছি। ফলন ভালো হলেও উৎপাদন খরচ অনুযায়ী বাজার মূল্য অনেকটাই কম। তাছাড়া ছত্রাকের আক্রমণের অনেক ধনিয়া পাতা নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও লোকসান নেই। এখন পর্যন্ত ৫০হাজার টাকার ধনিয়া পাতা বিক্রি করেছি। 

অন্যদিকে, রাঙামাটি কৃষি বিভাগ বলছে, শীতের আগে অতিরিক্ত তাপদাহের কারণে বিলাতি ধনিয়া পাতায় যে রোগ দেখা দিয়েছে তা ছত্রাকজনিত। এ সমস্যা সমাধানে ইতিমধ্যে কৃষিবিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে বিলাতি ধনিয়া চাষীদের। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া উপযুক্ত থাকায় বিলাতি ধনিয়া চাষে সফলতা এসছে। তাছাড়া ফলনও ভালো হয়েছে। পাহাড়ের মাটি বিলাতি ধনিয়া চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, বিলাতি ধনিয়া পাহাড়ি এ অঞ্চলে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। পাহাড়ের কৃষাণ-কৃষাণীরা যাতে বিলাতি ধনিয়া চাষ করে যাতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে, সেজন্য রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করছে। তাছাড়া এ ধনিয়াতে তেমন কোন রোগবালাই দেখা যায় না। একটু যত্নবান হলে ফলন ভালো পাওয়া যায়। গত পাঁচ বছরের রাঙামাটিতে ২৫০ হেক্টর জমির অধিক বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ হয়েছে। সামনে এ চাষ আরও বাড়তে পারে। 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর