১০ জানুয়ারি, ২০২২ ১৭:২৬

ইউটিউব দেখে কমলালেবু চাষ করে সাড়া ফেলেছেন কলেজছাত্র

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

ইউটিউব দেখে কমলালেবু চাষ করে সাড়া ফেলেছেন কলেজছাত্র

কলেজছাত্র রিফাত হোসেন।

সারি সারি চায়না কমলালেবু গাছ। গাছের সবুজ পাতার রঙ ছাপিয়েছে যেন হলুদ কমলালেবু। সবুজ পাতার মধ্যে হলুদ ফলের উঁকি যেকারও দৃষ্টি কাড়ে নিঃসন্দেহে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াবাকড়ি গ্রামে গেলে দেখা মিলবে এই দৃশ্যের। ইউটিউব দেখে চায়না কমলালেবু চাষ করে সাড়া ফেলেছেন ওই এলাকার কলেজছাত্র রিফাত হোসেন।

সুস্বাদু এই ফলের ভারে নুয়ে পড়ার মতো অবস্থা প্রতিটি গাছের। যা দেখতে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে উৎসুক মানুষ। বাগান দেখে মুগ্ধতার শ্বাস ফেলছেন তারা। থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা রসে ভরপুর গাঢ় কমলা রঙের সুমিষ্ট লেবু কিনছেনও অনেকেই।

৩ বছর আগে ইউটিউবে কমলালেবুর চাষ দেখে নিজের ১ বিঘা জমিতে দেড়’শ চারা রোপণ করেন সদর উপজেলার পোড়াবাকড়ি গ্রামের কলেজছাত্র রিফাত হোসেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে নিয়মিত পরিচর্যা আর পরিমিত সারের ব্যবহার করে এই বছর ফলন পেতে শুরু করেছেন তিনি। ফলন আর দাম ভালো পেয়ে লাভের মুখ দেখছেন রিফাত।

হাটগোপালপুর থেকে কমলাবাগান দেখতে আসা শাহরিয়ার নাজিম জনি জানান, আমি পার্শ্ববর্তী হাটগোপালপুর থেকে আসছি। ফেসবুক থেকে বাগানটা সম্পর্কে জানতে পারছি। তাই এখানে বেড়াতে আসলাম। বাগানটা দেখতে খুবই সুন্দর এবং কমলাগুলো খেতে খুব সুস্বাদু। বাইরের কমলার থেকে আমাদের এখানে যে কমলা চাষ হচ্ছে, সেটা অনেক মিষ্টি। এই বাগানে এসে আমি চার কেজি কমলা কিনেছি।

শৈলকুপা থেকে কমলাবাগান দেখতে আসা সাইফুল ইসলাম জানান, ফেসবুক থেকে জানতে পারলাম পোড়াবাকড়ি গ্রামে আমাদের এক ভাই কমলা বাগান করেছে। এসে দেখে প্রাণটা জুড়িয়ে গেলো। আর এই ন্যাচারাল খাবার খাওয়ার মজাই আলাদা। তাছাড়া আমি আসছি এ ধরনের একটা বাগান করার পরিকল্পনার জন্য। তার কাছে কিছু পরামর্শ নেওয়ার জন্য আসছি।

বাগানি রিফাত হোসেন জানান, নেট ঘাটতে ঘাটতে দেখি আমাদের দেশে চায়না কমলার চাষ হচ্ছে। তারপর শুরু করলাম চায়না কমলা চাষ। এর ফলনও খুব ভালো হচ্ছে। ওইখান থেকে দেখলাম একটা গাছে ৩০ থেকে ৪০ কেজি ফল পাওয়া যাচ্ছে। এরপর থেকে আমি কিছু চারা সংগ্রহ করে এক বিঘা জমিতে চাষ শুরু করলাম। আমার চারার জন্য খরচ হয়েছিল ২২ হাজার টাকা এবং লোকজন দিয়ে লাগানোর পর ফল ধরার আগ পর্যন্ত খরচ হয় ৩৫ হাজার টাকা। তারপর ৩ বার সার দিয়েছি। গত ফেব্রুয়ারিতে গাছে ফল ধরছে। আমাদের গাছে যে ফল ছিল, তা এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। আশা করা যায়, বাজার ভালো থাকলে আরও ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার ফল বিক্রি করতে পারবো।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম বলেন, আমাদের এখাকার মাটি চায়নিজ কমলালেবু তৈরির উপযোগী। গত ৩ বছর আগে কলেজছাত্র রিফাত হোসেন আমাদের সহযোগিতায় ১ বিঘা চায়না কমলার বাগান করেছে। এবছর সে বাগানে প্রচুর পরিমাণ ফল দেখতে পারছি। আমরা বাইরের দেশের আমদানিকৃত ফলের সাথে যদি তুলনা করি, তাহলে তাদের থেকে গুণগত মান কোনো অংশে কম নয়। যদি আমরা ভলো করে পরিচর্যা করতে পারি, তাহলে এর গুণগত মান আরও বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবো। লেবু জাতীয় ফলের জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি ফলন ভালো পেতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিনিয়িত দেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তি, নানা পরামর্শ ও সহযোগিতা।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

সর্বশেষ খবর