১১ জানুয়ারি, ২০২২ ১৭:৫০

ঘোড়া দিয়ে চাষ করে জীবিকার চাকা ঘোরাচ্ছেন নজু

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

ঘোড়া দিয়ে চাষ করে জীবিকার চাকা ঘোরাচ্ছেন নজু

ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি প্রাচীনতম একটি বাহন। একসময় ওই বাহন অর্থাৎ ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে রাজা-বাদশাহরা দেশ শাসন করতেন। যুদ্ধ ক্ষেত্রেও ঘোড়া ব্যবহার হতো। আবার আদিকাল থেকেই কৃষিকাজে ঘোড়ার ব্যবহার হয়ে আসছে। ঘোড়ার পাশাপাশি গরু-মহিষও ব্যবহার হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের হাল আজ বিলুপ্তির পথে। এরপরেও ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগীতা, ঘোড়া গাড়ির সৌখিনতার কথা সবাই জানে। 

কিন্তু ডিজিটালের এ যুগে বর্তমানে ঘোড়া দিয়ে জমিতে হাল চাষ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ঈসবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নগর গ্রামের ছাকাপাড়ার মো. নজরুল ইসলাম ওরফে নজু (৫০)। 

বর্তমানে গরু-মহিষের হাল তেমন আর চোখে পড়ে না। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে কৃষিক্ষেত্রে এসেছে আমুল পরিবর্তন। কৃষকরা পশু দিয়ে চাষাবাদ না করে উন্নতমানের যান্ত্রিক প্রযুক্তির সাহায্যে জমি চাষ করছেন। তবে প্রযুক্তির এ যুগেও ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ অকল্পনীয়। আর এ কাজটিই করছেন চিরিরবন্দরের দক্ষিণ নগর গ্রামের ছাকাপাড়ার মো. নজরুল ইসলাম ওরফে নজু। তিনি ১ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক। 

ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। তারাও পৃথক। তার নেই নিজস্ব কোনো জমি। জীবিকা নির্বাহে তার একমাত্র ভরসা দু’টি ঘোড়ার একটি হাল। এ ঘোড়ার হাল দিয়েই তিনি ঘোরাচ্ছেন তার জীবিকার চাকা। বর্তমানে তিনি তার ঘোড়ার হাল দিয়ে ইরি-বোরো জমিতে চাষাবাদ করছেন। ঘোড়া দিয়ে তিনি প্রতিবিঘা এক চাষে ৫০০ টাকা করে নেন। 

নজরুল ইসলাম ওরফে নজু বলেন, প্রতিদিন ভোর থেকে সকালের নাস্তা খাওয়া পর্যন্ত ১-২ বিঘা জমি চাষ করা যায়। এছাড়াও অন্য সময়েও হালচাষ বা জমিতে মই দেই। এতে আমার এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হয়। প্রতিদিন ঘোড়ার খাবার খরচ ৫০০ টাকা। হালচাষ বা জমিতে মই দিয়ে যা পাই তা দিয়ে সংসার ভালোই চলে। 

তিনি আরো বলেন, ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ ও মই দেয়ার জন্য প্রতিদিন তার ঘোড়ার হালের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে অনেক কৃষক জমিতে কলের লাঙল, পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করে থাকেন। কিন্তু যান্ত্রিক উপায়ে খরচ বাড়ায় এবং মই দেয়া নিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে আমার ঘোড়া দিয়ে চাষে অনেকটা স্বস্তি পেয়েছেন কৃষকরা। 

কৃষক আবুল কাশেম ও বাবলুর রহমান বাবলু জানান, তাদের এলাকায় বড় কোনো গরু-মহিষ নেই। নজুর ঘোড়া দিয়েই তাদের জমিগুলোতে মই দিতে হয়। এতে খরচও কম লাগে। 

চিরিরবন্দর সরকারি ডিগ্রি কলেজের ছাত্র মো. সাব্বির রুম্মান বলেন, শখের বসে ঘোড়া পালন করেন। সৌখিন মানুষরা ঘোড়ার গাড়িতে বসে সময় কাটাতেও পছন্দ করেন। মালামাল টানতেও ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার হয়। কিন্তু ঘোড়া দিয়ে জমিতে হাল চাষ করা তেমন একটা দেখা যায় না।   

চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা জানান, কৃষকরা এখন যান্ত্রিক উপায়ে জমিচাষ করেন। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘোড়ারগাড়িও উঠে গেছে। ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ করা দুর্লভ একটা বিষয়। তিনি নিজের প্রয়োজনে বাড়তি আয়ের জন্য এই ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ বা মই দেন। তবে কৃষি বিভাগ সর্বদা আধুনিক মানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে চাষাবাদ করার জন্য কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছে। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

সর্বশেষ খবর