১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২০:৩৪

আবহাওয়া তথ্য বোর্ড থাকলেও পূর্বাভাসের খবর পায় না চাষিরা

মাদারীপুর প্রতিনিধি

আবহাওয়া তথ্য বোর্ড থাকলেও পূর্বাভাসের খবর পায় না চাষিরা

মাদারীপুরের ৫টি উপজেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও কৃষি বিষয়ে চাষিদের আগাম তথ্য দিতে আবহাওয়া তথ্য বোর্ড ও স্বয়ংক্রিয় রেইনগজ স্থাপন করা হয়। স্থাপনের ৪ বছর পরেও কৃষকদের তা কোনো কাজে আসছে না। ৪ বছরেও পূর্ণাঙ্গ চালু না হওয়ায় ভেস্তে যাচ্ছে সরকারি উদ্যোগ। 

কৃষিকে ঝুঁকিমুক্ত করতে চাষিদের আগাম পূর্বাভাস সুবিধা তো দূরের কথা, নষ্ট হচ্ছে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা লাখ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি। কোথাও কোথাও খসে পড়ছে। মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগের বিষয়ে সচেতনতা বাড়িয়ে খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন ফসল রক্ষায় চাষিদের আগাম তথ্য জানাতে স্থাপন করা হয়েছিল রেইনগজ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতিকরণ প্রকল্পের আওতায় জেলার ৫টি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় চত্বরে বসানো হয় আবহাওয়া তথ্য বোর্ড। এ জন্য প্রতিটি ইউনিয়নের অনুকূলে কৃষি অফিসে দেওয়া হয় আনুষঙ্গিক বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। তথ্য বোর্ডের মাধ্যমে চাষিদের প্রতিদিনের খরা, ঝড়-বৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, দাবদাহ, শীত, কুয়াশা, বন্যাসহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়ে আগাম তথ্যসেবা দেওয়ার কথা। আবহাওয়া কবে কেমন থাকবে এবং চলতি ফসলের জন্য তা কতটা উপকারী- এসব বিষয় কৃষকরা এ তথ্য বোর্ডের মাধ্যমে জানতে পারবেন। আগাম তথ্যের ভিত্তিতে তারা ফসল রক্ষায় প্রস্তুতি নিতে পারবেন। কিন্তু দীর্ঘ ৪ বছরেও এ তথ্য বোর্ড চালু না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন চাষিরা। 

তবে কি পরিমান অর্থ ব্যয় হয়েছে এই প্রকল্পে তার সঠিক তথ্য নেই মাদারীপুর কৃষি বিভাগে। সরেজমিনে কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নে গিয়ে কার্যালয়ের সামনে আবহাওয়া তথ্য বোর্ড দেখা গেছে। তবে বোর্ড হালনাগাদ করা হয় না দীর্ঘদিন। বোর্ডের একাংশ খুলে গেছে। মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের মাদ্রা বাজারে দেখা গেছে আবহাওয়া তথ্য বোর্ড একটি সারের দোকানের পেছনে পড়ে আছে। এরকম চিত্রই অধিকাংশ ইউনিয়নে। এই প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে না কৃষকরা। দীর্ঘদিন পড়ে থেকে নষ্ট হতে বসেছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। 

স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেন, ‘সরকার এমন একটি প্রকল্প হাতে নিলেও অধিকাংশ কৃষকরা জানে না এ ব্যপারে। তাদের কেউ অবগতই করেনি।’ 

মাদারীপুর সদর উপজেলার মাদ্রা এলাকার কৃষক রাকিব সরদার বলেন, ‘আগে থেকে আবহাওয়ার সংবাদ জানতে পারলে আমাদের অনেক উপকার হতো। কিন্তু তা জানার ব্যবস্থা নেই।’ 

সদর উপজেলার শ্রীনদী এলাকার কৃষক সুবোধ শীল বলেন, ‘সরকার এমন একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছে অথচ আমরা জানি না।’ ডাসার এলাকার কৃষক তুহিন শরীফ বলেন, ‘খরা, ঝড়-বৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, দাবদাহ, শীত, কুয়াশার তথ্য যদি আগে পেতাম তাইলে আমাদের ক্ষতি হত কম। কিছুদিন আগে বৃষ্টিতে আমাদের আলু ক্ষেতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আগে জানলে বৃষ্টির পানি নিস্কাশনের প্রস্তুতি নিতাম।’

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোয়াজ্জেল হোসেন বলেন, 'ঢাকা থেকে এসে যন্ত্রপাতি লাগিয়ে গেছে কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। তাই রেইনগজ পুরোপুরি চালু করা যাচ্ছে না।' ঢাকা থেকে এসে এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করায় কি পরিমান অর্থ ব্যয় হয়েছে তার সঠিত তথ্যও নেই বলে জানান তিনি।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর