১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৯:৩৩

তেঁতুলিয়ায় বিষমুক্ত সবজি চাষ

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

তেঁতুলিয়ায় বিষমুক্ত সবজি চাষ

রাসায়নিক সার ও কিটনাশক ব্যবহার করে শাক সবজি উৎপাদন করে কৃষক সাময়িক লাভবান হলেও সাধারণ মানুষের বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। চিকিৎসকরা বলছেন এসব শাক সবজি খেয়ে নানা রকমের রোগ বালাই সৃষ্টি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের এই দিকটি বিবেচনা করে সরকার নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। এর ফল স্বরুপ উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বিষমুক্ত সবজি চাষ করে সফল হয়েছেন চাষিরা। স্বাস্থ্য সম্মত এই সবজির চাহিদাও বাড়ছে। রাসায়নিক সার ও কিটনাশক ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায়ে সবজি উৎপাদনের জন্য চাষিদের মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। কৃষকদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে কৃষক ক্লাব। ক্লাবের মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে চাষিরা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে বিষমুক্ত সবজি চাষ করছেন। এই সবজি বিক্রির জন্য তেঁতুলিয়া বাজারে গড়ে তোলা হয়েছে বিষমুক্ত সবজির দোকান।

পরিবেশবান্ধব এই সবজি উৎপাদনে সহযোগিতা করছে তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর। এই দপ্তরের উপসহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মোতালেব হোসেন জানান, ২০১৮ সাল থেকে তেঁতুলিয়ায় বিষমুক্ত সবজি চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য প্রান্তিক কৃষকদেরকে সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কৃষক মাঠ স্কুল নামের এই প্রতিষ্ঠান কৃষকদের বাড়িতেই পরিচালনা করা হয়। নির্দিষ্ট গ্রামের চাষিরা পরিবেশ বান্ধব সবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরাই একটি ক্লাব গঠন করেন। তারা নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে থাকেন। 

জানা গেছে এ পর্যন্ত উপজেলার ৫ শতাধিক সবজি চাষিকে কৃষক মাঠ স্কুলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এবছর রবি মৌসুমে দেড়শ কৃষক প্রায় ২’শ বিঘা জমিতে বিষমুক্ত পরিবেশ বান্ধব সবজি চাষ করেছে। এসব সবজি ক্ষেত থেকে প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন পরিবেশ বান্ধব সবজি উৎপাদন হয়েছে। কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় তেতুলিয়ায় এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

চাষিরা বলছেন এসব সবজি উৎপাদনে রাসায়নিক সারের বিপরিতে জৈব সার ব্যবহার করছেন। জৈব সার উৎপাদনে তারা গোবর, গাছের লতা পাতা ব্যবহার করে কম্পোষ্ট সার তৈরী করেন। কিটনাশকের পরিবর্তে তারা জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করছেন। তারা বলছেন এসব বালাই নাশক নিজেরাই তৈরী করেন তারা। পেয়াজ রসুনের নির্যাস, ভাট ফুলের নির্যাস,নিম পাতার নির্যাস সহ আরও অনেক ধরনের উদ্ভিত থেকে তারা নির্যাস তৈরী করে সবজি খেতে স্প্রে করে থাকেন। পোকা মাকড়ের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য তারা হাত জাল ব্যবহার করেন। ফোরমোন ফাঁদে স্ত্রী পোকার গন্ধ যুক্ত করেন। এই গন্ধ পেয়ে অন্যান্য পোকারা এই ফাঁদে আটকে যায়। 

চাষিরা বলছেন. পরিবেশ বান্ধব সবজি উৎপাদনে খরচ কম। ফলনও ভালো হয়। এবছর লালশাক, ডাটাশাক, সীম, মরিচ, পেয়াজ, রসুন, বেগুন,ফুল কপি, বাঁধা কপি, লাউ, মিষ্টিকুমড়ো, সহ আরও নানা ধরনের সবজি উৎপাদন করছেন।  এসব সবজি উৎপাদন করে তারা নির্ধারিত দোকানে পৌছে দেন । বিষমুক্ত সবজি চাষে শুধু পুরুষরা নয় নারী কৃষকরাও এগিয়ে এসেছে। তারা সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি বাড়ির আশপাশে এবং আঙিনা জুড়ে নানা ধরনের সবজি উৎপাদন করছেন। 

মাগুড়া গ্রামের চাষি মুন্নি বেগম ( ২৭ ) জানান, কৃষক মাঠ স্কুলে প্রশিক্ষণ নিয়ে এবার বাড়ির পাশের ১০ শতক জমিতে লাউ এবং মিষ্টি কুমড়ো চাষ করি। আমার ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। আমি কোন রাসায়নিক সার ব্যবহার করিনি। আমার নিজের পোষা ছাগল গরুর গোবর ব্যবহার করেছি। আর ভাটগাছের পাতা থেকে রস বানিয়ে গাছে ছিটিয়েছি। দর্জিপাড়া গ্রামের হালিম উদ্দিন জানান, পরিবেশ বান্ধব বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে খরচ অনেক কম। তাই লাভ বেশি। 

তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করার জন্য সবজি চাষিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তাদের সংগঠিত করে গ্রামে গ্রামে কৃষক ক্লাব গঠিত হচ্ছে। এতে তারা নিজেরা সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য কৃষকরাও নিরাপদ সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর