২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৬:০৬

বগুড়ায় ত্বীন ফল চাষে সফলতা

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় ত্বীন ফল চাষে সফলতা

ত্বীন ফল চাষে সফল তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোয়েব সাদিক নবীন।

প্রতিটি পাতার গোড়ায় গোড়ায় সবুজ ত্বীন ফল, যা পাকা শুরু হয়েছে, এখন লাল খয়েরি বা মেরুন রং ধারণ করছে। বাগান থেকেই প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে মরুর দেশের এই ফল। এরই মধ্য দিয়ে বগুড়ায় প্রথমবারের মত বাণিজ্যিকভাবে মধ্যপ্রাচের ত্বীন ফল চাষে সফল হয়েছেন সিঙ্গাপুর ফেরত তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোয়েব সাদিক নবীন।

ত্বীন দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুতে চাষাবাদের উপযোগী তা প্রমাণ করেছেন শাজাহানপুরের কৃষি উদ্যোক্তা। তার এ সফলতা দেখে অনেকেই এই ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছে। প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে এ ফলের চাষ ছড়িয়ে দিতে চান সিঙ্গাপুর ফেরত তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা।

জানা গেছে, বগুড়ার শাজাহানপুরে আড়িয়া পালপাড়ায় প্রায় ২ বিঘা জমিতে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখে ৬ মাস বয়সী চারা রোপণ করেন উদ্যোক্তা সোয়েব সাদিক নবীন। চারা লাগানোর ৩ মাসের মধ্যে ফল ধরে গাছগুলোতে এবং ৫ মাসের মধ্যে ফল পাকা শুরু করে। প্রথমবারের মত বাণিজ্যিকভাবে মধ্যপ্রাচের ত্বীন ফল চাষে সফলতা পান এ উদ্যোক্তা। তার বাগানের পাকা ফল বিক্রি করছেন তিনি, ১৫ থেকে ২০টি ফল মিলে এক কেজি ওজন হয়েছে। ত্বীন ফল চাষে সফলতা পাওয়ায় তাকে দেখে অনেকেই অগ্রহী হচ্ছে এ ফল চাষে। সোয়েব সাদিক নবীন প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে এ ফলের চাষ ছড়িয়ে দিতে চারা উৎপাদন শুরু করবেন শিগগিরই। বেলে-দোঁআশ মাটিতে জৈব ও ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রয়োগে নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যার মাধ্যমে গাছগুলো বেড়ে উঠছে। ডুমুর আকৃতির ত্বীন গাছে ফল আসতে শুরু হওয়ায় দৃষ্টি কেড়েছে স্থানীয়দের।

জানা গেছে, সিঙ্গাপুরে গিয়ে তুরস্কের এক যুবকের সাথে বন্ধুত্ব হয় শাজাহানপুরের সোয়েব সাদিক নবীনের। সেখানেই ত্বীন ফলের স্বাদ পেয়েছেন, পাশাপাশি চাষ সম্পর্কে অবগত হন তিনি। করোনা পরিস্থিতিতে দেশে ফিরে বসে না থেকে তিনি ফল বাগান করার কাজ শুরু করেন। পরে তুরস্কের বন্ধুর মাধ্যমে সেখান থেকে আনা ৬ মাস বয়সী ৬০০ চারা রোপণ করেন ২ বিঘা জমিতে। ১ বিঘা জমিতে ২ লাখ টাকা খরচে ৩০০ ত্বীন ফল গাছ লাগিয়ে বছরে ফল ও চারা বিক্রি করে ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। একবছর বয়সী প্রতিটি গাছ থেকে প্রথম বছরে ৩ কেজি, দ্বিতীয় বছরে ৭ থেকে ১০ কেজি, তৃতীয় বছরে ২৫ কেজি পর্যন্ত ফল, যা একটানা ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত পাওয়া যাবে। ফলের পাশাপাশি ৮ মাস বয়সী প্রতিটি গাছ থেকে টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে ২০টির বেশি চারা তৈরি হবে। সারা বছর ফল পাওয়া যাবে। ১ কেজি ফল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা দরে।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত এ ফলটি ঔষধি গুণসম্পন্ন এবং স্বাদে মিষ্টি। ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধে এ ফলটি খুবই উপকারী। এছাড়া নানা রোগ নিরাময়ে বিশেষ করে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ত্বীন। এটি চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য ও হাঁপানি রোগ নিরাময়েও সহায়তা করে। মানসিক ক্লান্তি দূর করে। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ক্যালিসিয়ামসহ নানা ভেষজ গুণ।

শাজাহানপুর নবীন এগ্রো লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোয়েব সাদিক নবীন জানান, চাকরির পেছনে ঘুরে হতাশ না হয়ে তরুণ যুবকদের স্বনির্ভর হতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অনেক টাকা খরচ করে বিদেশে না গিয়ে দেশেই ভালো কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। ত্বীন ফলসহ বিভিন্ন বিদেশি ফল চাষ করে স্বনির্ভর হওয়া সম্ভব। অল্প বিনিয়োগে লাভবান হওয়া যাবে, যাতে মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আয় করা যাবে। এতে করে বেকারত্ব দূর হবে, পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থান হবে।

তিনি তার বাগানের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ত্বীন ফলের চাষাবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, অনেকেই ইউটিউবে দেখে ত্বীন ফল চাষ করার চেষ্টা করছে, তারা যেন সঠিক পদ্ধতি জেনে চাষ করে এতে তারা লাভবান হতে পারবে। এছাড়া কেউ বাগান তৈরি করে নিতে চাইলে তাকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবেন এই কৃষি উদ্যোক্তা। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হর্টিকালচার সেন্টার বগুড়ার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুর রহিম জানান. বগুড়াতে বাণিজ্যিক আকারে চাষ শুরু হয়েছে। গাছের বৃদ্ধি ভালো, ফলনও আসছে। যেকোনো ফল পুষ্টি সমৃদ্ধ, দেশে খাদ্য ঘাটতি নেই তবে পুষ্টি ঘাটতি রয়েছে। পুষ্টি ঘাটতি দূরীকরণে বেশি বেশি ফল উৎপাদন ও খাওয়া দরকার। দেশী ফলের পাশাপাশি বিদেশি ফল ত্বীন, ড্রাগন, রামভুটান এগুলোর চাষ সম্প্রসারণ করতে পারি, তবে পুষ্টির ঘাটতি দূর করাসহ চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হর্টিকালচার সেন্টার কৃষকদের সবসময় উৎসাহিত করছে এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে আসছে। এতে করে কৃষক ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর