২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৪:৪৬

লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশ ধান সংগ্রহ করেছে নওগাঁর খাদ্যবিভাগ

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশ ধান সংগ্রহ করেছে নওগাঁর খাদ্যবিভাগ

উত্তরের খাদ্যভাণ্ডারের জেলা নওগাঁ। চলতি বছর সরকার নির্ধারিত ধানের বাজার মূল্যের চেয়ে খোলাবাজারে মূল্য বেশি হওয়ায় সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি জেলা খাদ্য বিভাগ। আমন ধান সংগ্রহ অভিযান শেষ হবার প্রাক্কালে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১ শতাংশ ধান সংগ্রহ করেছে জেলার খাদ্যবিভাগ। আর প্রথম দফায় চাল ক্রয়ের বরাদ্দ পাওয়া নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পর পরবর্তী সময়ে জেলায় আরও ১১ হাজার মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের বরাদ্দ আসে। সেই লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শতভাগ পূরণ হওয়ার পথে। সরকারি গুদামে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৭ শতাংশ চাল ইতোমধ্যে সংগ্রহ হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানের শেষ দিন। এই পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হলেও চাল সংগ্রহে সফল।

জানা গেছে, নওগাঁর ১১টি উপজেলার ১৯টি খাদ্যগুদামে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি মণ ১০৮০ টাকা দরে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১০ হাজার ২৪৩ মেট্রিক টন। তবে নির্ধারিত সময় শেষ হতে চললেও ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারেনি স্থানীয় খাদ্যবিভাগ। এখন পর্যন্ত কেনা হয়েছে মাত্র ৯৭ মেট্রিক টন। আর জেলায় প্রথম দফায় ২৩ হাজার ২৪৯ মেট্রিক টন সিদ্ধ আমন চাল ক্রয়ের বরাদ্দ আসে। নির্ধারিত সময়ের আগেই সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ায় পরবর্তী সময়ে আরও ১১ হাজার মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের বরাদ্দ আসে। দুই দফায় জেলার ১৯টি খাদ্যগুদামে চালক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত চাল সংগ্রহ হয়েছে সাড়ে ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। ২৭ টাকা কেজি হিসাবে প্রতি কেজি চাল সংগ্রহ করা হয়েছে সরকারিভাবে।

কৃষকরা বলছেন, এবার ধানের বাম্পার ফলনের সাথে সাথে খোলাবাজারে ভালো দাম পেয়েছেন তারা। তারা বলছেন অনেক কিছু শর্ত মেনে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দিতে হয়। তারা সেসব শর্ত পূরণ করতে না পারায় গুদামে ধান দেন না। শুধু তাই নয়; খাদ্যগুদামে ধান নিয়ে গেলে অনেক ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়। মিটার পাশ, শুকনো ধানকে বলে ভেজা, টাকার জন্য ব্যাংকে ঘুরতে হয়। আর খোলাবাজারে গেলে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। তাই সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের বরাদ্দকৃত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ। গত মঙ্গলবার নওগাঁ সদরের কীর্তিপুর হাটে প্রতি মণ স্বর্ণা ১১১০ টাকা থেকে ১১২০ টাকা, রনজিত ১১৪০ টাকা থেকে ১১৫০ টাকা, জিরাশাইল ১৪৪০ টাকা থেকে ১৪৫০ টাকা ও কাটারিভোগ ১৫৪০ থেকে ১৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। 

নওগাঁর মিল মালিক ও ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন চকদার ও শেখ ফরিদ উদ্দীন বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে খোলাবাজারে ধানের দাম বেশি। কৃষকদের ইচ্ছা থাকলেও গুদামে ধান দেয় না; কারণ অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় তাদের। এদিকে অনেক কৃষক অভাব অনটনের কারণে ধান লাগানো থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত ধার-দেনা থাকায় তাড়াতাড়ি করে বাজারে ধান বিক্রি করেন। দামও বেশি পান। এজন্য সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আলমগীর কবির বলেন, সরকার নির্ধারিত ধানের সংগ্রহ মূল্য ও খোলাবাজারে ধানের মূল্য বেশি পার্থক্য না থাকায় কৃষকরা গুদামে ধান না দেওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। তবে সরকার সফল এজন্য যে; সরকারের ধান সংগ্রহের মূল উদ্দেশ্য কৃষক যেন বেশি মূল্য পায়। কৃষক যেহেতু বাজার থেকে বেশি মূল্য পাচ্ছে সেই কারণে আমাদের সংগ্রহ কম হলেও সরকার সফল।


বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর