শিরোনাম
২৪ মার্চ, ২০২২ ১৯:৪৩

করলার গ্রাম বনগাঁও

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

করলার গ্রাম বনগাঁও

পিছ ঢালা পথ ছেড়ে গ্রামের মেঠো পথ ধরে এগোলেই রাস্তার দুই পাশে চোখে পড়ে শুধু করলা আর করলা। গ্রামের এক মাথা থেকে অন্য মাথা, মাঠের পর মাঠ ভরে আছে সবুজে। মাছায় দুলছে ছোট বড় হাজার হাজার করলা। আর এসব করলার ভারে নুয়ে পড়ছে মাছা।

শুধু জমিতেই নয়, গ্রামের কৃষকদের বাড়ির আঙিনায়, ঘড়ের চালে, গাছে গাছে ঝুলছে নানান জাতের করলা। কেউ লাগিয়েছেন লালতীরের হাইব্রিড টিয়া, কেউ টিয়া সুপার।

বুধবার মাঠ দিবসে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের কৃষকরা সবাই ব্যস্ত করলা মাঠে। কেউ গাছ থেকে করলা পারছেন। কেউবা মাছা ঠিক করছেন। কেউ গাছের গোড়ায় দিচ্ছেন নিরানী, কেউবা বসে আছেন সেচ যন্ত্র চালিয়ে। এমন দৃশ্য মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের ‘বনগাঁও’ করলা গ্রামে। শহর থেকে এই গ্রামের দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার।

জানা যায়, চলতি খরিফ-১ মৌসুমে এ গ্রামের কৃষকরা মাঠের পর মাঠ করলা চাষ করেছেন। গত এক সাপ্তাহ ধরে তারা করলা বিক্রি করছেন। পাইকাররা এলাকায় পারেরটং কালেকশন পয়েন্ট থেকে করলা কিনে নিচ্ছেন। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার মণ করলা উঠছে কালেকশন পয়েন্টে। এই উপজেলার বিভিন্ন ছোট বড় হাটবাজার ছাড়াও ঢাকা, ভৈরব, নরসিংদী, হবিগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের পাইকাররা এসে এখান থেকে গাড়ি বোঝাই করে করলা কিনে নিচ্ছেন।

চাষি মুঈন মিয়া জানান, তিনি ৭০ শতক জমিতে করলা চাষ করেছেন। ফলন খুব ভাল হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি ৩ হাজার ৩৩০ কেজি করলা বিক্রি করেছেন। প্রথমে দাম পেয়েছেন ৬৫/৬০ টাকা কেজি। পরে বিক্রি করেছেন ৪২ টাকা করে।  করলা চাষে তার খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। এই মাঠ থেকে টানা তিন মাস তিনি করলা বিক্রি করবেন। আর খরচ বাদে তার আয় হবে ২ লাখ টাকা।

শফীক মিয়া জানান, তিনি ২৪ শতক জমিতে করলা চাষ করেছেন। ৪২ টাকা দরে  ৪০০ কেজি করলা বিক্রি করেছেন। আরও ৭০০ কেজি বিক্রি করতে পাবেন। খরচ বাদে তার আয় হবে ১ লাখ টাকা। একই ভাবে গ্রামের মনির হোসেন ৭৫ শতক, রাজিব ৬০ শতক, মন্নান ১৫ শতক, শফিক মিয়া ৪৫ শতক ও  জলিল মিয়া ৩০ শতক জমিতে করলা চাষ করেছেন।

জানা যায়, হাইব্রিড টিয়া ও টিয়া সুপার জাতের করলা তীব্র শীত ব্যতীত সারা বছরই চাষ করা যায়। সঠিক পরিচর্যায় একর প্রতি ফলন হয় ১২ থেকে ১৪ টন। একেকটি করলা ২৮ থেকে ৩২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। ওজন হয় ২৮০ থেকে ৩০০ গ্রাম। রং সবুজ, স্বাদে মাঝারি তিতা ও সুস্বাধু। এ জাতের করলা উঁচু দো-আাঁশ মাটিতে রোপষ করতে হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, ‘বনগাঁও গ্রামে এবার ৯ বিঘা জমিতে হাইব্রিড টিয়া ও টিয়া সুপার জাতের করলা চাষ হয়েছে। এই দুটি জাতই ভাল ফলন দিয়েছে। কৃষকরা টানা তিন মাসে মাঠ থেকে প্রায় ৪০ হাজার কেজি করলা তুলতে পারবেন। আর বাজারে বার মাসই করলার চাহিদা রয়েছে। তাই করলা চাষ কৃষকদের জন্য লাভজনক।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর