শিরোনাম
২ এপ্রিল, ২০২২ ১৭:৪৮

খোলা আকাশে অবমুক্ত বিলুপ্ত প্রায় ১৯ শকুন

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

খোলা আকাশে অবমুক্ত বিলুপ্ত প্রায় ১৯ শকুন

সিংড়া জাতীয় উদ্যানে উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্রে সুস্থ হয়ে ওঠা ১৯টি শকুনকে আবারও প্রকৃতির খোলা আকাশে অবমুক্ত করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সিংড়া জাতীয় উদ্যানে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব শকুনকে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া হয়। ডানা মেলে বিরল প্রজাতির এসব শকুন প্রকৃতিতে মিশে যায়। 

দেশে সাতটি জাতের শকুন রয়েছে। তবে কালেরপরিক্রমায় এখন বিলুুপ্ত ও বিপন্ন প্রায় শকুন পাখি। বিলুপ্ত প্রায় এই পাখিটি রক্ষা ও বংশ বৃদ্ধি এবং প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় দিনাজপুরের বীরগঞ্জে সিংড়া জাতীয় উদ্যানে স্থাপন করা হয় শকুন উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। সামাজিক বন বিভাগ দিনাজপুর ও আইইউসিএন বাংলাদেশ যৌথভাবে এই কেন্দ্রে দিনাজপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে শকুন সংগ্রহ করে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়। পরে অসুস্থ ও দুর্বল শকুনদের চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করার পর আবার প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

২০১২ সালে উত্তরবঙ্গের একমাত্র শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে এবং ২০১৪ সাল হতে আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস উদযাপন করা হয়। কেন্দ্রটি চালু করার পর থেকে এখানে প্রতি বছরে ১০ থেকে ১৫টি শকুন উদ্ধার করে আনা হতো। তবে ২০২১ সালের নভেম্বর হতে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে ২৬টিতে শকুন পরিচর্যা কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ৭টি শকুন প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলার পর আজ সকাল ১১টায় বাকি ১৯টি শকুন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপ প্রধান বন সংরক্ষক সুফল পরিচালক গোবিন্দ রায়, বন সংরক্ষক বন্য প্রাণী পরিচালক মোল্লা রেজাউল করিম, বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট পরিচালক এএসএম জহির  উদ্দিন, বন সংরক্ষক বগুড়া অঞ্চল মোঃ আমিনুল ইসলাম, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা দিনাজপুর বশিরুল-আল-মামুন, বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের, মুখ্য গবেষক শকুন সংরক্ষণ প্রকল্প আইইউসিএন বাংলাদেশ সারোয়ার আলম দিপু, কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিটিভ মো. রাকিবুল আমীন প্রমুখ।

বীরগঞ্জ সিংড়া জাতীয় উদ্যানের বনবীট কর্মকর্তা হরিপদ দেবনাথ জানান, হিমালয় এবং ভুটানে শীতের প্রকোপ বাড়লে দল বেঁধে শকুনগুলো আসে এবং বড় বড় গাছে আশ্রয় নেয়। বিলুপ্ত প্রায় এই শকুন বিশেষ করে শীতের সময় অন্য এলাকা থেকে দিনাজপুরসহ এ অঞ্চলে অসুস্থ বা খাদ্যাভাবে ক্লান্ত অবস্থায় আসে। ঠিকমত উড়তে না পারায় সেসব শকুনকে উদ্ধার করে দিনাজপুরের বীরগঞ্জের সিংড়া জাতীয় উদ্যানে পরিচর্যা ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে আনা হয়। একসময় পুরোপুরি সুস্থ হলে সেটিকে প্রকৃতিতে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়। 

উল্লেখ্য, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় আহত অবস্থায় শকুন উদ্ধার করে বীরগঞ্জ সিংড়া জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হয়। গত বছরের এপ্রিলে ২০টি শকুন সুস্থ অবস্থায় প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেয়া হয়। হিমালয়ের পাদদেশে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার অবস্থানের কারণে এই এলাকায় কিছু শকুন দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১৪৯টি শকুন সুস্থ অবস্থায় প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।  তবে এ এলাকার মানুষ যদি সচেতন হয় এবং সহযোগীতা করে তাহলে উদ্ধারকৃত শকুন পুনর্বাসন কেন্দ্রের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করে তাদের বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। 

 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর