১৬ মে, ২০২২ ১৪:০২

ঝড়-বৃষ্টির পানিতে ধান, শ্রমিক সংকটে বিপাকে কৃষক

দিনাজপুর প্রতিনিধি

ঝড়-বৃষ্টির পানিতে ধান, শ্রমিক সংকটে বিপাকে কৃষক

গত কয়েকদিনের ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিতে দিনাজপুরের অনেক স্থানের কৃষকের সোনালী ধান পানিতে তলিয়েছে এবং হেলে পড়েছে। এ অবস্থায় ধান কাটতেও সমস্যায় পড়েছেন কৃষকরা। হেলে পড়া ও পানিতে ডোবা ধান শ্রমিকরা কাটতেও চাইছেন না। সময় মত ধান কাটার শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না। আবার পেলে বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে। ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। ফলন কম এবং খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে লোকসান আশংকায় চিন্তিত। যদিও জেলার বিভিন্ন স্থানে অনেক ধান কাটা হয়েছে। অন্যদিকে মিলছে না ধানের কাঙ্খিত দামও। বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। 

এদিকে, বৃষ্টির কারণে মাঠে থাকা পাকা ধান, যা কৃষকরা কাটতে পারেনি, সেটার একটু ক্ষতি হতে পারে। তবে তার পরিমাণ খুব বেশি নয়। আর হেলে পড়া এবং পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধান কাটা চলমান রয়েছে। জমিতে পানি থাকলেও যেসব ধান দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলোর সমস্যা হবে না বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। 

চিরিরবন্দরের কয়েক এলাকায় দেখা যায়, তিনদিনের টানা বৃষ্টির পানিতে ধানের জমি তলিয়ে গেছে। পাকা ধান জমিতে ফেলেও রাখতে পারছেন না কৃষক। এ অবস্থায় হতাশ হয়ে বেশি মজুরি দিয়ে ধান কাটা-মাড়াইতে বাধ্য হয়েছেন কৃষকরা। অপরদিকে, বাড়ির উঠান ভিজে গিয়ে কর্দমাক্ত হওয়ায় পাকা সড়কে অথবা খেলার মাঠে ধান শুকাচ্ছেন কৃষকরা। ধান ভিজে যাওয়ার সুযোগকে সদ্ব্যবহার করছেন মৌসুমি ধান ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা। তারা কম দামে ধান কিনতে কৃষককে বোঝাচ্ছেন।

চিরিরবন্দরের আব্দুলপুর ইউপির নান্দেড়াই গ্রামের কৃষক মহসিন আলী ও আমিনুল ইসলাম জানান, টানা বর্ষণে ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়া ধান কেটে আনা ও মাড়াই করতে অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। বৃষ্টির আগে বিঘাপ্রতি যেখানে খরচ ছিল সাড়ে ৭ হাজার টাকা। বর্তমানে তা ৮ থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। রোদ না থাকায় ওই ধান শুকাতে না পেরে কমদামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

ধান চুক্তিতে কাটানো মজুর সর্দার আসফাকুর রহমান বাবু বলেন, জমি বাড়ির নিকটবর্তী হলে বিঘাপ্রতি ৮ হাজার টাকা ও দূরের জমি হলে দূরত্ব অনুযায়ী দাম চাওয়া হচ্ছে। জমি তলিয়ে যাওয়ায় ধান পরিবহনে আমাদেরকে কষ্ট করতে হচ্ছে। তারপরও দিনশেষে একজন মজুর ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা রোজগার  করতে পারছেন। 

হাকিমপুরের ইসমাইলপুরের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টিতে সব ধান পানিতে ডুবে গেছে। এতে খুব বিপাকে পড়েছি। শ্রমিকও পাচ্ছি না। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে, এক বিঘা জমির ধান কাটতে ছয়-সাত হাজার টাকা লাগছে। যেখানে ধানের ফলন হতো ২০ মণ, এখন সেখানে ১২ থেকে ১৪ মণ করে হবে। এতে খরচই উঠবে না।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. খালেদুর রহমান জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে অনবরত বৃষ্টির পানিতে ধান তলিয়ে গেলেও দ্রুত সে পানি সরেও যাচ্ছে। এতে ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। অন্যদিকে এসব জমির ধান কাটা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে। 

উল্লেখ্য, দিনাজপুরের হাকিমপুর, বিরল, চিরিরবন্দরসহ কয়েক উপজেলার নিচু ধানের জমিতে এ অবস্থা বিরাজ করছে। এবার আবাদকৃত ধানের মধ্যে রয়েছে, মিনিগেট, জিরাশাইল, ব্রি-২৮,২৯, ৫৮,৭৪, ৮১, ৮৮, ৮৯ বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের ধান।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর