১৬ জুলাই, ২০২২ ২০:৩০

দুই দফা বন্যার পর প্রচণ্ড খরার কবলে কুড়িগ্রাম

শ্যালো মেশিন ও সেচ দিয়ে আমন লাগাচ্ছেন কৃষক

খন্দকার একরামুল হক সম্রাট, কুড়িগ্রাম

দুই দফা বন্যার পর প্রচণ্ড খরার কবলে কুড়িগ্রাম

গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে যাচ্ছে চলতি বছরের বন্যা বিদায় হওয়ার। পর পর দুই দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের কৃষক। এতে সদ্য বপনকৃত আমন বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বন্যার পানি নেমে গিয়ে নতুন করে কৃষকদের ঘুরে দা^ড়ানোর চেষ্টা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।

জেলা জুড়ে চলছে প্রচণ্ড খরা। গত ১৫-২০দিন ধরে নেই এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত। ফলে খরায় পুড়ছে এ জেলা। জেলার সকল খাল-বিল ডোবা-নালা দিঘি এখন শুকিয়ে গেছে। জমিগুলোতে দেখা দিয়েছে পানির তীব্র সংকট। কৃষকের তৈরিকৃত আমন বীজতলা ইতোমধ্যেই বেড়ে উঠছে। এখন নিম্নাঞ্চলসমূহেই পানির সংকট। তার ওপর উঁচু জমিগুলোতে পানির তীব্র সংকটে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আমন চাষ। তাই বাধ্য হয়ে জেলার ৯ উপজেলার অধিকাংশ কৃষক জমিতে সেচ ও শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি উত্তোলন করে আমন চারা লাগাতে শুরু করেছেন। অনেকেই চিন্তিত। 

বৃষ্টিপাত না হলে কিভাবে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে আমন চাষে লাভবান হবেন। এছাড়াও প্রচণ্ড গরমে জনজীবনও অতিষ্ট। প্রতিদিন তাপমাত্রা গড়ে ৩০-৩৫ ডিগ্রীতে ওঠানামা করছে। সামনে আরো তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জীব-বৈচিত্রের উপরও। 

সরেজমিনে জানা যায়, গত ২০ দিন আগেও নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু জমিতে কোমড় পানি ছিল।এখন অনেক জায়গায় পানি গেছে কমে কিংবা শুকিয়ে। অবিরাম বর্ষণ ও উজানের ঢলে জেলার ছোট বড় ১৬ টি নদ-নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছিল। সেসময় কৃষকদের ফসল নিমজ্জিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিন্তু সম্প্রতি ভরা আমন মৌসুমে এ জেলায় বৃষ্টির দেখা নেই। পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে নিচের জমিগুলোই ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। উঁচু জমিতেতো পানির দেখাই নেই। যে সকল চাষিদের সেচ দেওয়ার সুযোগ নেই, সে সমস্ত চাষি বৃষ্টির অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন। যাদের সুযোগ রয়েছে তারা বৃষ্টির অপেক্ষা না করে সেচ ও শ্যালো মেশিন দিয়ে আমনের চারা রোপন করছেন। এভাবে সেচ দিয়ে কতটুকু লাভবান হবেন তানিয়ে সংশয় চাষিদের।

ফুলবাড়ী উপজেলার কিশামত শিমুলবাড়ীর কৃষক খলিলুর রহমান জানান, গত ১৮-২০দিন থেকে আমাদের এখানে বৃষ্টি নেই। প্রখর রোদে জমির পানি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। অন্যদিকে আমনের বীজতলাও বড় হয়ে গেছে। বৃষ্টির অপেক্ষায় না থেকে সেচ দিয়ে আমন রোপন শুরু করেছি। কয়েক বিঘা জমিতে এ বছর আমন ধান লাগাব পানির অপেক্ষায় থাকলে কিভাবে চলবে জানি না। 

একই উপজেলার কৃষক তোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু জানান, কয়দিন আগেই বন্যা হয়ে গেল। এখন আবার খরা। টানা খরায় সমস্ত খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে আকাশের কাল মেঘ দেখা গেলেও বৃষ্টির নাম গন্ধ নেই। তাই বাধ্য হয়ে সেচ ও শ্যালো মেশিন দিয়ে আমন চাষের জমিতে হাল-চাষ করছি। এবছর ১৫ একর জমিতে আমনের চাষাবাদ করবো বলে আশা করি। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে আমন চাষে হয়তো বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, বৃষ্টিপাত না হলে এবারে আমন চাষে উৎপাদন খরচ দ্বিগুন হয়ে যাবে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো: আব্দুর রশীদ জানান, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ১  লাখ ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃষ্টি না থাকায় সেচ ও শ্যালো মেশিন দিয়ে চাষিরা আমন ধান ইতোমধ্যেই লাগাতে শুরু করেছেন। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর