১৮ জুলাই, ২০২২ ২০:২৪

কুড়িগ্রামের লটকন যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়, রপ্তানির সুযোগ চান কৃষকরা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামের লটকন যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়, রপ্তানির সুযোগ চান কৃষকরা

কুড়িগ্রামের বিভিন্ন স্থানে গাছের মগডালে এখন ঝুলছে জঙলী ফল খ্যাত লটকন ফল।স্বাদে অত্যন্ত সুস্বাদু ও লোভনীয়। জেলায় এবার ব্যাপকহারে চাষ করা হয়েছে এ ফল। চলতি বছর এর ফলন বিপর্যয়ের কারণে কৃষকরা চিন্তিত হলেও লাভের আশা দ্বিগুণ রয়েছে। 

ভিটামিন ‘সি‘ সমৃদ্ধ এই ফল চাষ করতে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। একটু যত্ন এবং আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে পারলেই ব্যাপক ফলন হয় বলে কৃষকরা জানান। তবে এ ফলের প্রধান শত্রু পিঁপড়া ও বিভিন্ন প্রজাতির পোকা। এদের থেকে দূরে থাকতে হলে একটু ডালপালা ছাটাই করতে হয় এবং সঠিকভাবে কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। 

জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলায় বর্তমানে এ জঙলী ফল খ্যাত লটকন চাষ করেছেন সহস্রাধিক কৃষক। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি আরও বেশি হবে এ চাষির সংখ্যা। আর লটকন ফলের ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী। তবে সবচেয়ে বেশি এ চাষ করা হয়েছে সদর উপজেলায়। 

সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের সন্নাসী গ্রামের কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, আমাদের এ জেলায় সবচেয়ে বেশি লটকন চাষ হয়েছে। আর এ জেলার চাহিদা পূরণ করে আমরা প্রতি বছর বাইরের জেলাগুলোতেও লটকন পাঠাই। এখানকার লটকনের স্বাদ, সাইজ ও মান ভালো হওয়ায় প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে পাইকাররা ছুটে আসেন কিনতে। গত বছর আমরা ১২শ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত মণ বিক্রি করেছি। এবার লটকনের মন ২৬শ টাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। অর্থাৎ এবার দাম অনেক বেশি কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য এবার লটকনের ফলন ভাল হয়নি। ফলন ভাল হলে চাষিরা  প্রচুর পরিমাণে লাভবান হতেন। 

শিবরাম গ্রামের চাষী জয়নাল মিয়া জানান, আমরা শুনেছি ১১ থেকে ১২টা দেশে আমাদের রংপুরের ও রাজশাহীর হাড়িভাঙা ও ফজলী-গোপালভোগ আম রপ্তানি হয়। আমরা জানি দেশের বাইরে লটকনেরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সরকার যদি চেষ্টা করতো তাহলে আমাদের চাষ করা লটকন বাইরে বিক্রি করে আমরাও আরো বেশি লাভবান হতে পারতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য লটকন চাষে স্থানীয় কৃষি বিভাগ সঠিকভাবে পরামর্শসহ দেখভাল করে না। আর এজন্য আমরা ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়ছি। 

কাঁঠালবাড়ী বাজারের পাইকার ও দেবালয় গ্রামের ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম জানান, আগে আমরা নিজেরাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে গিয়ে লটকন বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন সবকিছুতে মূল্যবৃদ্ধির কারণে সেটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে এক খাচা লটকনের দাম ছিল একশ টাকা এখন সেটা পরিবহণে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে তিনশ টাকায়। এছাড়াও লটকন সংগ্রহ করতে শ্রমিকদের একশ টাকা দিলেই হতো। এখন দিতে হচ্ছে ৪ থেকে ৫শ টাকা। ফলে আমরা আগের তুলনায় কম লাভবান হচ্ছি। 

রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জের পাইকার আব্দুল কুদ্দুস জানান, এখানকার লটকন অত্যন্ত সুস্বাদু ও দামটাও কিছুটা সস্তা। নরসিংদীর লটকন আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা মন। এখানকার লটকন ৩ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়। ঢাকা, বগুড়া, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, যশোর, বরিশাল, কুয়াকাটা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এখানে লটকন কিনতে আসছেন। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. শামসুজ্জামান বলেন, এ জেলার মধ্যে সদর উপজেলা, রাজারহাট, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও উলিপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লটকন চাষ হচ্ছে। বিদেশে রপ্তানির ব্যাপারে তিনি জানান, প্রাপ্যতা ও মান অর্জন করতে পারলে অবশ্যই বিদেশে লটকন প্রেরণ করা সম্ভব। 


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর