২৪ জুলাই, ২০২২ ১৬:৩৪

ফলের ‘স্বর্গরাজ্য’ বিজয়নগর, বছরে ৫০ কোটি টাকার বেচাকেনা

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ফলের ‘স্বর্গরাজ্য’ বিজয়নগর, বছরে ৫০ কোটি টাকার বেচাকেনা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী জেলা বিজয়নগর ফলের ‌‘স্বর্গরাজ্য’ নামে পরিচিত।  জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। বিজয়নগরে মাটি ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বর্তমানে দেশী ও বিদেশী অনেক ধরনের ফলেরই বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে এখানে।

সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, প্রতি বছর এই উপজেলায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার ফল উৎপাদন হয়। উৎপাদিত দেশী ফলের মধ্যে রয়েছে লিচু, কাঁঠাল, আম, জাম, মালটা, কমলা ও লটকন। বিদেশি ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, আঙ্গুর, ড্রাগন ইত্যাদি।

চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলায় ৪১৪ হেক্টর জমিতে লিচু, ৩১৫ হেক্টর জমিকে কাঁঠাল ও ৬৫ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ করা হয়েছিল।
বর্তমানে বিজয়নগর উপজেলার প্রায় ১৮ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এই লকটন বিক্রিও শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি লটকন পাইকারিভাবে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানায় চলতি বছর বিজয়নগরে প্রায় কোটি টাকার লটকন বিক্রি করার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় লটকনের চাষ নিয়ে চাষীদের মধ্যেও আগ্রহ বাড়ছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, লটকনের রয়েছে পুষ্টি ও ঔষধি গুণ। ভিটামিন “সি” তে ভরপুর এই ফল, যা প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখা যায়। ১০০  গ্রাম পাকা লটকনে আছে খাদ্যশক্তি ৯১ কিলোক্যালোরি। এছাড়া আমিষ ১.৪২ গ্রাম, চর্বি ০.৪৫ গ্রাম, ভিটামিন-সি ৫৫ মিলিগ্রাম। লটকনের বৈজ্ঞানিক নাম ব্যাকারিয়াস্যাপাডিয়া। ইংরেজিতে লটকনকে বলা হয় বার্মিজ  গ্রেপ। বাংলাদেশে লটকন এলাকাভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন হাড় ফাটা, ভুবি, কানাইজু, লটকা, লটকাউ, লোটকা ইত্যাদি। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর বিজয়নগরে প্রায় ১০ কোটি টাকার বেশি কাঁঠাল, প্রায় ১৫ কোটি টাকার লিচু ও প্রায় ১৩ কোটি টাকার মালটা বিক্রি করা হয়েছে। চলতি বছর ১ কোটি টাকার লটকন বিক্রি করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজয়নগর উপজেলার ১৮ হেক্টর লটকন বাগানের মধ্যে প্রায় ১০ হেক্টর লটকনের বাগান রয়েছে উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নে।

পাহাড়পুর ইউনিয়নের বামুটিয়া গ্রামের লকটন চাষি তোফাজ্জল হোসেন জানান, তার বাগানে মালটা, লটকন, কমলা, কয়েক জাতের আম, লিচু, পেঁপে, কাঁঠাল, ড্রাগন ও সৌদি আরবের খেজুর গাছ রয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম “মিয়াজাকি” ধরে আছে তাঁর বাগানে। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম হিসেবে পরিচিত।

চাষি তোফাজ্জল হোসেন জানান, লটকন চাষ খুব সহজ। অযত্ন-অবহেলাতেও লটকন গাছ বেড়ে উঠে। তবে লটকনের চারা লাগানোর সময় জায়গা বাছাই করতে হয় নিয়ম মেনে। পানি আটকায় না ও ছায়াযুক্ত এলাকা লটকনের জন্য উপযুক্ত।

উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, মাটির গুনের কারণে বিজয়নগরে সব ধরণের ফলের ভালো ফলন হয়। গত কয়েক বছর ধরে চাষিরা সুমিষ্ট ফল লটকনের দিকে ঝুঁকছেন। এবারও লটকনের ভালো ফলন হয়েছে। পাহাড়পুর ইউনিয়নেই ১০ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াইশ লটকনের চারা লাগানো যায়। একেকটি পূর্ণাঙ্গ গাছে ৮০ থেকে ১০০ কেজি লটকন পাওয়া যায়। উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি অফিসার মো. হাদিউল ইসলাম সৃজন বলেন, দেশি, বিদেশি সব জাতের ফলই এখানে বাণিজ্যিভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। সব ধরণের সহযোগিতা করা হয় চাষিদেরকে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর