৩১ জুলাই, ২০২২ ১৬:৪৩

হাত বদলেই বাড়ছে সবজির দাম, দাম পাচ্ছেন না চাষিরা

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

হাত বদলেই বাড়ছে সবজির দাম, দাম পাচ্ছেন না চাষিরা

হাত বদলেই বাড়ছে সবজির দাম। চাষিরা দাম না পেলেও পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা মুনাফা লুটে নিচ্ছে। পাইকারী হাটের চেয়ে খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পাইকারী হাট মহাস্থানে গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ক্রেতা বিক্রেতাদের। তবে মহাস্থান হাটের সবজি বগুড়া শহরের পাইকারী ও খুচরা বাজারসহ রাজধানী ঢাকায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। হাত বদলের সাথে সাথে সবজির দাম প্রতি কেজিতে বাড়ছে। হাটবাজারের খাজনা, লেবার ও যানবাহন খরচ সবমিলিয়ে খুচরা বাজারে সবজির দাম বেড়ে যায় বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে বগুড়া একটি কৃষি প্রধান এলাকা। ধান, পাট, সবজি, মরিচ, ভুট্টা, আলু, সরিষার জন্য বগুড়া কৃষি ক্ষেত্রে বরাবরই অবদান রাখছে। শষ্য ভান্ডার খ্যাত বগুড়া জেলায় সারা বছর সবজি চাষ হয়ে থাকে। বগুড়ায় এখন সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয়েছে। বগুড়ায় উৎপাদিত সবজি এসে জেলার মহাস্থান হাটে জমা হয়। এই হাট থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যায় এই সবজি। মহাস্থান হাটে যে দামে সবজি বিক্রি হয় তার থেকেও কয়েকগুণ বাড়িয়ে বিক্রি হয় জেলার খুচরা বাজারে। শীতকালীন সবজি বেশি হলেও গ্রীষ্মকালেও এ জেলায় সবজি উৎপাদন করে থাকে চাষিরা। এসব সবজি বিক্রির সবচেয়ে বড় হাট মহাস্থান। বগুড়াসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে চাষিরা সবজি বিক্রি করতে আসে এখানে। সকালে জমি থেকে তোলা টাটকা সবজি মহাস্থান হাট থেকে প্রতিদিন ট্রাকে করে যাচ্ছে বগুড়া শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

বগুড়া কৃষি সম্পপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দুলাল হোসেন জানান, বগুড়া জেলায় গোটা বছরে ৪ লাখ মে. টন সবজি উৎপাদন হয়, এর মধ্যে গ্রীষ্মকালীন সময়ে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় সোয়া ১ লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়। এই সবজিই স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রথমে পাইকারি বাজারে এবং পরে সেখান থেকে খুচরা বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে।

রবিবার বগুড়ার মহাস্থান হাটে কাঁচা মরিচ ১৩০ থেকে ১৪২ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও রাজাবাজের তা ১৬০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ২’শ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। পটল প্রতি কেজি ১৫ টাকা হলেও ১০ কিলোমিটার দূরে বগুড়ার রাজাবাজার ও ফতেহ আলী বাজারে তা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, মহাস্থান হাটের চেয়ে বগুড়ার বাজারে ঢেড়শ, করলা, কচু কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ১০ থেকে ২৫ টাকার পিচ লাউ বগুড়া শহরের খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে। মহাস্থান হাটে যে সবজি ২০ টাকা  বগুড়া শহরের খুচরনা বাজারে তা ৪০ টাকা হিসেবে বিক্রি হয়ে থাকে। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে এসব সবজি পাইকারী বাজারের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়। মহাস্থান পাইকারী হাট থেকে বগুড়ার বাজার এবং রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় এসব সবজি হাত বদল হচ্ছে একাধিকবার। চাষির কাছে থেকে পাইকারী ক্রেতা, এরপর আবার বাজারের আড়ৎদার থেকে খুচরা বিক্রেতার কাছে থেকে সাধারণ ভোক্তার কাছে হাত বদলেই দাম বেড়ে যাচ্ছে। উৎপাদন অনুযায়ী কাঙ্খিত মূল্য পাচ্ছেন না বিক্রেতারা, আর শ্রমিক ও পরিবহন খরচসহ নানা কারণে দাম বাড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

বগুড়ার মহাস্থান হাটের ক্রেতা আশরাফ মিয়া জানান, মহাস্থান হাটে সবজির দাম কম। আবার একই সবজি বগুড়া শহরের খুচরা বাজারে কিনলে দিগুণ দাম দিতে হয়। সবজির চাষিরা দাম না পেলেও খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে দাম বেড়ে যাচ্ছে। 

বগুড়া শহরের ফতেহ আলী কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা ফজলুল হক জানান, বগুড়া শহরের রাজা বাজারে এক দাম। আর ফতেহ আলী বাজারে আরেক দাম। রাজা বাজার আর ফতেহ আলী বাজারের মধ্যে দূরত্ব মাত্র ১০ ফুট। এই ১০ ফুটের ব্যবধানে সকল প্রকার সবজির দাম বেড়ে যায় কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা করে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর