২৭ আগস্ট, ২০২২ ১৯:২৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সার নিয়ে তেলেসমাতি, বিপাকে কৃষক

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সার নিয়ে তেলেসমাতি, বিপাকে কৃষক

চাঁপাইনবাবগঞ্জে কতিপয় সার ব্যবসায়ী সারের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করায় চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। এমওপি পটাস, টিএসপি, ডিএপি ইউরিয়া সার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতিবস্তায় ৩-৪’শ টাকা বেশি আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে চলতি আমন আবাদ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। 

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় বিসিআইসির তালিকাভুক্ত ৫৮ ও বিএডিসির তালিকাভুক্ত ৩২ সার ডিলার রয়েছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলার বিসিআইসি’র তালিকাভুক্ত ১৫ জন সার ডিলার ও বিএডিসির তালিকাভুক্ত ৬ জন সার ডিলার রয়েছে। আর আমন মৌসুমে সদর উপজেলায় ইউরিয়া সারের বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার মেট্রিক টন। সূত্র মতে, কৃষকদের মাঝে সুষ্ঠুভাবে সার বন্টনের লক্ষে ২০০৮ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৮০ জনকে ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অনেক বিএনপি নেতা ডিলারশিপ পায় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এমনকি তাদের আত্মীয় ও কর্মচারীদের নামে-বেনামে ডিলারশিপ রয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন ব্যক্তি পুরো সারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। 

অভিযোগ উঠেছে, কিছু কিছু ডিলার সার উত্তোলন করে বিভিন্ন গোডাউনে সার মজুত করে রাখছে। এমনকি আইন ভঙ্গ করে নির্দিষ্ট এলাকার বাইরেও অধিক মুনাফার লাভে সার বিক্রি করছে। যে কারণে এ উপজেলার কৃষকরা চাহিদা অনুযায়ী সার পাচ্ছেন না। সার সংকটের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সার ব্যবসায়ীরা বীরদর্পে ১১০০ টাকার ইউরিয়া সার ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি করছে। 

সদর উপজেলার গোবরাতলার জমির মালিক আব্দুল মতিন বলেন, গোবরাতলা এলাকার এক সার ডিলারের গোডাউনে সার থাকার পরও সার নাই বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি একটি ট্রাকে সার আসলেও সেটি কৌশলে অন্যত্র নিয়ে যাবার চেষ্টা করলে সেটির জন্য বাঁধ সাধে স্থানীয়রা। পরে ট্রাকটি উক্ত স্থানে আসলে ট্রাক চালকের কাছে সারের চালানের কাগজ দেখতে চাইলে সেটি অন্য মালিকের বলে জানান। 

একই এলাকার লাল মোহাম্মদ নামে একজন কৃষক বলেন, স্থানীয় ডিলারেরা সারের কৃত্রিম সংকট তৈরী করার পাশাপাশি দাম বাড়িয়ে সরকারের ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ণ করছে। অন্য কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, সার ব্যবসায়ীদের দোকানে ইউরিয়া সার কিনতে গেলে বলছে কোন সার নেই। আর ব্যবসায়ীরা সারের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে বস্তা প্রতি ৩০০-৪০০টাকা অতিরিক্ত দামে ইউরিয়া সার বিক্রি করছে। 

এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কানিজ তাসনোভা বলেন, সারের ডিলারদের নিয়মিত মনিটরিং করা হয় এবং মজুদকৃত সারের তালিকা টাঙ্গানো বাধ্যতামূলক। এছাড়া ডিলারদের রশিদের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে সার দিতে হবে। তবে বেশিমূল্যে সার বিক্রি করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

অন্যদিকে নাচোল উপজেলায় সার নিয়ে চলছে তুঘলকি কাণ্ড চলছে। সেখানে সরকারি নিয়ম নীতি উপেক্ষা না করে সরকারি লাইসেন্স না থাকার পরেও অবৈধভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে সার এনে চড়া দামে বিক্রি করছে কতিপয় সার ব্যবসায়ী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাইসেন্স না থাকার পরও অবৈধভাবে বাজারে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে নাচোল সিংরইল বাজারে মেসার্স মাসুম এন্টারপ্রাইজের মালিক মতিউর রহমান। তিনি দেশে বিভিন্ন স্থান থেকে সার কিনে এনে তার দোকান হতে ১০০ গজ দূরে বাড়ির পাশে গোডাউনে রেখে কৃষকদের কাছে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে। সেখানে এমওপি সারের সরকারি মূল্য ৭৫০ টাকা হলেও তিনি বিক্রি করছেন ১৬০০ টাকায়, ডিএপি সারের সরকারি মূল্য ৮০০ টাকা হলেও বিক্রি করছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়, টিএসপি সরকারি মূল্য ১১০০ হলেও বিক্রি করছে ১৬০০ টাকায় এবং ইউরিয়ার সরকারি মূল্য ১১০০ টাকা হলেও বিক্রি করছে ১২০০ টাকায়। একই চিত্র সুইট পেট্রোল পাম্পের পাশে ইব্রাহিম ট্রেডার্সসহ নাচোল বাজারের তৌহিদ এন্ড ব্রাদার্সেও।  


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর