২৯ আগস্ট, ২০২২ ১৪:৪২

৩ মাস বন্ধ থাকার পর কাপ্তাই হ্রদে মাছের বাম্পার আহরণ

রাঙামাটি প্রতিনিধি

৩ মাস বন্ধ থাকার পর কাপ্তাই হ্রদে মাছের বাম্পার আহরণ

মাত্র ১১ দিনে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছের বাম্পার আহরণ হয়েছে। ছাড়িয়েছে রাজস্ব আয়ের রেকর্ড। বৃদ্ধি পেয়েছে সব ধরণের মাছের উৎপাদন। গত ১৮ আগস্ট কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু হওয়ার পর বৃদ্ধি পায় উৎপাদন। বিএফডিসি বলছে, গত বছরের তুলনায় এবছর মাছের রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় দিগুণ। 

রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন ও বিপননি কেন্দ্র (ফিসারি) সূত্রে জানা যায়, প্রথম ১১ দিনে মাছ আহরণ হয় প্রায় ১০৯৯.৬১ মেট্টিক টন। আর রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ২ কোটি ২২ লাখ টাকা। যা গত বছরের তুলনায় দিগুণ। কারণ ২০২১-২২ সালে হ্রদে মাছ আহরণের প্রথম ১১ দিন রাজস্ব আদায় হয় প্রায় এক কোটি ৫৭ লাখ টাকা।  আর মাছ উৎপাদন হয় ৮৭৬.৭৪ মেট্টিক টন। এবছর মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় খুশি জেলেরা।

রাঙামাটি বিএফডিসি সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলধারা ও বাংলাদেশের প্রধান মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ। যা দেশের মিঠা পানির মাছের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত। এ হ্রদ থেকে আহরিত মাছ রপ্তানি করা হয় চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। যার সুফল ভোগ করে এ অঞ্চলের ২২ হাজার মৎস্যজীবী। তাই প্রতিবছর মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তিন মাস যাতে কাপ্তাই হ্রদে মাসের সুষ্ঠু প্রকৃতি প্রজনন হতে পারে। বন্ধকালীন সময় রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন অধিদপ্তরের উদ্যোগে এ হ্রদে ছাড়া হয় বিপুল পরিমাণ পোনা মাছ। এসব পোনা বড় হওয়ার পর মাছ শিকার শুরু হয় চলতি বছরের গত ১৮ আগস্ট। এতে কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে আসে জেলে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীর মধ্যে। তিন মাস বেকার থাকার পর আবারও কর্মসংস্থান ফিরে পাওয়ায় খুশি শ্রমিকরা। শুধু তাই নয় বন্ধকালীন সময়ে কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন হয়েছে চাহিদার অধিক। তাই আহরণও হচ্ছে বাম্পার। সরকারের রাজস্ব খাতে যেমন আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি দেশে মিঠা পানির মাছের চাহিদাও মিটছে, আর লাভবান হচ্ছে মৎস্যজীবীরা। এরই মধ্যে জমে উঠেছে মৎস্য ব্যবসাও।

এ ব্যাপারে কথা হয় রাঙামাটি ফিসারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী মো. মাহাফুজের সাথে। তিনি বলেন, বড় মাছের তুলনায় ছোট মাছের উৎপাদন বেড়েছে। রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছ উৎপাদন স্বাভাবিক থাকলে মাছের উপর নিভর্রশীল লাখো মানুষের দরিদ্রতা দূর হতে খুব একটা সময় লাগবে না।  

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের রাঙামাটি জেলা ব্যবস্থাপক লে. কমান্ডার এম. তৌহিদুল ইসলাম (ট্যাজ) বলেন, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছের সুষ্ঠু প্রাকৃতিক প্রজনন, বংশ বিস্তারের কারণে বাম্পার আহরণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে তার জন্য বিএফডিসির সকল কর্মকর্তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। বন্ধকালীন সময় অবৈধ মাছ নিধনসহ পোনা মাছের রক্ষণাবেক্ষণে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয় তাদের। এ সময়ে হ্রদের মৎস্য সম্পদ তদারকি করার জন্য ৬টি মোবাইল মনিটরিং সেন্টার ও ৭টি চেকপোস্ট বসানো হয়। যার সুফল এখন মৎস্যজীবীরা ভোগ করছেন। রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে ৬৬টি দেশিও প্রজাতির ও ৬টি বহিরাগত প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। প্রতিবছর রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদ থেকে প্রায় ১০ হাজার ৫০০ মেট্টিক টন মাছ আহরিত হয়। আরও বেশি মাছ উৎপাদন হতো যদি পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হতো। আর হ্রদের পানি বৃদ্ধি পেতো। কিন্তু এ বছর কাপ্তাই হ্রদের পানি কম থাকাতে মাছ উৎপাদন তেমন হচ্ছে না। 

প্রসঙ্গত, গত ১ মে দেশের সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণসহ কাপ্তাই হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিন মাস ১৭ দিন হ্রদ হতে সব প্রকার মৎস্য আহরণ, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) ও রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। এরপর গত ১৮ আগষ্ট মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর