৩০ আগস্ট, ২০২২ ২০:০৭

কুড়িগ্রামে সার সংকটে কৃষক, দ্বিগুণ দামেও মিলছে না এমওপি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামে সার সংকটে কৃষক, দ্বিগুণ দামেও মিলছে না এমওপি

আমন মৌসুমের শুরুতেই কুড়িগ্রামে সার সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জে ব্যবসায়ী ও দোকানগুলোতে এসব সারের দেখা মিলছে না।ফলে কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোষ। আর এসব সার ডিলারদের কাছে সামান্য কিছু পাওয়া গেলেও কৃষকদের কিনতে হচ্ছে চরা দামে প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে। এছাড়াও প্রতিদিন বাড়ছে ইউরিয়া সারের মূল্য। 

অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে কীটনাশকের দামও। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে আমন আবাদে বাড়তি খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এখানকার কৃষকগণ। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে হাইব্রীড জাত ১২ হাজার ৭৫০ হেক্টর, উফশী ৯৪ হাজার ৫০০ হেক্টর এবং স্থানীয়জাত ১২ হাজার ৭০০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫৫৫ মেট্রিকটন। এবার ৫ লক্ষ ৮ হাজার ৪৯৩ জন কৃষক আমনচাষে যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু ডিজেল এবং ইউরিয়া সারের মূল্যবৃদ্ধিসহ হালচাষে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্ভাবনায় দিন কাটছে এসব চাষির।

সরেজমিনে জানা গেছে, এবার আমন চাষাবাদে ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে ৯২ হাজার ৩০৬ মে. টন। টিএসপি ২২ হাজার ৮৭১ মে.টন, ডিএপি ৪৩ হাজার ৪৩৩ মে.টন, এমওপি ৫২ হাজার ১৯৫ মে.টন, জিপসাম ৩৬ হাজার ৪৭২ মে. টনসহ অন্যান্য সার। এরমধ্যে জেলায় ইউরিয়া সার বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৫৫ হাজার ২ মেট্রিক টন, টিএসপি ১০ হাজার ৪৪৬ মেট্রিকটন, ডিএপি ১৫ হাজার ৪৫৭ মেট্রিক টন, এমওপি ২৩ হাজার ৮৮৭ মেট্রিকটন এবং জিপসাম ১৪ হাজার ৬৫৬ মেট্রিকটনসহ চাহিদার অর্ধেক অন্যান্য সার। 

চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ার সুযোগে সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে দেড় থেকে দুইগুণ বেশি  দামে কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করছেন সার ডিলারমও  ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে এমওপি সারের দাম বাড়ানো হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশী। খুচরা বাজারে ৫০ কেজির এক বস্তা এমওপি সার সরকারের দেয়া নির্ধারিত দাম ৭শ টাকা হলেও বিক্রি করা হচ্ছে ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা দরে। অনেক সময় সেটাও পাওয়া যাচ্ছে না। ডিএপিতে বস্তা প্রতি দাম বাড়িয়েছে ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা। শুধুমাত্র ইউরিয়াবাদে অন্যান্য সব ধরণের সারে মূল্য বৃদ্ধি করেছে ব্যবসায়ীরা। এরফলে এক প্রকার বাধ্য হয়ে তা কিনছেন প্রান্তিক কৃষকরা।

এদিকে সারের পাশাপাশি দ্বিগুণ মূল্যে ডিজেল ও কীটনাশক কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে অতিরিক্ত উৎপাদন খরচ নিয়ে চিন্তিত কৃষক। একসাথে কৃষির সাথে সম্পর্কিত সবধরণের জিনিষপত্রের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকদের এখন নাভিশ্বাস অবস্থা। তারা কিভাবে এই বাড়তি মূল্য সমন্বয় করবেন তা নিয়ে রয়েছেন ভীষণ দুশ্চিন্তায়। রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মীরেরবাড়ী এলাকার কৃষক আতাউর রহমান জানান, তিন দিন বিভিন্ন হাটেবাজারে ঘুরেও পটাশ (এমওপি) সার পাইলাম না। একই এলাকার জসমত আলী জানান, অনেক খুঁজে লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ী বাজার থেকে ১৪শ’ টাকায় এক বস্তা পটাশ সার কিনলাম। এত দাম বাড়লে কৃষক চলবে কিভাবে।

এদিকে নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর এলাকার কৃষক হারেজ আলী জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। এখন জমিতে অন্যান্য সারের সাথে পটাশ (এমওপি) সার দিতে হচ্ছে কিন্তু বাজারে পটাশ সার পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সময়মতো সার দিতে পারছেন না জমিতে। নাগেশ্বররী কচাকাটা বাজারে কেদার ইউনিয়নের ডিলার মেসার্স কাশেম ট্রেডাসে গিয়ে দেখা যায় দ্বিগুণ দামে এমওপি সার বিক্রি করছেন। 

জানতে চাইলে ডিলারের নিযুক্ত ব্যক্তি সাইদুল ইসলাম জানান, বেশি দামে সার বিক্রি করা ঠিক না তার দোকানের কর্মচারী ভুলে বিক্রি করে ফেলেছে। একই ইউনিয়নের সার ডিলার আল মামুন জানান, এমওপি সারের দাম অনেক বেশী হওয়ায় তিনি তা ক্রয় বিক্রিয় বন্ধ করে দিয়েছেন। 

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলার ৯ উপজেলায় বিএডিসি সার ডিলার রযেছে ১০৬জন, বিসিআইসি’র সার ডিলার ৯৪জন, খুচরা সার বিক্রেতা ২৭৩ জন এবং পাইকারী বিক্রেতা ১৪১ জন এবং খুচরা বিক্রেতা ১ হাজার ৯০৭ জন। এছাড়াও জেলায় কীটনাশক ডিলার রয়েছে ১ হাজার ২৬৩ জন এবং লাইসেন্সকৃত কীটনাশক বিক্রেতার সংখ্যা ২ হাজার ৪৮টি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. শামসুদ্দিন মিঞা জানান, চাহিদার তুলনায় সারের কম বরাদ্দ পাওয়ায় কিছুটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকট কিছু দিনের মধ্যে কেটে যাবে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর