১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৬:৫৫

বড়াইগ্রামে সংকট সৃষ্টি করে দ্বিগুণ দামে সার বিক্রির অভিযোগ

নাটোর প্রতিনিধি

বড়াইগ্রামে সংকট সৃষ্টি করে দ্বিগুণ দামে সার বিক্রির অভিযোগ

নাটোরের বড়াইগ্রামে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সরকার প্রদত্ত রাসায়নিক সার অধিক মূলে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ডিলার, সাবডিলার ও নন কার্ডধারী সার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। ফলে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। এতে চলতি মৌসুমে ধান চাষে চরম বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। 

জানা যায়, “সরকার প্রদত্ত সারের নির্ধারিত মূল্য প্রতি বস্তা (৫০) কেজি ইউরিয়া ১১০০ টাকা, টিএসপি ১১০০ টাকা, ডিএপি ৮০০ টাকা ও এমওপি ৭৫০ টাকা।” অথচ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে সার ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক দামে বিক্রয় করছে। উচ্চ দামে সার কিনতে হতাশায় ভুগছে কৃষকরা। কৃষকের এমন দুর্দশায় মনিটরিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ ডিলার, সাব-ডিলারের স্টক ও রেজিস্টার খাতায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তার মন্তব্য বা স্বাক্ষর নেই।  

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কয়েকজন কৃষক বলেন, “কৃষকরা প্রতি বস্তা ইউরিয়া ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায়, টিএসপি ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকায়, ডিএপি ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকায়, ও এমওপি ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রয় করছে। আমরাও অনুরুপ দামে ক্রয় করেছি।” 

তিরাইল এলাকার কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, “আমি কয়েক বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছি। কোনো ডিলার বা সাবডিলারের ঘরে সার পাইনি। তবে খুচরা বিক্রেতার দোকানে সরকারি রেটের চেয়ে প্রায় দেড় গুণ দামে সার কিনেছি। এতে কৃষক মরে শেষ হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নন কার্ডধারী কয়েকজন সার ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, যে ডিলার ও সাব-ডিলারের কাছে আমাদের রশিদবিহীন সরকারি রেটের অধিক মূল্যে সার ক্রয় করে আনতে হয়। আমরা তা বস্তা প্রতি কিছু লাভে কৃষকের কাছে বিক্রয় করি। তাদের নাম প্রকাশ করলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে আমাদের আর তারা সার দিবে না।  

উপজেলা সাব-ডিলার সভাপতি আকরাম হোসেন জানান, উপজেলায় ৭ ইউনিয়নে ১ জন করে ৭ জন এবং ২ পৌরতে ২ জন করে ৪ জন মোট ১১ জন বিসিআইসির মূল ডিলার রয়েছেন। প্রতি ইউনিয়নের বিসিআইসির মূল ডিলারের প্রাপ্ত সারের ৫০% সার ৯ ভাগে ভাগ করে তার ১ ভাগ ১ জন সাবডিলার পেয়ে থাকি। যেটা পরিমানে খুবই কম। কোন ইউনিয়নে ৯ জনের স্থলে ৬ থেকে ৮ জন সাব ডিলার থাকা সত্বেও ৯ ভাগের ১ ভাগ সার পেয়ে থাকি। যা আমরা সরকারী বিধি অনুসারে বিক্রি করে থাকি। অবশিষ্ট ৫০% সিংহ ভাগ সার বিসিআইসির মূল ডিলার নিজ দোকান হতে কৃষকের নাম ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরসহ মেমো ও রেজিস্টারের মাধ্যমে বিক্রয়ের নিয়ম থাকলেও তা অনুসরণ করে না। পরবর্তীতে মূল ডিলাররা বাকি সার নন কার্ডধারীদের কাছে গোপনে বিনা রশিদে বেশী দামে বিক্রয় করে। এজন্যই কৃষক বাজারে নন কার্ডধারীদের কাছ থেকে বেশি দামে সার ক্রয় করে। 

জোয়াড়ী ইউনিয়নের বিসিআইসির মূল ডিলার উর্মি টেডার্সের মালিক অজয় কুমার জানান, আমার অধীনে ৫ জন সাবডিলার আছে। তারমধ্যে ৩ জন নির্দিষ্ট জায়গায় আছে, অপর ২ জন নাই। একজনের থাকার কথা কুমরুলে অপর জনের কায়েমকোলা। কিন্তু তারা ২ জনেই আহমেদপুর বাজারে ব্যবসা করছে। সরকারী বিধি মোতাবেক রেজিস্টার খাতায় স্বাক্ষর করে সার নেওয়ার নিয়ম থাকলেও তারা স্বাক্ষর করে না। ভ্যান চালকের মাধ্যমে চিরকুট ও টাকা পাঠিয়ে সার নেয়। বাজারে যেহেতু থাকি পরিচিত কিছু নন কার্ডধারী সার ব্যবসায়ী সার নিতে আসলে না দিয়ে পারি না। তাই ২ থেকে ৪ বস্তা দিয়ে থাকি। এটা কৃষি অফিসারেরাও জানেন।

বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী জানান, কৃষি অফিসার ও ডিলার মিলে একটা সিন্ডিকেট তৈরি করেছে বড়াইগ্রামে। যার ফলে সারের কৃত্তিম সংকট তৈরি হয়েছে। বার বার উপজেলা মাসিক মিটিং-এ উনাকে সিন্ডিকেটের বিষয়ে সতর্ক করলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।

এ ব্যাপারে বড়াইগ্রামের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা জানান, সারের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য পৌর ও ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে উপসহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা সর্বক্ষণ বাজার মনিটরিং করছে। যদি কেউ মজুদ ও বেশী দামে বিক্রি করে তাহলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে। 


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর