১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৭:২৪

মরুভূমির সাম্মাম চাষে বাগেরহাটে কৃষকের সাফল্য

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

মরুভূমির সাম্মাম চাষে বাগেরহাটে কৃষকের সাফল্য

মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় ফল সাম্মাম রসালো মিষ্টি ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। মরুভূমির জনপ্রিয় ফল সাম্মাম চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন বাগেরহাটের মাল্লাহাট উপজেলার চর উদায়পুর গ্রামের মধুমতি এগ্রো ফার্মের মালিক শেখ ফয়সাল আহমেদ। বর্তমানে ১৫ বিঘা জমিতে সাম্মাম চাষ করে আয় করছেন বছরে ১৫ লাখ টাকা।

সরেজমিনে মোল্লাহাট উপজেলার উদায়পুর ইউনিয়নের চর উদায়পুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে ঝুলছে তরমুজের মতো দেখতে মরু অঞ্চলের পুষ্টিকর ফল সাম্মাম। মালচিং সিটের ভেতর লাগানো গাছ গুলো তুলে দেয়া হয়েছে মাচায়। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে পাকা সাম্মামের ঘ্রান। সাম্মাম দেখতে উপরটা যেমন হলুদ, ভিতরটা গাড় হলুদ রঙের। একেকটি সাম্মাম এর ওজন দুই থেকে তিন কেজির মতো।

সাম্মাম চাষি ফয়সাল আহমেদ বলেন, পড়াশুনা শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৫০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করতাম আমি। তবে কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চাকরি ছেড়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে মাত্র ৫০ হাজার টাকা পুজি নিয়ে ৪৫ শতক জমিতে কৃষি কাজ শুরু করি। প্রথমদিকে আমি দেশি বিভিন্ন সবজির চাষ শুরু করি। কিন্তু তাতে খুব বেশি লাভ না হওয়ায় সাম্মাম চাষ শুরু করি। প্রথম বছরেই সফলতা পাই। এরপর জমির পরিমাণ বাড়াতে থাকি। এখন আমার জমির পরিমাণ ১৫ বিঘা। এই জমিতে প্রায় ১০ হাজার সাম্মাম গাছ রয়েছে। দেশে সাম্মাম ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমার এখান থেকেই পাইকাররা ট্রাকে করে পার্শ্ববর্তী জেলা গোপালগঞ্জ ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে সাম্মাম বিক্রি করছে। এই ফলটি শীতকাল বাদে বছরে চারটি মৌসুমে ফল দিয়ে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা বাড়ে রমজান মাসে। আমার এই ফার্মে গাছের পরিচর্যার জন্য ১২ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। তাদের বেতনসহ আনুসাঙ্গিক খরচ মিটিয়ে বছরে আমার আয় ১৫ লাখ টাকা।

সাম্মাম গাছের পরিচর্যায় নিয়োজিত সালাম শেখ বলেন, আমরা ১২ জন শ্রমিক এখানে কাজ করি। প্রতিদিন সকালে স্থানীয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ফল বিক্রেতারা আমাদের এখান থেকে ফল কিনে নিয়ে যায়। প্রথম দিকে ফলন কম হলেও ধীরে ধীরে আমাদের ফার্মে ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মোল্লাহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিমেষ বালা বলেন, সাম্মাম মূলত মরু অঞ্চলের ফল। খেতে রসালো মিষ্টি হওয়ার পাশাপাশি এতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। আমাদের দেশে ফলটি সাম্মাম হিসাবে পরিচিতি পেলেও অনেকে এটাকে রকমেলন বা হানিডিউ মেলনও বলে। আমাদের দেশে এর খুব একটা  চাষ হয় না। তবে এখন অনেক কৃষক বিদেশি এই ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। ফয়সাল আহমেদ বাগেরহাটে প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে ফলটির চাষ শুরু করেছেন। আমরা কৃষি বিভাগ তাকে আধুনিক পদ্ধতিতে দেশি-বিদেশি ফলের চাষ করার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তার এমন সাফল্য দেখে অন্যান্য কৃষকরাও সাম্মাম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর