১৮ অক্টোবর, ২০২২ ১৭:৪০

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সখীপুরে ১০ লক্ষাধিক বৃক্ষ রোপন

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সখীপুরে ১০ লক্ষাধিক বৃক্ষ রোপন

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বনের ভেতর ফাঁকা জায়গায় ৪২ প্রজাতির দেশীয় ফলদ, বনজ এবং ওষুধি বৃক্ষ রোপন করেছে স্থানীয় বন বিভাগ। এতে বিলুপ্ত হওয়ার পথে নানা রকমের বন্য প্রাণীগুলো আবার বনে ফিরবে বলে মনে করছেন প্রাণী অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পরিবেশবিদরা মনে করছেন এই এলাকার লাল মাটি আর শালগজারি গাছে আচ্ছাদিত সবুজের ভেতর জন্মাবে আরও সবুজ। টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় এ উপজেলার ৭২০ হেক্টর জমিতে দশ লক্ষ আশি হাজার বৃক্ষ লাগানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তারা। 

উপজেলার বেলতলী এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শালগজারি বনের ভেতরে ফাঁকা জায়গাগুলোতে বেড়ে উঠছে আমলকি, অর্জুন, বহেড়া, হরিতকি, বাসক, নিম, লটকন, জাফরান, গর্জন, চাপালিশ,গাদিলা, পিতরাজ, সোনালু, কাঞ্চন, জলপাই, মহুয়া, কাঠবাদাম, গামার, কাজু বাদাম, শিমুল, ছাতিয়া, বেল, তেঁতুল ইত্যাদি প্রজাতির বৃক্ষ।  এভাবে হতেয়া রেঞ্জের কালমেঘা, কড়ইচালা, হতেয়া, কালিদাস, বহেড়াতৈলী রেঞ্জের এমএমচালা, কাকড়াজান, ডিবি গজারিয়া, বহেড়াতৈলী, বাঁশতৈল রেঞ্জের নলুয়া, পাথরঘাটা ও বংশীনগর বিট এলাকায় পৃথক ভাবে এই বৃক্ষগুলো লাগানোর দৃশ্য চোখে পড়ে।

কালমেঘা বিট কর্মকর্তা মো. মোতালেব মিয়া বলেন, অনেক আগে থেকেই এই দেশীয় প্রজাতির গাছগুলো বনের মধ্যেই ছিলো যা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। বনের সহায়ক হিসেবে ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য পূনরায় এই দেশীয় প্রজাতির গাছগুলো লাগাচ্ছে বন বিভাগ। আমার কালমেঘা বিট এলাকায় ১৪০ হেক্টর জমিতে এই গাছগুলো লাগানো হয়েছে। যা রক্ষানাবেক্ষনের জন্য প্রতিদিন ছুটে আসি বনের ভেতরে। 

ওই এলাকার মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, এক সময় এই বেলতলী জঙ্গলে বাঘ ও হরিন থাকতো। কালের বির্বতনে তা হারিয়ে গেলেও এখনো এই বনের ভেতরে বানর, বেজি, বাঘডাসা, হনু বিড়াল, কাঠ বিড়াল, শিয়াল এবং চিল, শকুন, ঘুঘুসহ নাম নাজানা অনেক পশু পাখি আছে এছাড়া দীর্ঘদিনের পুরাতন গুই সাপ, দাঁড়াশ, শঙ্খচুড় বা রাজগোখরা, শাঙ্খিনী সাপসহ নানা প্রজাতির সাপ দেখতে পাই। তারা খাবার না পেয়ে মাঝেমধ্যে লোকালয়ে চলে আসে। 

বহেড়াতৈলী রেঞ্জকর্মকর্তা মো, এরাশাদুল আলম বলেন, এই দেশীয় প্রজতির গাছগুলো বনের সহায়ক গাছ হিসেবে রোপন করা হয়েছে। এগুলো বড় হলে বন্য পশু পাখিগুলো বন থেকে খাবার সংগ্রহ করবে তাই তারা আর লোকালয়ে আসবে না।

হতেয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ বলেন, অফিসিয়াল কাজ শেষ করে সুযোগ পেলেই চলে যাই বনের ভেতর। গাছগুলো দেখে খুব ভালো লাগে। আমি ও আমার স্টাফ একদিন বদলি হয়ে যাবো কিন্তু গাছগুলো আমাদের স্মৃতি হয়ে থাকবে। এই এলাকার মানুষ উপকার ভোগ করবে, তাতেই আমাদের তৃপ্তি। 

বাঁশতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশে আমরা কেবল গাছগুলো লাগিয়েছি। এখন গাছগুলো বেড়ে উঠতে স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতা চাই। তবেই সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে।  

টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান বলেন, পবিবেশ ভারসাম্য হারালে জীববৈচিত্রের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। আমাদের বেঁচে থাকতে হলে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। এছাড়া বর্তমান সরকার আমাদের দেশীয় প্রজাতির গাছগুলো বাঁচিয়ে রাখতে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। টাঙ্গাইলের সখীপুর অঞ্চলের তিনটি রেঞ্জের আওতায়  সেই প্রকল্পে এই দুই বছরে ৭২০ হেক্টর জমিতে চারা লাগানো হয়েছে এবং আগামী বছর আরও লাগানো হবে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর