শিরোনাম
৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৯:২৫

পাবনায় শুরু হয়েছে দলবেঁধে মাছ ধরার ‘বাউত উৎসব’

এস এ আসাদ, পাবনা:

পাবনায় শুরু হয়েছে দলবেঁধে মাছ ধরার ‘বাউত উৎসব’

চলনবিল অধ্যূষিত পাবনার ভাঙ্গুড়ায় মাছ ধরার বাউত উৎসবে (স্থানীয় ভাষায়) হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। হেমন্তের সকালে বিল অভিমুখে মানুষের ঢল। পূর্ব আকাশে সূর্য উকি দেওয়ার অগেই বিলপাড়ে হাজারো মানুষ। ঘন কুয়াশার চাঁদরে কিছু বোঝা না গেলেও বিলে একে একে সবাই নেমে পরছেন, উদ্দেশ্য একটাই মাছ শিকার করা। 

প্রতিবছরের মতো শনিবার উপজেলার রহুলবিলে ভোড় থেকে শুরু হয় এই কর্মযজ্ঞ, এটিই বাউত উৎসব। মাছ ধরার নানা উপকরণ নিয়ে দূর দূরান্ত থেকে আসা নানা বয়সী মানুষ মাছ ধরতে আসে বিলে। শৌখিন এসব মাছ শিকারিদের এ যেন এক মিলনমেলায় পরিণত হয় বিলপাড়। 

ভোরের আলোয় রুহুল বিলের কানায় কানায় পরিপূর্ণ শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষ। একেজন একেক ধরনের উপকরণ হাতে। কেউ পলো, ধর্মজাল, চাকজাল, ঠেলাজালসহ নানা ধরনের মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে সবাই নেমে পড়েন বিলের পানিতে। কেউ শীতে জড়োসড়ো অবস্থায় বিল পাড়ে আগুন জ্বালিয়ে তা নিবারনের চেষ্টা করছেন আবার কেউ কেউ মাছ ধরতে পেরে আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে শীতকে বিদায় জানাচ্ছেন। এ উৎসব যেন এক মিলন উৎসবে পরিনত হয়েছে। 

বিলপাড়ে আসা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার বেলদহ গ্রামের রতন মোল্লা বলেন, পাবনার সীমান্তবর্তী রুহুল বিলে এসেছি শীতের রাতে মাছ ধরার আশায়। এই বিলে প্রতি বছর বাউত উৎসব হয়। এটা আমাদের এলাকার সবাই জানে, তাই শখ করে মাছ ধরতে এসেছি। শীতের ভেতর এসেছি ভাই, মাছ পেলে কোনো শীতই লাগে না আমাদের। 

পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর উপজেলার হাদল গ্রামের মানিক মিয়া এসেছেন বিলে। তিনি নাকি মাছ কপালে মানুষ। আশেপাশের সব বিলেই যান তিনি ছোটবেলা থেকেই। বিলে বাউত নামার খবর পেলেই তিন ছুটে যান, তবে এ জীবনে যতবারই তিনি বাউতে এসেছেন, কখনো খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়নি তাকে। পলো দিয়ে ১২ কেজি ওজনের বোয়াল মাছ ধরারও অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। 

ঈশ্বরদী উপজেলার মানিকহাট গ্রাম থেকে খুব ভোরে শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ৫ টি নসিমন নিয়ে ৪৫ জনের মতো এসেছেন বাউতে মাছ ধরতে। তারা জানান, প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূর থেকে এখানে মাছ শিকার করতে এসেছি। আমাদের অধিকাংশই পলো নিয়ে এসেছি, মাছ পাবোই।

এ রকম শুধু পাবনা জেলারই নয়, পার্শ্ববর্তী নাটোর, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ আসেন এই উৎসবে। আগতরা জানান, বাউত উৎসব প্রতি বছর নভেম্বর মাসের শেষের দিকে শুরু হয়ে চলে জানুয়ারী মাস পর্যন্ত। এটি আমাদের মাছ ধরার প্রাণের উৎসব। সকল শ্রেণিপেশার মানুষ এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। মাছ শিকারের চেয়ে সবাই মিলে দল বেঁধে বিলের পানিতে নেমে আনন্দ উপভোগ করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। 

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, এভাবে মাছ শিকার করায় মাছের ক্ষতি হলেও এ এলাকার এটা আদি উৎসব, বাঁধা দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। তবে মাছের বংশবিস্তারের জন্য ক্ষতিকর। 

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, বাউত উৎসব এই এলাকার অতীত ঐতিহ্য, উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হলো রুহুল বিল। শুনেছি প্রতি বছরের এই সময়ে এই বিলে মাছ ধরার উৎসব হয়। হাজার হাজার মানুষ আসে বাউত উৎসবে যোগ দিতে। 

তিনি আরো বলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় বর্তমান সরকারের প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মাছের অভয়ারণ্য হিসাবে খ্যাত এই অঞ্চলের নির্ধারিত সীমারেখায় কোনো অসাধু মানুষ মাছ ধরতে না পারেন সে বিষয়ে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের নজরদারি রাখার তাগিদও দেন তিনি।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর