শিরোনাম
১০ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৫:৪৮

আমনের বাম্পার ফলন, হাটে হাটে ধানের স্তুপ

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া:

আমনের বাম্পার ফলন, হাটে হাটে ধানের স্তুপ

বগুড়ায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার বিভিন্ন হাটে ধানের স্তুপ হয়ে আছে। ভালো দাম পাওয়ায় আমন চাষিরা ধান বিক্রির পর হাটে ধানের আমদানি হয়েছে বেশি। ধানের আমদানি হলেও ধানের পাইকারি ক্রেতা কমে গেছে। মিল মালিকরা বলছেন, সরকারিভাবে বেধে নিয়মে ধান কেনাবেচা করবে। 

জানা যায়, বগুড়া জেলায় সারের সংকট না থাকায় চাষিরা পুরো দমে আমন চাষ করে। জেলায় সময়মত সার পাওয়ায় আমনের চাষিরা বাম্পার ফলন পাওয়ার আশায় মাঠে মাঠে শ্রম দিয়ে যায়। বগুড়া জেলা শহরের শাখারিয়া, সাবগ্রাম, নন্দীগ্রাম সড়ক, কাহালু সড়ক, শিবগঞ্জ সড়কসহ জেলায় ধান কাটা মাড়ায় শেষ করে হাটে হাটে ধান বিক্রি হয়েছে। চাষিরা ধানের ভরা মৌসুমে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত ধান বিক্রি করেছেন। হাটে হাটে ধানের দাম ছিল চড়া। বগুড়ায় ধানের উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণে জেলার সকল হাটেই ধানের আমদানি ভালো হয়েছে। নভেম্বর মাসে ধানের ভালো দাম থাকার পর ডিসেম্বর মাসে এসে প্রতি মনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দাম মন প্রতি কমে যায়। শনিবার বগুড়ার বিভিন্ন হাটে ধান বিক্রি হয়েছে ব্রি-৪৯, ১ হাজার ৩৫০ টাকা প্রতিমন। কাটারিভোগ ১হাজার ৫৫০ টাকা মন, স্বর্ণা-৫ বিক্রি হয়েছে ১হাজার ১০০ থেকে ১হাজার১৫০ টাকা মন। 

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, বগুড়ায় মোট আবাদী জমির পরিমান ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৩০ হেক্টর। এরমধ্যে এবার জেলায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে মোট চাষাবাদ হয় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫২৫ হেক্টর বেশি। চলতি বছর চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৮১৩ মেট্রিকটন। যা গত বছরের চেয়ে ৫৬ হাজার ১৩১ মেট্রিকটন বেশি। কৃষি বিভাগ আশা করছে চলতি বছর প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন আমন চাল আকারে ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সারের কোন সংকট ছিল না। চাহিদা অনুযায়ী সার সরবরাহ রয়েছে। চাহিদার বিপরীতে নিয়মিতভাবে সার মাসের শুরুতেই বরাদ্দ প্রদান করা হয়। সারের সংকট না থাকায় সময়মত চাষিরা আমন চাষ করেছে।

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার আমন চাষী মোঃ মুসা মিয়া জানান, সারের কোন সমস্যা ছিল না। সময়মত আমন চাষের পর যতেœর পর ধান পেকে কাটামাড়ায় শেষ করা হয়েছে। শুকনা ধান হাটে ১হাজার ৫৫০ টাকা মন বিক্রি করা হয়েছে। এবছর ধানের দাম হাটে ভালো ছিল। এখন আবার ধানের দাম কমে এসেছে। ভরা মৌসুমে হাটে হাটে ধান রয়েছে প্রচুর। 

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, জেলায় আমন চাষিরা দক্ষ। দক্ষ হওয়ার কারণে প্রতিবছরই আমনের ভালো ফলন পাওয়া যায়। এবারো জেলায় বাম্পার ফলন পাওয়া গেছে। বগুড়ার চাষ হওয়া রোপা আমন ধানের বেশিরভাগই উচ্চ ফলনশীল এবং হাইব্রিড জাতের। এসব জাতের মধ্যে ব্রি ধান ৮৭ ও ৯০, বিনা ধান ১৭ সহ স্বর্ণা, ব্রি ধান-৪৫, রঞ্জিত, কাটারিভোগ ও স্থানীয় সুগন্ধি জাতের ধান চাষ হয়েছে। শুরুতে বৃষ্টির পানি নিয়ে শঙ্কা থাকলেও পরের আবহাওয়া ছিল আমন চাষের অনুকূলে। ফলে কোন দুর্যোগ ছাড়াই কৃষকরা ঘরে ধান তুলেছে। জেলার হাটে বাজারে প্রচুর ধানের আমদানি হয়েছে। 

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ রাহেলা পারভীন জানান, জেলায় সার, কীটনাশকের অভাব ছিল না। বগুড়া অঞ্চলেরর আমন ধানকাটা মাড়ায় প্রায় শেষ। তবে মাঠে স্থানীয়জাতের কিছু ধান রয়েছে। সেগুলোও কাটার সময় হয়ে গেছে। জেলায় প্রতিবছরই আমনের বাম্পার ফলন হয়ে থাকে। এবছর ধানের জমিতে রোগ বালাই কম থাকায় আমনের বাম্পার ফলন পাওয়া গেছে। যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তার বেশি পরিমানে ধানের ফলন পাওয়া গেছে। এবছর গড়ে বিঘা প্রতি ১৮ মন করে ধান পাওয়া গেছে। চলতি বছর চাষিরা ধানের ভালো দামও পেয়েছে। আমন ধান কাটার পর এখন সেই জমিতে চাষিরা শীতকালিন বিভিন্ন সবজি চাষ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, আমনের ভালো উৎপাদন পেতে বিভিন্ন পরামর্শসহ প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে কৃষকদের পাশে থেকেছেন তারা।

বাংলাদেশ অটো মেজর হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি এটিএম আমিনুল হক জানান, সরকারিভাবে বেধে দেওয়া নিয়ম অনুয়ায়ি ধান কেনা হবে। এর বেশি ধান কেনা হবে না। যেহেতু বগুড়ায় আমনের ভালো ফলন হয়ে থাকে। সেই হিসেবে হাটে হাটে এখন প্রচুর ধান রয়েছে। মিল মালিকরা তাদের নিয়মমত ধান কেনাবেচা করবে। 

বিডি প্রতিদিন/এএম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর