শিরোনাম
১৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৫:৫৯

পরিকল্পিত কৃষিতে সাফল্য সুমনের

রাহাত খান, বরিশাল:

পরিকল্পিত কৃষিতে সাফল্য সুমনের

৩৭ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন আবু বক্কর সিদ্দিক সুমন নামে একজন উদ্যোক্তা। ৩ বছর আগে দেশে এসে একটি ঘের দিয়ে তার কৃষির স্বপ্ন বুনন শুরু। এরপর সেই ঘেরের তীরের বিদেশি জাতের পেঁপে, মিস্টি কুমড়া, লাউ, করল্লা ও কচুঁর লতিসহ বিভিন্ন ধরনের শাঁক সবজি উৎপাদন করে এখন তিনি সবার চোখে একজন আদর্শ কৃষক। ৩৭ বছর বিদেশে আয়ের চেয়েও বেশি লাভবান হচ্ছেন কৃষিতে। তার এই সাফল্য উদ্বুদ্ধ করছে অন্যদের। সরাসরি ক্ষেত থেকে বিষমুক্ত শাক-সবজি কিনে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দাসহ পাইকররা। সঠিক পরিকল্পনায় কৃষি করলে সাফল্য অনিবার্য বলছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। 

১৯৮২ সালে কাজের সন্ধানে লেবানন গিয়েছিলেন বরিশালের বাবুগঞ্জের বায়লাখালী গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক সুমন। এরপর আফ্রিকা ও মধপ্রাচ্যের ২২টি দেশে কাজ করে আয়ের বেশিরভাগ অর্থ অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসায় ব্যয় করেও প্রিয়তমাকে বাঁচাতে পারেননি। ৩৭ বছরের প্রবাস জীবনের ইতি টেনে ২০০০ সালে দেশে ফিরে নিজের জমিতে একটি মাছের ঘের করেন সুমন। ঘেরের চার তীরে কাশ্মীরি, টপ লেডি ও শাহী জাতের পেঁপে চাষ শুরু করেন তিনি। ৫ মাসে পেঁপেতে ফলন আসতে শুরু করে। এরপর আর পেঁছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সহকৃষি হিসেবে ঘেরের পাশে শ্রীলংকান মিষ্টি কুমড়া, ভুটানের লাউ, করল্লা, কুঁচর লতি, মধুকোষ ও সীম সহ হাইব্রীড জাতের শাঁক ও সবজি চাষ শুরু করেন তিনি। ২০২১ সালে টপ লেডি ও শাহী জাতের পেঁপে বিক্রি করে ৬ লাখ টাকা এবং এ বছর আয় করেছেন ১৫ লাখ টাকা। সাথে মাছ, মিষ্টি কুমড়া, লাউ ও অন্য শাক-সবজী বিক্রি করে এখন তিনি একজন স্বচ্ছল কৃষক। বিদেশী জাতের পেপে চারা উৎপাদন করেও প্রতিপিস ৪০ টাকা করে বিক্রি করেন তিনি। এবার ১ লাখ পেঁপে চারার অর্ডার আছে তার। 

সুমন জানান, শুধু বিক্রি নয়, স্থানীয় বিভিন্ন এতিমখানা সহ অসহায়-দুস্থদের মাঝে প্রতি সপ্তাহে বিনামূল্যে মাছ-শাক-সবজি বিতরন এবং বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিদেশী জাতের পেঁপে চারা রোপন করে দিচ্ছেন তিনি। গত দুই বছরে কৃষিতে বিনিয়োগের কযকেগুণ লাভ হওয়ায় তরুনদের কৃষি কাজে উদ্বুদ্ধ করছেন সুমন। দিচ্ছেন নানা পরামর্শ। প্রতিদিন তার সফল খামার দেখতে আসছেন অনেকে। 

স্থানীয় যুবক সজিব হোসেন বলেন, তরুনরা মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে চাকুরী না পেয়ে হতাশ হয়ে পরে। গ্রামে থেকেও হতাশ না হয়ে পরিকল্পিত কৃষি করলে স্বাবলম্বি হওয়া সম্ভব। 

সুমনের সফল কৃষি দেখে আশপাশের অনেকেই কৃষিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বলে জানান ওই গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহীন। 

কাঁচা মালের বেপারী মো. বাচ্চু সিকদার বলেন, গত ৩ বছর ধরে সুমনের ক্ষেত থেকে নিজের হাতে বিষমুক্ত সবজি তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। এতে তিনি নিজে এবং খামারী দুজনই লাভবান হচ্ছেন। সরাসরি ক্ষেত থেকে কম দামে বিষমুক্ত শাঁক-সবজী কিনতে পেরে খুশী স্থানীয় বাসিন্দারাও। 

এ বিষয়ে বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, সঠিক পরিকল্পনা করে অল্প জমিতে দেশি-বিদেশি শাঁক সবজি চাষ করে সফল কৃষক হওয়া সম্ভব। যার উদাহরণ কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক সুমন। কৃষিতে আগ্রহীদের সব ধরনের সহায়তা দেয়ার কথা বলেন তিনি। 

মাত্র দেড় একর জমিতে বর্তমানে দুটি ঘেরসহ স্বপ্নের কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন প্রবাস ফেরত সুমন। 

বিডি প্রতিদিন/এএম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর