এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে যে পরিমাণ পানি লাগে এর চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ পানি ব্যবহার করছেন কৃষকরা। এছাড়া বোরো মৌসুমে জমিতে সেচ দিতে অপরিকল্পিতভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলনের ফলে প্রতিবছরই রংপুরসহ আশপাশ এলাকার পানিরস্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। প্রতিবছর রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ১২ হাজার কোটি লিটার বেশি পানি অপচয় হচ্ছে অজ্ঞতার কারণে। ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানিরস্তর নেমে প্রকৃতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিকেজি বোরো ধান উৎপাদনে ১২০০ থেকে ২০০০ লিটার পানির খরচ করলেই হয়ে যায়। কিন্তু কৃষকরা তা না মেনে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার লিটার পানি খরচ করে ১ কেজি ধান উৎপাদন করছেন।
রংপুর অঞ্চলে ৫ জেলায় ৫ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এ পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ৩০ লাখ মেট্রিক টন ধান পাওয়া যাবে। প্রতি কেজিতে ধান উৎপাদনে ১৫০০ থেকে ২০০০ হাজার লিটার পানি বেশি খরচ হচ্ছে। সেই হিসেবে অতিরিক্ত পানি খরচ হচ্ছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি লিটার। এসব পানি গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে উত্তোলন করে খরচ করা হচ্ছে। পানির অপচয় রোধে সরকার কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা আইন করেছে। আইনটি পাশ হয়েছে ২০১৮ সনের জানুয়ারি মাসে। কিন্তু ৫ বছরেও এই আইনটি এ অঞ্চলে বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। ফলে লাখ লাখ সেচ যন্ত্র দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত পানি উত্তোলন বন্ধ করা হচ্ছে না।তবে কৃষি বিভাগ বলছে, নতুন করে গভীর নলকূপ বসানোর অনুমতি দেয়া হচ্ছে না।
রংপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর থেকে এ অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানিরস্তর আগাম নেমে যেতে শুরু করে। ১০ বছর আগে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে পানির স্তর ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীরে থাকলে এখন অনেক স্থানে পানির স্তর ২৫ থেকে ৩০ ফুট নিচেও পাওয়া যায় না। পানির প্রবাহ যখন স্বাভাবিক থাকে তখন এ অঞ্চলে পানিরস্তর ১২ ফুট নিচে পাওয়া যায়। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করার ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রমতে, এই অঞ্চলে সেচ মৌসুমে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে পানি উত্তোলন করে জমিতে সেচ দেয়া হয়। এর অধিকাংশই অপরিকল্পিত ভাবে বসানো হয়েছে। যা দিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি খরচ করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের বুড়িহাট হটিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু সায়েম এ প্রসঙ্গে বলেন, ধানগাছ কখনও জলজ উদ্ভিদ নয়। তবে ধান গাছ পানি পছন্দ করে। কৃষকরা না বুঝেই এই পানি খরচ করছেন। এর পিছনেও একটি কারণ রয়েছে। কৃষকরা জমিতে সেচ দেন চুক্তিভিক্তক। চুক্তি মতে ৪ থেকে ৬ বারও জমি সেচ দেয়া হয়। এতে পানি কতটুকু খরচ হল কৃষক এবং পাম্প অপারেটর কেউ বুঝতে পারে না। এ বিষয়ে কৃষক ও পাম্প অপারেটরদের সচেতন করা জরুরি।
বিডি প্রতিদিন/এএম