১৫ জুলাই, ২০২৩ ১৬:৫৮

হাবিপ্রবির গবেষণাগারে ইনকিউবেটরে ফুটলো উটপাখির বাচ্চা

দিনাজপুর প্রতিনিধি

হাবিপ্রবির গবেষণাগারে ইনকিউবেটরে ফুটলো উটপাখির বাচ্চা

দেশে প্রথমবারের মত গবেষণাগারের ইনকিউবেটরে উটপাখির ডিম থেকে ফুটলো বাচ্চা। এতে সফলতা পেলো গবেষকরা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে উটপাখির বংশবিস্তারে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিলো।

হাবিপ্রবিতে আড়াই বছর ধরে উটপাখির বংশবৃদ্ধি, বাণিজ্যিকভাবে উটপাখির চাষ করে দেশে প্রোটিনের জোগান দেওয়ার বিষয়ে গবেষণা শুরু হয়। ২০১৯ সালে প্রথম হাবিপ্রবির খামারে একটি উটপাখি ডিম দেয়। পরে ডিমটি ভেঙে যায়। অবশেষে ইনকিউটারে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টায় সফলতা পেলেন তারা।

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) জেনেটিকস অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের গবেষণাগারে ইনকিউবেটরে ১১ জুলাই উটপাখির ডিম থেকে একটি বাচ্চা ফোটে। বাচ্চাটির ওজন ৯৪৮ গ্রাম। দেড়মাস আগে ইনকিউবেটরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ১৯টি ডিম বসানো হয়। বাচ্চাটির সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করছেন পিএইচডি গবেষক খন্দকার তৌহিদুল ইসলাম। 

এ গবেষণার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন হাবিপ্রবির জেনেটিকস অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে রাজশাহী সায়েন্স এন্ড টেকনোলজী ইউনিভার্সিটি (আরএসটিইউ) ভিসি এম এ গাফফার, সুপারভাইজার উম্মে সালমা, হাবিপ্রবির জেনেটিকস অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম ও উটপাখির খামারি এলমিস অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী সুলতান ইফতেখার ওয়ালী।

জেনেটিক্স অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হাবিপ্রবিতে ২০১৫ সালের শেষের দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রথম দুটি উটপাখির বাচ্চা আনা হয়। পরে ছোট-বড় মিলে আরও ১৯টি উটপাখি আনা হয়। হাবিপ্রবির ক্যাম্পাসেই ভেটেরিনারি ভবনসংলগ্ন এক বিঘা জমিতে খামার স্থাপন করে গবেষণা শুরু করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোলাহল পরিবেশে গবেষণা বাধাগ্রস্থ হওয়া ও শিক্ষার্থীদের গবেষণায় ব্যাঘাত ঘটায় ২০২১ সালে সদর উপজেলার গোপালগঞ্জের রানীগঞ্জ এলাকায় খামারি ও ব্যবসায়ী সুলতান ইফতেখার ওয়ালীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি হয়। এরপর উটপাখিগুলো তার খামারে লালনপালন হতে থাকে। ওই খামারে উৎপাদিত ডিম থেকেই বাচ্চা ফোটানো হয়েছে।

হাবিপ্রবির জেনেটিকস অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে রাজশাহী সায়েন্স এন্ড টেকনোলজী ইউনিভার্সিটি (আরএসটিইউ) ভিসি এম এ গাফফার বলেন, ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ২১টি উটপাখির বাচ্চা এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি ভবনসংলগ্ন এক বিঘা জমিতে খামার করে গবেষণা শুরু করা হয়। ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রথম হাবিপ্রবির খামারে একটি উটপাখি ডিম দেয়। ডিমের ওজন ছিল ১ কেজি ১০০ গ্রাম। পরে ডিমটি মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়। 

তিনি বলেন, সাফারি পার্কে উটপাখির দেওয়া ডিম থেকে প্রাকৃতিকভাবে বাচ্চা ফুটিয়েও বাঁচানো যায়নি। নরসিংদীতে একটি ফার্মেও সফল হওয়া যায়নি। প্রথমবারের মতো হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিশ্ববিদ্যালয় ইনকিউবেটরে বাচ্চা ফোটাতে সফল হয়েছে। 

এ গবেষক আরও বলেন, একটি উটপাখির বাচ্চা আমদানিতে খরচ হতো ৪০-৫০ হাজার টাকা। এ সফলতা ধরে রাখতে পারলে ১০-১৫ হাজার টাকায় একেকটি বাচ্চা আগ্রহী খামারিদের দেওয়া সম্ভব হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার সূত্রে জানা যায়, উটপাখির বৈজ্ঞানিক নাম ‘স্ট্রথিও ক্যামেলাস’। এর জন্মস্থান আফ্রিকা অঞ্চলে। মরুভূমির উষ্ণ আবহাওয়ায় উটপাখির প্রচন্ড গরম সহ্য করার ক্ষমতা যেমন আছে, তেমনি বৃষ্টি ও শীতপ্রধান এলাকায়ও উটপাখি সহজেই খাপ খাইয়ে চলতে পারে। উটপাখির একটি ডিমের ওজন এক থেকে দুই কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। উটপাখির ওজন ৮০-১৫০ কেজি এবং উচ্চতা ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৮ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ডিম দেওয়ার সময় মার্চ-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। মৌসুমে একেকটি উটপাখি ৬০-৮০টি পর্যন্ত ডিম দেয়। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে সময় লাগে ৪০-৪২ দিন।

এ ব্যাপারে খামারি সুলতান ইফতেখার ওয়ালী বলেন, উটপাখিসহ নানা পশুপাখি তার খামারে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-গবেষক তাদের গবেষণাকাজে খামারে আসেন। তার খামারে এখন ১৪টি উটপাখি রয়েছে। ডিম পাড়লেই গবেষণাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন তিনি।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর