২৭ আগস্ট, ২০২৩ ১৪:৫৪

দুমকিতে রোপা আমনের বীজ সংকট, বিপাকে কৃষকরা

দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

দুমকিতে রোপা আমনের বীজ সংকট, বিপাকে কৃষকরা

পটুয়াখালীর দুমকিতে টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতায় বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রোপা আমন বীজের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ক্ষেত প্রস্তুত করেও বীজ সংকটের কারণে চাষের জমি খালি পড়ে আছে। এতে করে উপজেলার প্রধান ফসল আমন চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহজুড়ে পটুয়াখালীতে ৪৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এ ছাড়া আগস্ট মাসে প্রায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে দুমকিসহ দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে বেশিরভাগ বীজ নষ্ট হয়ে গেছে।

কৃষকরা জানিয়েছেন, যেসব কৃষক অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে বীজতলা তৈরি করেছিলেন তাদের বীজ নষ্ট হয়নি। এসব বীজ কিনে আনছেন অনেকে। এক সের আমন বীজ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে বিক্রি করছেন অনেক কৃষক। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। বীজ কিনে কিছু কৃষক জমিতে রোপণ করলেও বিপুল পরিমাণ জমির বীজের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। ঘাটতি মেটানো সম্ভব না হওয়ায় অনেকের জমি অনাবাদি থেকে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ উপজেলায় চলতি বছর মোট ৬৬৭০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর মধ্যে ৩৭৯০ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল ও ২৮৮০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

দুমকি উপজেলার ৫ ইউনিয়নসহ দক্ষিণ উপকূলের কৃষকদের প্রধান ফসল রোপা আমন। সরকারি উদ্যোগে এ অঞ্চলে কৃষকদের বীজ দিয়ে সহায়তা করে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় ৫৫ ভাগ জমিতে বি-আর, ব্রি ও বিনা এই তিন জাতের উফশী ধান আবাদ করা হয়। এ ছাড়া বাকি ৪৫ ভাগ জমিতে আবাদ হয় স্থানীয় জাতের রোপা আমন।

উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ঝাটরা গ্রামের কৃষক আ. জব্বার সিকদার বলেন, ‘আমনের জন্য দুই একর জমিতে বীজতলা করছি। বৃষ্টিতে হালচাষ করতে পারি নাই। এখন পানি কমছে, চাষবাস কইরা জমিতে বীজ লাগাতে হবে। কিন্ত বীজ সব পইচ্চা নষ্ট হইয়া গ্যাছে। এখন নতুন করে বীজ করারও সময় নাই। তাই ক্ষেত অনাবাদি পড়ে আছে। চড়া দামে বীজ কিনে এনে রোপণ করতে হবে।’

উপজেলার মুরাদিয়া, শ্রীরামপুর, লেবুখালী ও পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, আমনের ক্ষেত বীজ রোপণের জন্য প্রস্তুত করা হলেও বীজের অভাবে মাঠ খালি পড়ে আছে। ওইসব জমির মালিকরা বীজ সংগ্রহের জন্য দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

লেবুখালী ইউনিয়নের আঠারগাছিয়া গ্রামের কৃষক খলিল সিকদার বলেন, আমনের ক্ষেতে এখন বীজ রোপণের উপযুক্ত সময়। জমি প্রস্তুত করছি, কিন্তু বীজ নষ্ট হওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে। বীজের অভাবে জমি রোপণ করতে পারছেন না। চরবয়েড়া গ্রামের কৃষক ছালাম হাওলাদার বীজ কিনতে না পারলে প্রায় তিন একর জমি এবার খালি থাকার শঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. ইমরান বলেন, বীজ সংকটের তথ্য সঠিক নয়। অতিবৃষ্টিতে কিছু কিছু বীজতলা নষ্ট হলেও শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা সরকারিভাবে কৃষকদের আমনের বীজ সরবরাহ করেছিলাম এবং বীজ বপনের সময় উঁচু জমি নির্বাচনের পরামর্শও দিয়েছি। সে অনুযায়ী চলতি বছর অনেক কৃষক বেশি বেশি বীজ করেছেন। যাদের অতিরিক্ত বীজ আছে, তাদের কাছ থেকে অনেক কৃষকরা ইতিমধ্যে বীজ কিনেছেন। এখনো অনেকের কাছে বীজ আছে দুঃচিন্তার কোনো কারণ নেই।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

সর্বশেষ খবর