৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৭:০২

আগাম জাতের সবজির চারা উৎপাদনে মিলছে সফলতা

আবদুর রহমান টুলু , বগুড়া

আগাম জাতের সবজির চারা উৎপাদনে মিলছে সফলতা

বগুড়ায় আগাম জাতের সবজির সাড়ে দশ কোটি টাকার চারা বিক্রি করছেন কৃষকরা। জেলার শাজাহানপুর উপজেলার শাহ নগর গ্রামে চাষীরা ৩০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩০০টির বেশি নার্সারিতে এসব চারা উৎপাদন করে যাচ্ছেন।

এই মৌসুমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে চাষিরা শীতকালীন আগাম জাতের সবজির চারা বিক্রি করে থাকেন। চাষীরা প্রথম ধাপে চারা বিক্রি শুরু করেন। এরপর দ্বিতীয় ধাপে পুরোদমে বিক্রির দুম পড়ে যায়। আর তৃতীয় ধাপে এসে তুলনামূলক কম বিক্রি হয়ে থাকে।
 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বগুড়া জেলায় শাজাহানপুর উপজেলার শাহানগর সবজি নার্সারি পল্লীতে  কৃষকতের পদচারণায় এখন মুখর। শাহ নগরে সবজি চারা পল্লীতে চারা ভলো হওয়ায় নতুন নতুন জেলা থেকে কৃষকরা আসছেন চারা নিতে। এখানে ৩০০টিরও বেশি নার্সারি থেকে মরিচ, বেগুন টামেটো, ফুল কপি, বাাঁধা কপি, পালং শাকের চারা কিনতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার কৃষক এসে অবস্থান করছেন শাহ নগরে। গত ৩০ বছর আগে স্বল্প পরিসরে সবজি চারা উৎপাদন হতো এই এলাকায়। কিন্তু  এখন  উপজেলার, কামারপাড়া, মোস্তাইল ও শাহ নগরের অঞ্চল জুড়ে সবজি চারার চাষ করছেন নার্সারি মালিকরা।
 
জানা যায়, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শাহনগর এলাকায় গড়ে ওঠেছে দেশের সর্ব বৃহৎ সবজি নার্সারি পল্লী। এখানে রীতিমতো সবজির চারা উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। ১৯৮৫ সালের দিকে প্রথমে শাহনগর বড়পাথার এলাকায় সবজি নার্সারি ব্যবসা শুরু হয়। বর্তমানে শাহনগর, বড়পাথার, চুপিনগর, দুরুলিয়া, বৃ-কুষ্টিয়া, খোট্রাপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামজুড়ে গড়ে উঠেছে প্রায় ৩০০টি ছোট বড় নার্সারি। এখানে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, পেঁপেসহ হাইব্রিড জাতের ৮ থেকে ৯ রকমের মরিচের চারা উৎপাদন করা হয়। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষসহ হাজারো মানুষের। শাহনগরের নার্সারি পল্লী থেকে দেশের প্রায় ৪০টি জেলা থেকে চারা নিতে ভিড় করছেন কৃষকরা। নার্সারিগুলো ঘুরে ঘুরে পছন্দের চারা সংগ্রহ করছেন তারা। বছরের আগস্ট মাস  থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আগাম শীতকালীন সবজি চারা নিতে ক্রেতায় মুখরিত থাকে  এ অঞ্চল।

শীতকালীন আগাম সবজি বীজতলা বৃষ্টি থেকে রক্ষায় বাঁশের তৈরি ‘বেতি’গুলো রিংয়ের মতো বসিয়ে উপরে সাদা, কালো পলিথিন দিয়ে পুরো বীজতলা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বীজতলা বীজ ফেলার পর ঝুরঝুরে মাটি ছড়িয়ে দিতে হয়। বীজতলা প্রস্তুতে জমির মাঝ বরাবর নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ছোট ছোট আইল ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের নালা তৈরি করে বীজ বপন করা হয়েছে।
 
শাজাহানপুর উপজেলার চাষি আশরাফুল ইসলাম জানান, আড়াই বিঘা জমিতে এবার বিভিন্ন জাতের মরিচ, টমেটো, বেগুন, বাধা কপি, ফুলকপি চারা লাগিয়েছেন তিনি। আবহাওয়া ভালো থাকলে সবজির চারা বিক্রিতে লাভও ভালো হবে। সে আশা নিয়ে সেচ, সার, ও কীটনাশক প্রয়োগ করে চারাগুলোর পরিচর্যা করছেন। তিনি জানান, এক হাজার মরিচের চারা বিক্রি হয় ৮০০টাকায়। কপির চারা প্রতি হাজার ৮০০ থেকে ৯০০টাকা, বেগুন ৪০০টাকা ও টমেটো এক হাজার টাকা হাজার বিক্রি করা হয়।
 
চারা কিনতে আসা ধুনট উপজেলার বেড়েরবাড়ি গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম জানান, এক বিঘা জমিতে আগাম জাতের মরিচ ও বেগুনের আবাদ করেছি। এখানকার চারাগুরোর গুনগতমান ভালো। ভালো ফলন হলে লাভও ভালো হবে।
 
বগুড়া কৃষি সম্প্রাসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বগুড়া জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকে শাজাহানপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে বেড তৈরির মাধ্যমে চাষিরা চারা উৎপাদন করেন। এখান থেকে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, নাটোর, রংপুর, নওগাঁ জেলাসহ দেশের ৪০টি জেলার কৃষকরা চারা নিয়ে যান। রবি মৌসুমে সাড়ে দশ কোটি টাকার চারা বিক্রি হয়ে থাকে এই অঞ্চল থেকে। এক বিঘা জমিতে চারা উৎপাদনে খরচ হয় ২ লাখ টাকা। আর এই চারা বিক্রি করা হয় ৪ লাখ টাকায়। আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে চাষীদের লাভও ভালো হয়।
বগুড়া কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মুহাঃ মশিদুল হক জানান, বগুড়া কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর থেকে শাজাহানপুর উপজেলার শাহ নগর এলাকাটি চারা নগর হিসেবে খ্যাত। এই এলাকায় প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে যেসব কৃষক আগাম জাতের চারা উৎপাদন করছেন তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আগামীতে আধুনিক পদ্ধতিতে এসব চারা যেন উৎপাদন করতে পারে সে বিষয়ে কৃষি বিভাগ থেকে কাজ করা হবে। ওই এলাকার কৃষকরা চারা উৎপাদনের মাধ্যমে বগুড়াকে সারাদেশের সাথে পরিচয় করে দিচ্ছেন। প্রয়োজন হলে কৃষি বিভাগ থেকে তাদেরকে প্রনোদনা দিয়ে চারা উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখা হবে।

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর