১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৮:১৭
বিএফআরআই'র গবেষণা

বাগদা চিংড়ির উৎপাদন বাড়ায় কাঁটা শ্যাওলা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

বাগদা চিংড়ির উৎপাদন বাড়ায় কাঁটা শ্যাওলা

ফাইল ছবি

কাঁটা শ্যাওলা। এক ধরনের জলজ উদ্ভিদ। অ্যাকুরিয়ামে সৌন্দর্যবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এটি বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড এবং আফ্রিকার কিছু দেশে পাওয়া যায়। কাঁটা শ্যাওলা অনেক দেশে ‘গাপ্পি গ্রাস’ হিসেবেও পরিচিত। এটি নাজাস গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রজাতি। তবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে চিংড়িচাষিদের কাছে এ জলজ উদ্ভিদটি ‘লক্ষ্মী শ্যাওলা’ নামেও পরিচিত। কারণ চাষিদের ধারণা কাঁটা শ্যাওলা চিংড়ির ঘেরে থাকলে বাগদা চিংড়ির উৎপাদন ভালো হয়। 

আর এমন ধারণার প্রমাণ মিলেছে বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে। সেই সঙ্গে চিংড়ির ঘেরে কী পরিমাণ কাঁটা শ্যাওলা থাকলে চিংড়ির উৎপাদন ভালো হবে তা নিয়েও করা হয়েছে গবেষণা। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করে, কাঁটা শ্যাওলা চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে যেমন বাড়িয়ে তোলে তেমনি ক্ষতিকর রোগজীবাণু থেকে সুরক্ষাও দেয়। গবেষক দলে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. তানভিরুল হক, মো. রাকিবুল ইসলাম, মো. সোয়েবুল ইসলাম ও মো. তৌহিদুল ইসলাম।

গবেষকরা জানান, কাঁটা শ্যাওলায় ফ্লাভোনয়েড, ফেনল, পলিফেনল, অলিক অ্যাসিড, পালমিটিক অ্যাসিড, লরিক অ্যাসিড ইত্যাদি বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান আছে। ফ্লাভোনয়েডের মধ্যে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টি-ভাইরাল গুণাবলি থাকায় ঘেরে চিংড়ির রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে এবং ক্ষতিকর রোগজীবাণু থেকে চিংড়িকে সুরক্ষা করে। একইভাবে, ফেনল, অলিক অ্যাসিড, পালমিটিক অ্যাসিড এবং লরিক অ্যাসিড শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃত এবং প্রতিটি উপাদানেই অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-এলার্জিক ও অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ঘেরের শতকরা ২০ ভাগ এলাকায় কাঁটা শ্যাওলা থাকলে ঘেরের ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ ভালো থাকে এবং চিংড়ির ভালো ফলন পাওয়া যায়। এর বেশি পরিমাণে থাকলে পানির পিএইচ বেড়ে যায় এবং তখন শ্যাওলা ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে পড়ে।  শতকরা ২০ ভাগ কাঁটা শ্যাওলার ঘেরে ৯০ দিনের চাষে চিংড়ির গড় ওজন ৩১ গ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে, যেখানে শ্যাওলাবিহীন ঘেরে ওজন ছিল মাত্র ১৭ গ্রাম এবং শতকরা ৪০ ভাগ কাঁটা শ্যাওলার ঘেরে ছিল ২৬ গ্রাম।

বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, শ্যাওলাযুক্ত (২০ শতাংশ) ঘেরে ভাইব্রিড নামক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সবচেয়ে কম পাওয়া গেছে। তাছাড়া, কাঁটা শ্যাওলা সমন্বিত খাদ্য ব্যবহারের ফলে মারাত্মক ভাইরাস রোগ ‘হোয়াইট স্পট সিনড্রোম ভাইরাস’ থেকে বাগদা চিংড়ি অধিক পরিমাণে সুরক্ষিত হয়।


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর