২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ২০:০৯

বরিশালে কৃষি জমি বাড়ছে, বাড়ছে খাদ্য উৎপাদনও

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালে কৃষি জমি বাড়ছে, বাড়ছে খাদ্য উৎপাদনও

নগরায়ন ও নদী ভাঙনে আবাদী জমি কমলেও নদীতে পলি পড়ে চর জেগে বরিশালে কৃষি জমি বাড়ছে। গত আট বছরে বরিশাল বিভাগে আবাদি জমি ৩ হাজার ৩২৩ হেক্টর বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে খাদ্য উৎপাদনও। এখন আগের চেয়ে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৯৮৮ টন খাদ্য উদ্বৃত থাকছে। উচ্চ ফলনশীলজাত ফসল এবং কৃষি জমি বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে খাদ্য উৎপাদন। বন্যায় বয়ে আনা পলি জমে ফসলি জমি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

উপকূলীয় বরিশাল বিভাগ প্রকৃতিগতভাবে নদী বেষ্টিত। নদী রক্ষা কমিশনের তথ্যানুযায়ী বরিশাল বিভাগে ছোট-বড় নদীর সংখ্যা ৯৯টি। খাল আছে অসংখ্য। বেশিরভাগ নদী বছরের বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে বর্ষাকালে ভাঙনের কবলে পড়ে। এতে ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নগরায়নের কারণেও ফসলি জমি কমছে। নতুন নতুন ঘর বাড়ি, শিল্প, কলকারখানা হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই কমছে ফসলি জমি। কি পরিমাণ ফসলি জমি কমেছে তার কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই সরকারি কোন দপ্তরে। 

তবে আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছে, বরিশাল বিভাগে গত আট বছরে আবাদি জমি ৩ হাজার ৩২৩ হেক্টর বেড়েছে। এর মধ্যে পিরোজপুর ও বরগুনা জেলায় আবাদী জমির পরিমাণ বেড়েছে। কমেছে বরিশাল, ঝালকাঠি ও পটুয়াখালী জেলায়। ভোলা জেলায় কৃষি জমি অক্ষুন্ন আছে। অন্যদিকে খাদ্য উৎপাদন ও উদ্বৃত খাদ্যের পরিমাণ পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা ও ভোলা জেলায় বেড়েছে। কমেছে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলায়। 

তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে বরিশাল বিভাগে আবাদি জমি ছিল ৮ লাখ ২১ হাজার ৫৪৮ হেক্টর। তখন সময় খাদ্য উদ্বৃত ছিল ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৮২৫ টন। ২০২১-২২ অর্থ আবাদি জমি বেড়ে দাড়িয়েছে ৮ লাখ ২৪ হাজার ৮৭১ হেক্টর। ওই বছর খাদ্য উদ্বৃত ছিল ১০ লাখ ১৬ হাজার ৮১৩ টন। কৃষিতে নতুন নতুন জাত ও প্রযুক্ত উদ্ভাবন এবং উচ্চ ফলনশীল জাত আবাদের কারণে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শওকত ওসমান। 

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ওয়েবসাইটে হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশে নদীর সংখ্যা ৯০৭টি। কিছু নদী আছে যেগুলো ভারত থেকে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বঙ্গোপসাগর নেমেছে। বন্যার সময় এসব নদীতে প্রচুর পলি জমে। পলি জমতে জমতে এক সময় চরের সৃষ্টি হয়। জেগে ওঠা চরে আবাদ হয় ফসল। 

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিনের মতে, প্রাকৃতিকভাবে প্রতি বছর একদিকে নদী ভাঙন হচ্ছে। অন্যদিকে কোথাও না কোথাও চরের সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে নতুন চর জেগে ওঠায় ফসলি জমির পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়টি স্বাভাবিক বলে তিনি জানান। 

নদী ভাঙনে কি পরিমাণ জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে-তার কোনো তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তরে। তবে নগরায়ন ও শিল্পায়নের কারণে যাতে কৃষি জমির ক্ষতি যাতে না হয় সেদিকে গুরুত্ব দেয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম।

নদী ভাঙনের ক্ষতি এড়াতে পানি উন্নয়ন বোর্ড সচেষ্ট রয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল সদর আসনের এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক। তিনি বলেন, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে জানমাল বাঁচাতে উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ৮৯টি বাঁধ রয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৪২৬ কিলোমিটার। 

নানা কারণে খাদ্য সংকটে বিশ্ববাসী। এই অবস্থায় বরিশাল অঞ্চলের আবাদী জমির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং খাদ্যের উৎপাদন বেড়ে যাওয়া ইতিবাচক বলে মনে করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় বিশ্বাস। এই ধারা অব্যাহত থাকলে পারলে স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে বলে মনে করেন তিনি। 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

সর্বশেষ খবর