৬ অক্টোবর, ২০২৩ ১৪:৩৮

কলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের

দিনাজপুর প্রতিনিধি

কলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের

কলা চাষের উপযোগী জলমুক্ত উঁচুজমি, ভালো ফলন, চাষে কম পরিশ্রম আর ভালো দাম পাওয়ায় গত কয়েক বছরে দিনাজপুরের কৃষকদের কলা চাষে আগ্রহ বেড়েছে। ফলন বেশী হওয়ায় উত্তরবঙ্গের বৃহৎ হাট বসে দিনাজপুরের ‘দশ মাইল কলার হাট’। দিনাজপুর অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে এখানকার কলা সরবরাহ হয়ে থাকে। কলার মৌসুমে প্রতিদিন এখানে প্রায় কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। এখানে নানা সমস্যার পরেও সরকারের রাজস্ব আদায়ও ভালো। তবে অন্য জেলার কলা ব্যবসায়ীদের এখানে থাকার জন্য আবাসিক সুবিধা, শেড এবং টয়লেটের ব্যবস্থা করা হলে আরও বাণিজ্যের পরিমান বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।  

দিনাজপুরের দশমাইল কলার হাটে দেখা যায় প্রতিদিন সকাল ৯টায় ব্যস্ত সময় পার করছে কলা চাষী, ব্যবসায়ী ও পাইকাররা। এসময় বাজার জুড়ে সারি সারি কলার কাঁদি সাজানো থাকে। অন্যদিকে ট্রাকে কলা উঠানোর দৃশ্যও দেখা যায়। সমাগমে মুখর থাকে কলা চাষী, ব্যবসায়ী-পাইকারদের।

জেলার সবকটি উপজেলায় কলা চাষ করা হয়। তবে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০শতাংশ কলা চাষ হয় জেলার সদর, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর, কাহারোল ও বিরল উপজেলায়। দশ মাইল কলার হাটে বীরগঞ্জ, পীরগঞ্জ, খানসামা, সেতাবগঞ্জ, বিরল ও সৈয়দপুর থেকে বিক্রির জন্য কলা চাষীরা কলা নিয়ে আসেন। শ্রাবন মাসে শুরু হয়ে কার্তিক মাসের ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত কলা বিক্রি চলে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্যান, পিকআপ ও নসিমনে করে এ হাটে বিক্রির জন্য কলা আনেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। ভোর হতে কলার হাটে কেনা বেচা শুরু হয়ে চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত। কলা ক্রয় শেষে ব্যবসায়ীরা ট্রাক যোগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কলা বিক্রয়ের জন্য নিয়ে যায়।

দশমাইল হাটে দেখা যায়, মেহেরসাগর, মালভোগ ও চিনি চাম্পা কলার। তবে মেহেরসাগর কলা বেশী। জেলায় উৎপাদিত মেহেরসাগর কলার খ্যাতিও দেশজুড়ে। পাশাপাশি সবরি, সুন্দরী (মালভোগ), চিনি চাম্পা কলার চাষও হয় এ এলাকায়। কলা চাষের উপযোগী উঁচু জমি থাকায় এবং আবাদে খরচ কম ও ভালো দাম পাওয়ার কারণে কলা চাষে আগ্রহী হচ্ছের স্থানীয় কৃষকরা। কলা চাষে পর্যাপ্ত রোদ ও আলো বাতাসের প্রয়োজন হয়। এবারের আবহাওয়া কলার জন্য বেশ উপযোগী হওয়ায় আবাদও ভালো হয়েছে বলে জানায় চাষীরা।  

কাহারোলের সুকুমার রায় বলেন, গত বছর দাম কম ছিল। গত বছর যে কাঁদি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এবার সেই কলা ৪৫০-৫২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

বীরগঞ্জ উপজেলার কলা চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, এক বিঘায় ৭০০ পর্যন্ত গাছ লাগানো যায়। রোপণ থেকে ফসল উত্তোলন পর্যন্ত সার-কীটনাশক, পরিচর্যা বাবদ প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি কাঁদি কলার দাম ৪০০ টাকা হলেও ১ লাখ টাকার ওপরে লাভ থাকে।

দশমাইল হাটে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বলেন, কলা চাষীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল হওয়ায় অনেক সময় চাষীদের অগ্রিম টাকাও দেয়া হয়। বর্তমানে শ্রমিকের মজুরি থেকে ট্রাক ভাড়া সব কিছুর দাম বাড়ায় লাভ কমেছে।

দশমাইল কলার হাটের মিজানুর রহমান জানান, মৌসুমে প্রায় প্রতিদিন ৭০-৮০লাখ টাকার কলা কেনাবেচা হয় এই হাটে। প্রতিদিন গড়ে ১৬-২০টি ট্রাক লোড হয়। একটি বড় ট্রাকে সর্বনিম্ন ৭০০ কাঁদি কলা ধরে। ছোট ট্রাকে ৪৫০ কাঁদি কলা ধরে। মৌসুমে এই হাটে লোড আনলোডের কাজ করেন প্রায় ১০০ শ্রমিক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, কলা বর্ষজীবী উদ্ভিদ। কলা চাষে খরচ কম, ঝুঁকি ও রোগবালাই কম থাকায় দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে কলা চাষে। কলার ক্ষেতে সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য শাকসবজির চাষ করেও লাভবান হচ্ছেন কৃষক। কলা চাষে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। গত অর্থবছরে খরিপ-১ ও রবি মৌসুমে জেলায় কলার আবাদ হয়েছে ১ হাজার ১৪৬ হেক্টর জমিতে। এবার ৩৪ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ বেশি হয়েছে।


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর