২৫ অক্টোবর, ২০২৩ ২১:৫৩

বগুড়ায় বেশি লাভের আশায় আগাম আলু চাষে মাঠে নেমেছে চাষিরা

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় বেশি লাভের আশায় আগাম 
আলু চাষে মাঠে নেমেছে চাষিরা

বেশি লাভের আশা নিয়ে বগুড়া অঞ্চলের চাষিরা আগাম আলু চাষে মাঠে নেমেছেন। বাজারে আলুর দাম বেশি থাকায় আগ্রহী আলু চাষিরা জমি তৈরি করে বীজ বপন করেছেন। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, জেলায় প্রায় দুই শতাধিক হেক্টর জমিতে আগামজাতের আলু চাষ শুরু হয়েছে। আর রবি মৌসুমে জেলায় আলু চাষ হবে ৫৫ হাজার হেক্টের জমিতে। ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ মেট্রিক টন।

জানা যায়, বগুড়ার মাঠে মাঠে ধান কাটার প্রস্তুতি চলছে। কোথাও আবার ধান কাটা শুরু হয়েছে। আমন ধান কাটার সময় না হলেও আগামজাতের ধান কেটে সে জমিতে আলু চাষের জন্য জমি তৈরীর কাজে লেগে পড়েছেন চাষিরা। মাঠে মাঠে আলু চাষিরা জমি তৈরীর পর বীজ রোপণ শুরু করেছেন। কৃষি অফিস বলছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দ্বিগুণ ফলন পাবে চাষিরা। আলু উৎপাদনে সারা দেশের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ জেলা বগুড়া। গত মৌসুমে বগুড়ায় ৫৩ হাজার ২১৫ হেক্টর জমি থেকে ১২ লাখ ২৪ হাজার টন আলু উৎপাদন হয়েছে। পাকড়ি, এস্টারিক্স, কারেজ, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, গ্র্যানোলাসহ ৩০ জাতের আলু চাষ হয় বগুড়ায়। প্রতি বিঘায় প্রকারভেদে সর্বোচ্চ ১২০ মণ পর্যন্ত আলু পাওয়া যায়। জেলার চাহিদা ২ লাখ টন, এই চাহিদা মিটিয়ে বাকি ১০ থেকে ১১ লাখ টন আলু চলে যায় রাজধানীসহ সারা দেশে। আলু উৎপাদনের ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত জেলা ধরা হয় বগুড়াকে। আলু উৎপাদনের পর সারাবছর পর্যায়ক্রমে বিক্রির জন্য ৩৭টি হিমাগার গড়ে উঠেছে। চলতি বছরের অক্টোবরে আলু চাষের মৌসুমের শুরুতে দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্রেতারা বিপাকে পড়ে যান। আলুর দাম বৃদ্ধির কারণে অনেক কৃষকই বেশি দাম পাওয়ার আশায় আগামজাতের আলু চাষ শুরু করেছেন। নতুন এই আলু বাজারে আসতে শুরু করলে দাম আবার কমে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। নতুন আলু বাজারে উঠলে হিমাগারের পুরাতন আলুর কদর থাকেনা। তাই অধিক লোকসান ঠেকাতে হিমাগারের আলু তাড়াতাড়ি বিক্রি করে দেয়।

বগুড়া সদর উপজেলার শাখারিয়া ইউনিনের আগামজাতের আলু চাষিরা জমি তৈরি করে বীজ রোপণ করছেন। মাঠে মাঠ আলু চাষিরা চাষ দিয়ে জমি তৈরী করার পর বেড বেঁধে নিচ্ছে। কোথাও কোথাও আলু চাষিরা বীজ রোপণ করে বেড তৈরি করে দিচ্ছে।
বগুড়ার আগামজাতের আলু চাষিরা বলছেন, আগামজাতের আলু চাষ করে ভালো দাম পাওয়া যায় বলে আগাম জাতের আলু চাষ শুরু করা হয়েছে। আলু চাষের আবহাওয়া এখন পর্যন্ত ভালো আছে। আমন ধান কাটার পর পুরোপুরি ভাবে আলু চাষ শুরু হবে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারি কৃষি অফিসার ফরিদ হোসেন জানান, রবি মৌসুম শুরু না হলেও আলু চাষ শুরু হয়েছে। গত ১৬ অক্টোবর থেকে বগুড়ায় আগামজাতের আলু চাষ শুরু করেছেন চাষিরা।

জেলার শিবগঞ্জ, বগুড়া সদর, দুপচাঁচিয়া উপজেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। আরো কিছু আগামজাতের আলু চাষ হবে। আগামজাতের আলু চাষ হবে প্রায় ১হাজার হেক্টর জমিতে। আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে বগুড়ায় রবি মৌসুম শুরু হবে। এই মৌসুমে আলু চাষ হবে ৫৫ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। আর আলু উৎপাদন হবে প্রায় ১৩ লাখ ২০ হাজার ৪৭৫ মেট্রিক টন। বৃষ্টিপাত না হলে আর আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে শেষ পর্যন্ত ফলন বেড়ে যেতে পারে। গত বছর প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন ধরা হলেও সেখানে শেষ পর্যন্ত আলু উৎপাদন হয় ১৩ লাখ মেট্রিক টন। আশা করা হচ্ছে চলতি বছরও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। বগুড়ায় প্রতিবছরই আলুর উৎপাদন ভালো হয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত চাষি পর্যায়ে যে উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জিত হবে। 

বগুড়ার শিকগঞ্জ উপজেলার আলু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে সকল প্রকার সার ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে। বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ বেড়ে গড়ে তা ১০ থেকে ১৩ হাজারে দাঁড়াবে। আগাম বাদ দিয়ে পুর্ণ মেয়াদে ৬০ থেকে ৭০ দিনে এই আলু তুললে বিঘা প্রতি সর্ব্বোচ ৮০ থেকে ৯০ মন আলু পাওয়া যাবে। আর ফলন ভালো হলে শতমন পাওয়া যেতে পারে। 

বিডি প্রতিদিন/এএ

সর্বশেষ খবর