১৮ নভেম্বর, ২০২৩ ১০:০২

বিজয়পুরে দইপাত্র হয়ে হাসছে মৃৎশিল্প

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

বিজয়পুরে দইপাত্র হয়ে হাসছে মৃৎশিল্প

কুমিল্লার বিজয়পুরের মৃৎশিল্প। ডুবতে বসা শিল্পটি দইয়ের পাতিলের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। প্রতি মাসে বিক্রি হচ্ছে ২০ লাখ টাকার বেশি পাতিল। যা বছরে দাঁড়ায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এদিকে শিল্পীদের দাবি, গ্যাস সংকটে পর্যাপ্ত উৎপাদন করতে পারছেন না। গ্যাস দিয়ে পোড়ানো পণ্যের মান ভালো হয়, খরচ ও নষ্ট কম হয়।

স্থানীয় সূত্রমতে, কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য শত বছরের। বিজয়পুর এলাকার সাতটি গ্রামের ৭ শতাধিক পাল সম্প্রদায় পরিবারের মানুষ মাটির হাঁড়ি-পাতিল তৈরি করতেন। গ্রামগুলো হচ্ছে গাংকুল, তেগুরিয়াপাড়া, দক্ষিণ বিজয়পুর, বারপাড়া, দুর্গাপুর, উত্তর বিজয়পুর ও নোয়াপাড়া। ষাটের দশকে অ্যালুমিনিয়াম আসায় মাটির পাতিলের চাহিদা কমে যায়। সমবায় আন্দোলনের পথিকৃৎ ড. আখতার হামিদ খান ১৯৬১ সালের ২৭ এপ্রিল ১৫ জন যুবককে নিয়ে গড়ে তোলেন বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি। এ সমিতির মাধ্যমে মৃৎশিল্পে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে। হাঁড়ি-পাতিল, বল-বাটি, মগ-জগ থেকে বের হয়ে তারা নান্দনিক সব শো-পিস তৈরি শুরু করেন। এগুলোর চাহিদা থাকলেও বিক্রি হয় ধীরগতিতে। গ্যাস সংকটে সামগ্রীর মান ভালো না হওয়ায় বিদেশিরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এরপর কারিগররা নেমে পড়েন দইয়ের পাতিল, দইয়ের কাপ ও চায়ের ভাঁড় তৈরিতে। বর্তমানে এগুলোর ভালো চাহিদা রয়েছে। বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতির পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রামে আরও ১২টি কারখানা গড়ে উঠেছে। তাদের অধিকাংশ দইয়ের পাতিল তৈরি করছেন। কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে ৫ শতাধিক মৃৎশিল্পী ও শ্রমিকের। কুমিল্লার মাতৃভান্ডার, ভগবতী পেড়া ভান্ডারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পাতিল ব্যবহার করছে।

বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ৫০ জনের মতো কর্মচারী দইয়ের ১ কেজি, আধা কেজি, ২৫০ গ্রাম, ১০০ গ্রামের পাতিল ও কাপ তৈরি করছেন। কেউ কাঁচা মাটি ছাঁচে ফেলছেন। কেউ এগুলো পুড়ছেন। কেউবা নকশা করছেন। ছোট কাপগুলো যাবে মালয়েশিয়া। এখানে মাসে ৪০ হাজার পাতিল তৈরি হচ্ছে। সব কারখানা মিলিয়ে মোট লাখের বেশি পাতিল তৈরি হচ্ছে।

কারখানার প্রবীণ শিল্পী নিমাই চন্দ্র পাল বলেন, তার বাড়ি পাশের গাংকুল গ্রামে। তিনি ৪০ বছর ধরে কাজ করেন। গ্যাস না থাকায় সমস্যা হচ্ছে, বিশেষ করে বিদেশে পণ্যের চাহিদা কমেছে।

রিংকু রানী পাল বলেন, তিনি ১০ বছর ধরে কাজ করেন। এখানে পুরুষের সঙ্গে ৩০ জনের মতো নারীও কাজ করেন। গ্যাসের চাপ বাড়লে তাদের উৎপাদন বাড়বে। দ্বিগুণ শ্রমিকের কাজের সুযোগ হবে।

বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি তাপস কুমার পাল বলেন, দইয়ের পাতিলের ভালো চাহিদা রয়েছে। দইয়ের পাতিলের হাত ধরে এই শিল্প ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে গ্যাস সংকটে পর্যাপ্ত উৎপাদন করতে পারছেন না।

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর