২৫ নভেম্বর, ২০২৩ ১৭:৩৩

আমনে আশার পথ দেখাচ্ছে ব্রি ধান-১০৩

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

আমনে আশার পথ দেখাচ্ছে ব্রি ধান-১০৩

আমন ধানে নতুন আলো ছড়াচ্ছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ধানের নতুন জাত ব্রি ধান-১০৩। স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন এ ধানের জাতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম। এ জাতটি বিদ্যমান জাতের তুলনায় বিঘাপ্রতি ১ থেকে ২ মণ বেশি  ফলন দিয়েছে। খড়ের উৎপাদনও বেশ ভাল। 

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার  ড.মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।  

ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড ধান নিয়ে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও নড়াইল জেলায় কাজ করছি। চলতি আমন মৌসুমে ৩ জেলায় ব্রি ধান-১০৩ এর প্রদর্শনী প্লট করা হয়। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া গ্রামের কৃষক মোঃ আরজ আলী খন্দকারের জমিতে উৎপাদিত ধান কেটে পরিমাপ করে দেখা গেছে  প্রতি বিঘায় (৩৩ শতাংশ) এ ধান ২২ মণ ফলন দিয়েছে। বাগেরহাট ও নড়াইল জেলায়  এ ধান আশানুরূপ ফলেছে। তাই আমন মৌসুমে দেশের ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকের আর্থসামাজিক অবস্থার বিপ্লব ঘটাবে ব্রি ধান-১০৩।

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মোঃ আব্দুল লতিফ বলেন, ব্রি ধান-১০৩ এ আধুনিক উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। ধানের দানা লম্বা ও চিকন। ১ হাজার টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৩ দশমিক ৭ গ্রাম। এ ধানের প্রোটিন এবং অ্যামাইলোজের পরিমাণ যথাক্রমে ৮.৩ শতাংশ এবং ২৪ শতাংশ। প্রতি হেক্টরে এ জাতটির গড় ফলন ৬.২ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে প্রতি হেক্টরে ৭.৯৮ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের গড় জীবনকাল ১৩০ দিন (১২৮-১৩৩ দিন)। গত বছর এ ধানের জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। এ বছর কৃষকের মাঠে  আমন সৌসুমে এ ধান সবচেয়ে বেশি ফলন দিয়েছে। এ ধান চাষাবাদ করে কৃষক ১ ফসলী জমিকে ২ ফসলী ও ২ ফসলী জমিকে ৩ ফসলী জমিতে পরিণত করতে পারেন। ফসলের নীবিড়তা বৃদ্ধি করে কৃষক লাভবান হবেন।

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সাইন্টিফিক অফিসার সৃজন চন্দ্র দাস জানান, এ জাতটি রোপা আমন মৌসুমে বৃষ্টি নির্ভর চাষাবাদ উপযোগী। এ ধানের চাষাবাদ অন্যান্য উফশী রোপা আমন ধানের মতোই। বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১৫ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত। সারের মাত্রা অন্যান্য উফশী জাতের মতোই। এ ধানের জাতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে। তাই ধান উৎপাদনে খরচ সাশ্রয় হয়। আমরা আগামী আমন মৌসুমে কৃষককে দিয়ে এ জাতের ধান  বেশি বেশি চাষাবাদ করাব। সেভাবেই বীজ উৎপাদন করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ  সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্বতী বৈরাগী বলেন, আমার ব্লকে ব্রি ধান-১০৩ এর ২টি প্রদর্শনী প্লট করে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। প্রতিটি প্লটেই ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক লাভজনক এ ধান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ব্রি বীজ দিলে আগামী বছর আমরা এ ধানের চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারব। এতে দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া গ্রামের কৃষক মোঃ আরজ আলী খন্দকার বলেন, স্থানীয় আমনে বিঘায় ৪-৫ মণ ফলন পেতাম। সময় লাগত ১৮০ দিন। পরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমানের উফশী সহ অন্যান্য জাত করেছি। সেখানে বিঘায় ১৮-২০ মণ ফলন পেয়েছিলাম । কিন্তু এ বছর ব্রি ধান-১০৩ করে বিঘায় ২২ মণ ধান পেয়েছি। সময় লেগেছে ১৩০ দিন। এ ধানের পোকার আক্রমণ হয়নি। সেচ খরচ লাগেনি। ফলনও ২ মণ বেশি পেয়েছি। কম খরচে বেশি ধান পেয়ে লাভবান হয়েছি। এ ধান কেটে জমিতে বছরে ৩ থেকে ৪ টি ফসল করতে পারছি। আমি আগামীতে এ ধান করব। বীজ পেলে আমার প্রতিবেশীরাও এ ধান চাষাবাদ করবে বলে জানিয়েছেন।


বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর